Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ১১

ঝরনা দের বাসার সামনে গাড়ি থামতেই আমি বাবা-মাকে বললাম তোমরা যাও আমি একটু পরে আসছি। আর আগেই কাউকে যেন আমার আশার কথা জানিয়ে দিও না আবার।
মা বলল কেন বাবা তুই আবার কোথায় যাবি?
-বাবা টিটকারি মেরে বলল আরে বোঝো না ছেলে অনেকদিন পর দেশে এসেছে। তোমার ছেলে প্রথমে ঝর্না দেখবে। ঝর্নার ভালোবাসার পানিতে হাবুডুবু খাবে তারপর ঝর্নার পানি সঙ্গে নিয়ে বাসায় ঢুকবে।
- "মা" বাবার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। ভুরু কুঁচকে বললো এখানে আবার ঝর্ণা কোথায়। ঝর্না দেখার জন্য তো ঢাকার বাইরে যেতে হবে?
- আছে আছে তোমার চোখে ওটা পরবে না। ঝর্ণা টা শুধু তোমার ছেলেকে ভিজায় অন্যদের সেই ঝর্নায় ভেজ বার কোনো সুযোগ নেই। তাই তোমাদের মত সাধারন মানুষরা সেই ঝর্নাকে দেখতেও পারে না।
-মা বোকার মত বলল কি জানি বাপু তোমাদের বাবা ছেলের মধ্যে কি যে চলছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। বাসায় গিয়ে আচ্ছামতো খবরদারি করতে হবে তোমাদের দুজনের উপর।
- সে না হয় বাসায় গিয়ে করো এখন তোমার ছেলেকে একটু ঝর্না দেখতে দাও। সে এত দূর থেকে এসেছে শুধুমাত্র ঝর্ণার পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য বলেই বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
বাবারা বাসার মধ্যে চলে যেতে আমি ঝর্নাদের বাসার সামনে দাড়িয়ে ওকে ম্যাসেঞ্জারে কল দিলাম যাতে ও বুঝতে না পেরে।
ঝর্না কল রিসিভ করে বলল আপনি দেশে কবে ফিরবেন? কন্ঠে শুনে মনে হল সে আমার উপর ভীষণ রেগে আছে।
- আমি একটা দীর্ঘসাস ছেরে বললাম এখন অনেক কাজের চাপে তুমি আমার কাছে চলে আসো ।
- থাক তোর আসতে হবে না।
আমার বাবা এখানে বুড়া চাচার সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে দিক আর তুই ওখানে বসে বসে মজা নে "কুত্তা"।থাক তোর আর আসতে হবে তুই ওখানেই থাক।
আসলে, তুই তো আসতেই চাস না। আর আসবি বা কেন? ওখানে এত সুন্দর জীবন ছেড়ে কি আর বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছে করবে?
আমি বুঝতে পেরেছি তুইতো চাসনা আমাকে তোর জীবনের সাথে জড়াতে। আমাকে একেবারে নিজের করে নিতে। তুই তো আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করিস আমি যাতে তোর জীবন থেকে দূরে সরে যায়। আর তুই ওখানকার একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করে ওখানেই সেটেল হয়ে যাওয়ার ফোন্দি আটছিস । ওখানে গিয়ে সাদা গাই দেখে তোর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তোর কি এখন আর আমাকে ভালো লাগবে? তুই আমাকে একটু ভালোবাসিস না ভালবাসলে এতদিন চলে আসছি। বলেই ঝরনা কেঁদে উঠলো
- আমি হাসি চাপিয়ে বললাম এই পাগলি মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন?
- কাঁদবো না তো কি করব আপনার মত দাঁত বের করে হি হি করে হাসবো? কষ্ট তো আপনার হচ্ছে না কষ্ট হচ্ছে আমার। কবে থেকে বলছি বাসায় আমার বিয়ের কথা চলছে বাসায় আমার বিয়ের কথা চলছে। কিন্তু মশায়ের কানে যায়। শয়তান লোক একটা। সারাদিনই তো বলেন ছবি দাও ছবি দাও ভিডিও কল দাও। কতদিন হলো তোমাকে দেখি না আরো কত কি। এতই যখন দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে আসছেন না কেন? আমার বিয়ে যদি অন্য কারো সঙ্গে হয়ে যায় আমি কিন্তু সত্যি সত্যি...
আমি ঝরনা কে থামিয়ে দিয়ে বললাম একদম চুপ আর একবার ওই কথা মুখে আনবে না। এখন একটু কষ্ট করে তোমার বাসার সামনে বেরিয়ে আসো।
-কেন বাসার সামনে গিয়ে কি হবে? ঝর্না একটু খুশি হয়ে বলল আচ্ছা আপনি কি এখন আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন? আপনি কি দেশে আসছেন?
-আরে না অনেক কাজের চাপ তো যাব কিভাবে। তোমার জন্য একটা গিফট পাঠিয়েছি। নিচে নেমে দেখে এসো।
মুহূর্তেই আবার ঝর্নার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ধুর বাল আপনার কাজ কি কোনদিন শেষ হবে না?আমার আর ভালো লাগেনা। কতদিন আর ফোনে ফোনে প্রেম করবো? আমারও তো অন্যদের মতো ইচ্ছে করে আপনার হাতে হাত রেখে পায়ে সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে। আমারও তো ইচ্ছে করে রেস্টুরেন্টে বসে আপনার পকেট খালি করতে। আমারও তো ইচ্ছে করে পার্কে বসে আপনার সঙ্গে ফুচকা খাইতে। আমারও তো ইচ্ছে করে রিক্সায় আপনার পাশে বসে পুরো শহর টা ঘুরাতে।
- ওরে বাবা এত কিছু করতে ইচ্ছা করে? কিন্তু গাড়ি থাকতে তুমি রিক্সা চড়ে ঘুরবে কেন?
- ও আপনি বুঝবেন না গাড়িতে তো আর ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা যাবে না। আর রিক্সায় বসে প্রেম করার অনুভূতিটা অন্য রকম যেটা আপনার দামি গাড়িতে হবে না।
- তো ম্যাডাম আপনি প্লিজ নিচে গিয়ে আপনার গিফট টা নিয়ে আসুন না।
- আচ্ছা রাখছি
- নানা কল কেটো না আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাও।
ঝরনা গেট খুলে বেরিয়ে এলো। আমি আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম সে কাউকে দেখতে না পেয়ে আমাকে বললো কই তোমার গিফট কেউ তো নেই।
আমি আড়াল থেকে বেরিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। সে আমাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ অবাক হয়ে গেল। সে হাঁ করে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঝর্না সোনালী রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। পুরো শাড়ীটায় পাথরের কাজ করে। শাড়িটার সঙ্গে ম্যাচিং করে হাত ভর্তি চুরি পরেছে। ওকে দেখতে ভয়ঙ্কর সুন্দরী লাগছে।
- ঝর্না প্রায় এক মিনিট হলো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এরি ফাঁকে যে ওর হাত থেকে ওর ফোনটা পড়ে গিয়েছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। এক মিনিট পর সে মুখে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল আমি কি স্বপ্ন দেখছি? আচ্ছা সত্যিই কি মিস্টার অভ্রনীল চৌধুরী আমার সামনে দাড়িয়ে আছে?
- আমি মুচকি হেসে কিছু বলতে যাব তার আগেই ঝর্ণা ছুটে এসে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। এরপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল আপনি খুবই পচা । আমাকে কষ্ট দিয়ে আপনি খুব মজা পান। আমাকে আগে বললে কি হত? জানেন কিছুক্ষণের জন্য আমার হার্টবিট আটকে গিয়েছিল। আরেকটু হলে হার্ট ফেল করে মারা যেতাম
- একদম বাজে কথা বলবো না তুমি সবসময় মরার কথা বলো কেন? বেয়াদব মেয়ে এরপর যদি তোমার মুখে এই কথা শুনেছি তাহলে তোমার খবর আছে। একদম এক থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেবো।
- ও মা বিয়ে না করতেই স্বামীর মত ধমক দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন?
- তো কি তুমি যদি বিয়ে না করেই আমাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরতে পারো তাহলে আমি কেন ধমক দিতে পারব না?
- আমি জড়িয়ে ধরবো না তোকে জড়িয়ে থাকবে অন্য কেউ আছে নাকি? আমি জড়িয়ে ধরবো ইচ্ছে হলে চুমু খাব বলে আমার গালে একটা চুমু দিল।
- ঝর্না করছো কি কেউ দেখে ফেলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে? ছাড় বলছি এটা কিন্তু পাবলিক প্লেস।
- কিছু হবেনা আপনি চুপ থাকেন তো কতদিন পর ভালবাসার মানুষটাকে কাছে পেলাম। শান্তি মতো জড়িয়ে ধরতে দেবে না।
- ঝর্না দু'বছরে তুমি বড্ড বেহায়া হয়ে গেছে।
- ঝর্না মুচকি হেসে আমার চোখে চোখ রেখে বলল তাই বুঝি? একটু ভালো করে দেখুন তো আমার আর কি কি পরিবর্তন হয়েছে?
- আমি ঝর্ণার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম দু'বছর আগে ইংল্যান্ডে যাওয়ার সময় ঢেঁড়সে রেখে গিয়েছিলাম এখন দেখছি তুমি ফুলে বেগুন হয়ে গেছে।
- ঝর্না কপট রাগ দেখিয়ে বলল, আমি মোটেও ফুলে বেগুন হয়ে যায়নি। মাত্র ১১ কেজি ওজন বেড়েছে আগে ছিলাম ৩৭ কেজি এখন হয়েছি ৪৮ কেজি
- আমি অবাক হয়ে বললাম ১১ কেজি কে তুমি মাত্র বলছো?
- ঝরনা মুখ ফিরিয়ে বলল আপনার চোখে শুধু আমার মোটা হওয়া টাই ধরা পরল ।আমি যে আগের চেয়ে আরো বেশী সুন্দরী হয়ে গেছি এটা কি আপনার চোখে পড়লো না?
- পড়েছে তো কিন্তু স্পেশাল একটা মুহূর্তে বলর জন্যে রেখে দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি যখন আগেই বলে ফেললে তাই বলি তুমি দেখতে ভয়ঙ্কর সুন্দর হয়েছে আর এই শাড়িতে তোমাকে একদম ভয়ঙ্কর সুন্দর দেখাচ্ছে।
- থাক থাক হইছে এখন আর পাম দিতে হবে না। ঝরনা তার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল এই আমার ফোন কই গেল?
আমি চোখের ইশারায় মাটিতে পড়ে থাকা ঝর্ণার ভাঙ্গা ফোন টা দেখিয়ে দিতেই সে ছুটে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল হায় হায় আমার ফোনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এরপর ন্যাকা কান্না করে বলল ইস ফোনটা বাবা আজি আমাকে গিফট করেছিল। আমার কত সুন্দর ফোনটা ভেঙে গেল। এখন আমি ফোন কোথায় পাবো? বাবা যদি জানতে পারে আমি ফোনটা ভেঙে ফেলেছি তাহলে বাবা অনেক কষ্ট পাবে। আর এই ফোনটার দাম তো অনেক এতো টাকা আমি আমার পকেট থেকে দিলে আমি তো ফকির হয়ে যাব। না বাবা না আমি আমার এক টাকাও খরচ করতে পারবোনা।
আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো এই যে মিস্টার অভ্র লাল চৌধুরী আপনার জন্য আমার নতুন ফোনটা ভেঙ্গে গেছে এখন আপনি একটা নতুন ফোন কিনে দিবেন আমাকে।
- আমি মুচকি হেসে বললাম তুমি এখনো কিপটে রয়ে গেছে। এর চেয়ে ভালো মোবাইল কিনে দেবো এখন চোখ বন্ধ করো।
- ঝর্না ভুরু কুঁচকে বললো কেনো?
- আহা যেটা বলছি সেটা করো না
- ঝর্না চোখ বন্ধ করতেই আমি ওর গলায় একটা ডায়মন্ডের নেকলেস পরিয়ে দিয়ে কানে কানে বললাম "শুভ জন্মদিন"।
- ঝর্না চোখ মেলে একবার নেকলেসের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দিল। জানেন আমি রাত বারোটার পর থেকে আপনার উইশের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আপনি যখন এই বিষয়ে কোন কথাই বললেন না তখন আমি মনে করেছিলাম আপনি আমার জন্মদিনের কথা ভুলেই গিয়েছেন হয়তো। আমার যে কি রাগ লাগছিল তা বলার মতো না। এই গিফটের আমার কাছে কোন মূল্য নেই আপনার দেশে ফেরা টায় আমার জন্মদিনের সবচেয়ে মূল্যবান গিফট।
- আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম ও আচ্ছা তাই নাকি? আচ্ছা তাহলে নিকলেস টা আমাকে দাও আমি আমার বাসার কাজের মেয়েকে দিবো নি ওর কাছে এর মূল্য অনেক।
- ঝর্না মুখ বাঁকিয়ে বললো যান ভাগেন এটা আমার গিফট। আমার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া প্রথম গেফট‌। আপনি ভাবলেন কিভাবে এইটার মূল্য আমার কাছে নেই আমি বোঝাতে চেয়েছি এটার চেয়ে আপনার মূল্য আমার কাছে বেশি। আপনি যে দেশে এসেছেন এটাই আমার জন্মদিনের স্পেশাল গিফট। এখন দ্রুত আমার বাবার সঙ্গে আমাদের বিয়ের কথা বলুন।
- আচ্ছা তানহাই বলবো এখন চলো তোমার না ভালোবাসার মানুষের সাথে রিক্সা ভ্রমণ করার খুব শখ চলো একটু রিক্সা ভ্রমণ করে আসি।
- ঝর্না খুশিতে গদগদ হয়ে বলল শুধু আমার না এটা প্রতিটা মেয়ের মনের সুপ্ত ইচ্ছা। কিন্তু এখন কিভাবে যাবো?
- আরে চলো রিক্সা ভ্রমণ হবে সেই ফাঁকে তোমার মোবাইলটা কেনা হবে।
- ঝর্না আমার হাতটা ধরে বলল আমার মোবাইল ফোন লাগবে না আমার শুধু আপনাকে লাগবে। আপনি এসে গেছেন এখন আর আমার কিছু প্রয়োজন নেই।
- ওরে বাবা এত প্রেম?
- ঝর্না লজ্জা পেয়ে বলল হুম
- একটা রিক্সা ডাকলাম দুজন কিছুক্ষণ ঘুরবো বলে। কিন্তু সমস্যা হল ঝর্না কিছুতে রিক্সায় উঠতে পারছিনা। অনেক ভারি শাড়ি পরায় সে আসলে ঠিক ভাবে হাঁটতেই পাচ্ছে না।
আমার দিকে ছল ছল নয়নে তাকিয়ে বলল এই শাড়ির জন্য তো আমি উঠতেই পারছি না। আমার ইচ্ছাটা পূরণ হলো না আর।
-আমি একবার আসে পাশে তাকি ওকে কোলে তুলে রিক্সায় উঠিয়ে দিলাম। এরপর ওর পাশে গিয়ে বসলাম। রিক্সাটা সিট মনে হয় বেশি ছোট আমাকে একদম ঝরনার সঙ্গে ঘেসে বসতে হয়েছে। খুব আনইজি লাগতেছে।
- আমার ছটফটানি দেখে ঝর্ণা বললো কি হইছে এমন জবাই করা মুরগির মত ছটফট করছেন কেন?
- না মানে কখনো কোন মেয়ের সঙ্গে রিক্সায় উঠে নাই তো তাই।
- ঝর্না মুখ বাঁকিয়ে বললো থাক হইছে আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না। আপনি যে কত ভদ্র ছিলেন আমি সেটা খুব ভাল করে জানি।
মোবাইল কিনে ফেরার পথে ঝর্না দুই হাত দিয়ে আমার বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাম কাধে মাথা রাখলো। সেই অনুভূতিটা যে কতটা সুন্দর ছিল সেই মুহূর্তটা যে কতটা রোমান্টিক ছিল আমি সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার শুধু তখন মনে হচ্ছিল ঘড়ির কাঁটা যদি এখানেই থেমে যেত। কতই না ভালো হতো।
রিক্সা থেকে ঝর্ণা কে কোলে করে নামাতেই সে আমার আমার হাতটা ধরে বলল চলুন অনেক তো ঘোরাঘুরি হলো। এখন বাসায় চলুন, বাসার সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
-ঝর্না কলিংবেলে চাপ দিতে আমি বললাম হাতটা ছাড়ো কেউ দেখলে কি ভাববে?
- ঝর্না আমার হাতটা ছেড়ে বাহু শক্ত করে ধরে বলল কে কি ভাবলো তাতে আমার কোন কিছু যায় আসে না। আমি আপনাকে ভালোবাসি আপনি আমাকে ভালবাসেন এখন ডাইরেক গিয়ে বাবাকে বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান কথা শেষ।
- ঝরনা আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে।
- আপনি শুধু বড় বড় ডায়লগ দিতে পারেন কিন্তু বাস্তবে আপনি একটা ভীতু ডিম। আর ভয় পাওয়ার কী আছে বাসায় শুধু আপনার পরিবার আর আমার পরিবার আছে ।
খট করে একটা আওয়াজ হলো এরপর আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে গেল।
- দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি। কিন্তু এই মিষ্টি দু বছর আগের সেই মিষ্টি না। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে। চোখটা ভিতরে ঢুকে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ অসুস্থ। খাওয়া দাওয়া করে না ঠিক মতো।
আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে সে যে অবাক হয়েছে সেটা তার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।ফেলফেল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে
ঝর্না তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ফিসফিস করে বলল আমার লুচ্চা বর ওইভাবে হা করে তাকি তাকি কি দেখছো নজর লেগে যাবে তো। মিষ্টি সঙ্গে সঙ্গে আমার উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিল।
ঝর্না আমার বাহু শক্ত করে ধরে আমাকে বসার ঘরে নিয়ে এল। বাবা-মা ভাই ভাবি স্বর্ণার বাবা আর স্বর্না সবাই সোফায় বসে ছিল। আমাদের দুজনকে এভাবে দেখে তাদের সবারই চোখ লাড্ডুর মতো গোল গোল হয়ে গেছে।
ঝর্না সবার উদ্দেশ্যে একটা লম্বা সালাম দিয়ে আমার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল। আন্টি আপনার ছোট ছেলেকে জোর করে ধরে নিয়ে আসলাম। উনি তো লজ্জায় ভিতরে আসতে চাচ্ছিল না। আপনার ছেলের এত লজ্জা । আমরা আমরাই তো এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে বলেন?
- মা একবার আমার দিকে তাকালো আরেকবার ঝরনার দিকে। এরপর বলল, কি আর বলব মা ওর এত লজ্জার কারনে তো ওর জন্য পাত্রী খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি বল এত লজ্জাবতী ছেলেকে কেউ বিয়ে করতে চায়?
- ঝর্ণা বলল কি যে বলেন আন্টি আমি তো বিয়ে করার জন্য এক পায়ে খাড়া। শুধু আপনার ভীতু ছেলেটাকে আমার বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলুন। আর বাকিটুকু আমি সামলিয়ে নিবো।
- উপস্থিত সবাই ভুরু কুঁচকে তাকালো ঝর্নার দিকে।
- ঝর্না যখন বুঝতে পারলো সে কি বলে ফেলেছেন। তখন সে আমতা আমতা করে বলল না মানে আমার সন্ধানে একটা পাত্রী আছে যে আপনার লজ্জাবতী ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি। তার কথাই বলছিলাম আর কি। আচ্ছা আপনারা কথা বলুন আমি আসছি বলে দুহাতে শাড়ি উঠিয়ে দৌড়ে পালালো।
- ভাইয়া আমার কাছে আসতেই আমি পাশ কাটিয়ে মার পাশে বসে পড়লাম।
- মা ফিসফিস করে বলল ও আচ্ছা তুই এই ঝর্ণার পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলি? তাহলে তলে তলে এসব চলছে আর আমি কিছুই জানিনা?
- বিশ্বাস করো না আমি এই মেয়েটাকে চিনি না। ও কই থেকে এসে আমার হাত ধরে বাসার মধ্যে নিয়ে।
- থাক হইছে তোর আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না। মেয়েটা ভারী মিষ্টি ওকে আমার পছন্দ হয়েছে।
- আমি দু পাটি দাঁত বের করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম। মা তাহলে বাবাকে বল না ঝর্না বাবার সাথে আমাদের বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে।
- তুই বিয়ে করবি , তুই ওর বাবার সঙ্গে কথা বলি তোর বাবা কেন কথা বলবে ? তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে পারো কিন্তু বিয়ের কথা বলতে পারো না বিয়ে করার সময় তোমার এখন বাবা লাগবে? তুই মেজরের ছেলে তোর কিসের এত ভয় রে?
- ঝর্নার কে কাটা আগ মুহূর্তে আমি বুকে অনেক সাহস যুগিয়ে আঙ্কেল কে বললাম। আঙ্কেল আমি আপনার সাথে একটা কথা বলতে চাই।
আঙ্কেল গম্ভীর কণ্ঠে বলল কি বলবে বলো এমন থরথর করে কাঁপার কি আছে ? আমি বাঘ না ভাল্লুক?
- আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম না মানে আঙ্কেল হয়েছেটা কি আসলে ।
- আঙ্কেল আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল আসল-নকল বাদ দাও কি বলবে ক্লিয়ারলি বল।
- আমি একবার ঝরনার দিকে তাকালাম সে চোখের ইশারায় বলছে কি হলো এত ভয় পাওয়ার কী আছে বলে ফেলুন
- আসলে আংকেল আমি আর ঝর্ণা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
- আঙ্কেল ভুরু কুঁচকে বললেন আমাকে বিয়ে করতে চাও মানে তোমার কি মাথা ঠিক আছে?
- না মানে আংকেল আপনার মেয়ে ঝর্না কে বিয়ে করতে চাই
আমার কথা শুনে তিনি টমেটোর মত লাল লাল চোখ করে আমার দিকে তেড়ে আসছে। এখন নিশ্চয় আমাকে দুই তিনটা থাপ্পড় লাগাবে। ইস দেশে ফিরেই আবার সেই থাপ্পর।
আল্লাহ তুমি আমারে বাঁচাও আমি বিয়ে করবো না
চলবে...
বিশেষ দ্রষ্টব্য ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন রিচেক করা হয় নাই তাই অনেক ভুল হতে পারে




 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code