Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ০৫

 

এমন শয়তান ছেলে আমি আমার বাপের জন্মে দেখিনি।
- সেটা কিভাবে দেখবি তুই কি তোর বাবার আগে জন্ম নিয়েছিস? এখন চুপচাপ মার এই ফাজিল টাকে।
এই এই তোমরা আমাকে মারছ কেন? আমি তো কিছু করিনি।
মিষ্টি বলল আমাদের আজেবাজে জিনিস খাওয়ায় এখন বলতেছে আমি কিছুই করিনি অসভ্য লোক একটা।
আরে বাবা মারছ কেন আমাকে? চায়ে তো কিছু মেশানো ছিল না আমি মিথ্যা কথা বলেছি প্লিজ মারা বন্ধ করো। এই লাগছে তো
- ঝর্ণা বলল সত্যিই চায়ের মধ্যে কিছু ছিল না ?
- হুম, তোমরা মিছেমিছি আমার মত একটা ভদ্র ছেলে কে মারলে। চায়ে কোন কিছুই মেশানো ছিল না। তবে সত্যি কথা আমি মূত্র মিশাতে চেয়েছিলাম। তবে পরে মনে হলো এটা একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে খেলা করা অভ্রনীল চৌধুরী কাজ না। আমি হয়তো দুষ্টু হতে পারি কিন্তু কাউকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এতটা নিচ আমি নামতে পারি না। তোমরা আমার কফিতে থুতু মিশিয়ে কাজটা ঠিক করনি।
- সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি বলল বারে আপনি যে আমার মুখের সামনে দূষিত বায়ু ত্যাগ করলেন সেটার বেলায় কি?
- আমি মুচকি হেসে বললাম তোমার বোন ঝর্না তো কানা। তা না হলে আমি যে পকেট থেকে সেন্টের বোতল বের করেছিলাম সেটা দেখতে পেত।
- অমন বিশ্রী গন্ধ সেন্টের হয় নাকি?
- হ্যাঁ হয় তোমাদের লাগলে আমাকে বল আমি কিনে এনে দিবো।
- এমন সেন্ট কারা ইউজ করে মিষ্টি বলল
- তোমাদের মত মেয়েরা
- আপনি এক নম্বরের মিথ্যুক অমন বাজে গন্ধের সেন্ট কোন পাগল ও ইউজ করবে না।
- আমি একটু গম্ভীর কন্ঠে বললাম শোনো তোমাদেরকে মিথ্যা বলে আমার কোনো লাভ নেই তোমাদের বিশ্বাস করা হলে করো না হলে গ্লাসের জ্বলে ডুবে মর। আমি যদি পাদ মরতাম তাহলে পাদের শব্দে এই বাড়ি কেপে উঠত। আমার চাচাতো ভাই জাহিন বলে পাদ দুই প্রকার একটা ঢুস পাদ আরেকটা হলো ঠুস পাদ। ঢুস পাদ মানে যে পাদের অনেক আওয়াজ হয় কিন্তু কোন গন্ধ হয়না। যেটা আমি মারি । আর ঠুস পাদ হলো আওয়াজ কম কিন্তু গন্ধ বেশি।
- ছিঃ আপনি চুপ থাকেন তো আপনার থেকে কেউ পাদের ডেফিনেশন শুনতে চাইনি। অসভ্য লোক একটা মিষ্টি বলল।
- তোমরা আমার মত অসহায় একটা ছেলেকে মারলে। আমি অভিশাপ দিলাম তোমাদের কারো বিয়ে হবে না। আর যদি বিয়ে হয় তাহলে তোমাদের স্বামীদের স্টার জলসার সিরিয়ালের মতো যেন ২-৩ টা করে বউ থাকে বলে আমি দৌড়ে ওদের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
মা আমাকে দৌড়ে ওদের রুম থেকে বের হতে দেখে তার কাছে ডাকলেন।
মা আমার হাত শক্ত করে ধরে তার রুমে নিয়ে এল। মা আমাকে বেডে বসিয়ে আমার পাশে বসে বলল। নীল তোর কি মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশি ফাইজলামি করতেছিস? মানছি বিয়ের বাড়িতে একটু আধটু ফাজলামি না করলে হয়না কিন্তু তাই বলে তুই সব সময় ওই মেয়ে তিনটা পিছনে পড়ে থাকবি? এটা তো ঠিক না। তুই হুটহাট তিনটা মেয়ের রুমে ঢুকে পড়িস এটা কেমন কথা? তোর বাসা দেখে তুইতো যখন ইচ্ছা তখন ঢুকতে পারিস না ওদের রুমে। আর ওদের তো একটা প্রাইভেসি আছে তাই না। অসভ্যের মত তুইতো যখন ইচ্ছা তখন ওদের রুমে ঢুকতে পারিস না? এসব শিক্ষা তো আমি তোকে দেইনি?
- সরি মা
- শোন এখনো সময় আছে ভালো হ। মেয়েদের পেছনে ঘুরঘুর করা ছেড়ে দে। একটা কথা সবসময় মনে রাখবি তুই যেমন হবি তোর জীবনসঙ্গিনী ও ঠিক তেমনি হবে। একবার ভাব তুই যে রকম তোর বউ টাও যদি ঐরকম হয় মানে 100 একটা ছেলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় তখন তোর কেমন লাগবে? তাই এখনো সময় আছে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে ভালো হয়ে যা।
আল্লাহ তোকে সুন্দর চেহারা দিয়েছে বলে যে 100 টা মেয়েকে তোর আগে পিছে ঘুরাতে হবে এমনটা কিন্তু না।
- আমি কি মেয়েদের পিছন পিছন ঘুরি নাকি মা ? ওরা যদি আমার পিছন পিছন ঘুরে তাহলে আমার কি দোষ? আমি কি ওদের আমার পিছন পিছন ঘুরতে বলেছি?
- মা আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বলল তুমি মেয়ের সামনে গিয়ে মুচকি মুচকি হাসবা চোখ টিপে মারবা , তাহলে মেয়েরা তোমার পিছু পিছু ঘুরবে না তো কি আমার পিছু পিছু ঘুরবে? ফাজিল ছেলে
- আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম কি করবো মা বলো মেয়েদের দেখলেই তো আমার চোখ কেন জানি টিপস টিপস করে।
- অসভ্য ছেলে একটা। এসব লুচ্চামি ছেড়েদে ভালো হয়ে যা।
- মা আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি বিয়ের পর ভালো হয়ে যাব। কিন্তু বিয়ের আগে অন্তত তুমি আর ভালো হওয়ার কথা আমাকে বলবা না। আর আমি যদি দুষ্টুমি ছেড়ে দিই তাহলে দেখবে তোমারি ভালো লাগছে না এই জন্যই তো আমি দুষ্টুমি ছাড়ছি না।
- তাহলে আমি তোর বাবাকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করি কি বলিস?
- পাগল নাকি আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না
আমি যেন আর তোকে ওই মেয়েদের সঙ্গে ঘেষাঘেষি করতে না দেখি।
আমি আবার ওদের রুমে গেলাম। নক করতেই দরজা খুলে দিল স্বর্ণা।
আমাকে দেখেই ভুরু কুঁচকে বললো কি চাই।
- ভিতরে ঢুকতে পারি?
স্বর্ণা দরজার সামনে থেকে সরে গেল। আমি রুমে ঢুকে বেডের কাছে গিয়ে বালিশের নিচ থেকে একটা রাবারের সাপ বের করল। এই সাপটাই ফুলি রেখে গিয়েছিল তখন। রাবারের সাপটা দেখে ওরা তিনজনই অবাক হয়ে গেল। রসগোল্লার মতো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
- তোমরা আমাকে মরিচের গুঁড়া শরবত খাওয়াইছো় এরপর থুতু মিশানো কফি খাওয়াইছো। শুধু মা বলেছে ভালো হয়ে যেতে এইজন্য আর আমি তোমাদের কিছু বললাম না। তাছাড়া তোমাদের একদম উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়তাম।
- আগে প্যান্টের চেন লাগান তারপর আমাদের শিক্ষা দিয়েন বলেই মিষ্টি খিল খিল করে হেসে উঠল।
- আমি প্যান্টের চেনের দিকে তাকালাম কই সবকিছু তো ঠিকঠাকই আছে? আমাকে প্যান্টের দিকে তাকাতে দেখে মেয়ে তিনটা হেসে উঠলো। এই মেয়েগুলা ও অসভ্য
- ভালো হও ভালো হও ভালো হইতে পয়সা লাগে না বলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম
আজ আবারো ভাইয়া রুম সাজানো হয়েছে। ভাবীকেও অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ভাইয়া বাসর ঘরে ঢুকবে এমন সময় বাবা তাকে ধরে নিয়ে গেল।
- শুভ এখন থেকে তোর কিন্তু অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেল। আমি জানি গতকাল তোর বাসরের বারোটা বাজানোর জন্য তুই কষ্ট পেয়েছিস। আমিও কিন্তু কষ্ট পেয়েছি যখন জানতে পারলাম বৃষ্টির সঙ্গে তোর আগে থেকে সম্পর্ক ছিল অথচ তোরা আমাকে কিছুই জানাস নি
। আমি কি তোর সাথে অতটা ফ্রি না? আমি কি তোর বন্ধুর মতো না? নাকি তুই আমাকে কখনো বন্ধুর মতো ভাবিস নি? যদি কখনো বন্ধু ভাবতি তাহলে অন্তত একবার হলেও আমাকে বলতে পারতিস কথাগুলো।
ভাইয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল
- যাই হোক বাদ দে এখন আসল কথায় আসি। বিয়ে মানে কি জানিস? বিয়ে মানে শুধু একজন ছেলে আর একজন মেয়ে বন্ধন না, বিয়ে মানে দুটো পরিবারের বন্ধন। বিয়ে মানে দুটি মনের মিল। তোদের দুজনের মধ্যে হাজারো সমস্যা আসতে পারে কিন্তু তোদের হাল ছাড়লে চলবে না। হাজারো সমস্যা কে ফেস করে একে অন্যের হাত শক্ত করে আকড়ে ধরে তোদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
রিলেশন করার পর বিয়ে করলে যেটা হয় বিয়ের পর ভালোবাসা নাকি কমে যায়। কিন্তু তোদেরকে এটা ভুল প্রমাণিত করতে হবে। বৃষ্টি মেয়েটা খুব ভালো কখনো ওকে কষ্ট দিস না। সব সময় ওকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবি। আর একটা কথা মনে রাখবি বৃষ্টি কিন্তু আমার মেয়ে সো কখনো যদি আমার মেয়ের চোখে পানি দেখেছি তাহলে তোর খবর আছে। এখন যা বৃষ্টি অপেক্ষা করছে তোকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য বলেই বাবা হা হা করে হেসে উঠলো।
ভাইয়া বাবার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ভাইয়া তার রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় আমি তার পথ আগলে দাঁড়িয়ে তার কানে কানে বললাম ভাইয়া কোন কিছু করার পূর্বে একবার রুমটা ভালো করে দেখে নিও কেননা বলাতো যায়না কে কোথায় লুকিয়ে আছে ।
ভাইয়া আমাকে মারতে আসলে আমি দৌড়ে পালালাম।
আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কোলবালিশ জড়িয়ে ভাবছিলাম ইস আমার যদি একটা বউ থাকতো। কতই না ভালো হতো? এতক্ষণ প্রেম পুরো জমে ক্ষীর হয়ে যেত।
হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো। আবারো মিস কল মেয়েটা আসলেই ফকিন্নি। আমি কল ব্যাক করলাম।
- একটু বিরক্তি নিয়ে বললাম কি হয়েছে?
- একটু ছাদে আসতে পারবেন?
- কেন?
- একটু কথা ছিল
-কি কথা?ফোনে বল
- ছাদে আসেন প্লিজ
- না এখন ছাদে যাইতে পারবোনা শুয়ে পড়ছি এখন আর বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। কি বলার ফোনে বল তা না হলে ফোন রেখে দাও
- আপনি কি আমাদের ওপর রাগ করেছেন?
- রাগ করবো কেন?
- ওই যে আপনার কফিতে থুতু মিশেছিলাম
- না কিছু মনে করিনি। এখনই তো তোমাদের ফাজলামি করার বয়স। এখন যদি ফাজলামি না করে তাহলে কখন করবে? আচ্ছা রাখছি হ্যাঁ মাথাটা খুব ব্যাথা করতেছে।
- আর কিছু বলার আগে ফোনটা কেটে দিলাম।
- পরের দিন বৌভাত অনুষ্ঠানে মেয়ে পক্ষের লোকেরা এসেছে। মিষ্টি আজ শাড়ি পরেছে। শাড়িতে মিষ্টিকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। সব ছেলেরা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বেয়াদব মেয়ে এমনিতেই দেখতে অনেক সুন্দর তার মধ্যে আবার পার্লার থেকে সেজে আসছে। ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে হবে না যতসব ফালতু
- মিষ্টিকে দেখলাম ছেলেদের সঙ্গে খুব হেসে হেসে কথা বলছে ‌। এক মটুর সঙ্গে কথা বলতেছিল আমি ওর পাশ দিয়ে গেলাম আমাকে পাত্তাই দিল না।
- আমার ভিতর কেমন জানি জ্বলছে। মিষ্টি যে কোন ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারে এতে তো আমার সমস্যা হওয়ার কথা না। তাহলে কেন মনে হচ্ছে মিষ্টির গালে ঠাটিয়ে একটা চড় লাগিয়ে দিয়ে বলি এত কিসের ছেলেদের সঙ্গে কথা?
- বাবা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে খাবার এখানকার সবকিছু দেখাশোনা করার। আমার এই দিকে নজর কম মিষ্টির দিকে নজর বেশি যাচ্ছে। আমি আমার চোখ দুটোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি কিন্তু কেন জানি চোখ দুটো আমার কথা শুনছে না।
- হঠাৎ চোখে পড়ল সেই মটকু ছেলেটাকে। সে একটা চেয়ার টেনে বসতে যাচ্ছিল এমন সময় আমি পেছন থেকে চেয়ারটি টান দিলাম মটু ধপাস করে পড়ে গেল নিচে। সবাইতো হো হো করে হেসে উঠলো। ততক্ষণ আমি ওখান থেকে কেটে পড়েছি। শালা খুব ভাব নিচ্ছিল এখন বোঝে কেমন লাগে।
- আমি যদি ফাজিল হই তো আমার ছোট ভাই জাহিন আরো এক লেভেল এগিয়ে। সে খাওয়ার সময় ডালের বাটি উল্টে দিয়েছে ওই মটকুর গায়ে।
মটকু তো ক্ষেপে ফায়ার কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতে পারছেনা। শুধু শকুনের মত চেয়ে রইল
- মিষ্টি ভাব খুব বেড়ে গেছে। ও আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। শুধু মা বলেছে ভালো হয়ে যেতে তা না হলে এতক্ষণ দেখিয়ে দিতাম অভ্রনীল চৌধুরী কি জিনিস। আরে আমি এক চুটকি বাজালে মেয়েরা আমার পেছনে লাইন ধরে দাঁড়ায়। আর এই পুচকি মেয়েটা আমাকে টাইম দিচ্ছ না।
আব্বা আমি বিয়ে করবো। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে আমাকে দিয়ে দাও।
- কি বললি আরেকবার বল? নাক টিপলে দুধ বাড়ায় সে নাকি এখন বিয়ে করবে।
বাবা পায়ে পরিরে মেলা থেকে বউ এনে দে। বউ ছাড়া সারা রাত জেগে কাটে রে।ও বাবা পায়ে পরিরে মেলা থেকে বউ এনে দে....
বিশেষ দ্রষ্টব্য ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। পিকনিকের জন্য গল্প লেখার সময় পায়নি। গতকাল গোসল করার সময় পায়নি। বেশি ভাবতেও পারিনি যা মাথায় আসছে লিখে দিছি। পরবর্তী পর্বে আবার হাসানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code