Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ১৬

 

ওই শোনেন আমার এখনই বাবু চাই।
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি ইন্টারনেট থেকে তোমার জন্য একটা বাবু ডাউনলোড করে দিবনি।
- ঝর্না ভেংচি কেটে বলল তাহলে বউটাও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিন কেমন। ফাজিল লোক একটা খবরদার আমাকে ফোন করবেন না বলেই ফোন কেটে দিল।
- আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ হাসলাম। কারণ ঝরনা নিজেই আবার আমাকে ফোন করেছে।
- এই আমি ফোন কেটে দিলাম আপনি কল ব্যাক করলে না কেন? আর আমি কল রিসিভ করলেন কেন? আমার টাকা খরচ হচ্ছে না?
এই আপনার ভালোবাসা?
- আমি মুচকি হেসে বললাম,আজ একটু আমার কিপটু বউয়ের টাকা খরচ করতে ইচ্ছে হলো। আর আমি তো জানতাম তুমি আবার আমাকে কল দিবে। তাই আর কলব্যাক করিনি।
- কচু জানতেন , আচ্ছা এখন আসল কথায় আসি যে জন্য ফোন করেছি। আমি না বাবুদের নাম ঠিক করে ফেলেছি।
- আমি অবাক হয়ে বললাম আগে বিয়েটা তো হতে দাও। বিয়ে না হতেই তুমি বাবুদের নামা ঠিক করে ফেলেছো?
- এই আপনি এত কথা বলেন কেন চুপচাপ শোনেন। যদি আমাদের মেয়ে বাবু হয় তাহলে নাম রাখব আপনার নামের সঙ্গে মিল রেখে নীলিমা। আর যদি ছেলে হয় তাহলে নাম রাখবো আমার নামের সঙ্গে মিল রেখে হিমু। এখন বলুন নাম দুটো কেমন হয়েছে?
- হ্যাঁ ভালো তবে আমার মনে হয় কী যদি ছেলে বাবু হয় তাহলে তোমার নাম ঝর্ণা সঙ্গে মিল রেখে বাবুর নাম রাখা উচিত ঝন্টু। নামটা সুন্দর না?
- কি বললে আরেকবার বলে? ঝর্না রেগে গিয়ে বলল আমার বাবুর নাম ঝন্টু কখনোই আমি রাখবো না। নিজে তো খুব সুন্দর একটা নাম রেখেছেন অভ্রনীল । আর আমার ছেলের নাম রাখবে ঝন্টু , আসছে অসহ্য লোক একটা।
- কেন নামটা তো বেশ সুন্দর তোমার পছন্দ হয় নাই? আমার কিন্তু নামটা বেশ পছন্দ।
- এতই যখন পছন্দ তাহলে নিজের নামটা চেঞ্জ করে ঝন্টু রেখে দেন। আমি আমার বাবুর নাম কখনোই ঝন্টু রাখবো না।
- আজ মিষ্টির বিয়ে হচ্ছে। অনেকটা লুকিয়ে চাপিয়ে পারিবারিকভাবে বিয়ে হচ্ছে। যদিও আবিরের বাবা-মা চেয়েছিল তারা দেশে এসে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করে তাদের পুত্র বধুকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু মিষ্টির বাবা-মা জমকালো অনুষ্ঠান করতে চায়না তাই বাধ্য হয়ে ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হচ্ছে। মিষ্টির পরিবারের সবাই অনেক খুশি। সবচেয়ে বেশী খুশী হল মুনতাহা সে তার নতুন মা কে পেয়েছে। নিজের মা বাবার বিয়েটা নিজেই দেখতে পাচ্ছে। তাঁর আনন্দের যেন শেষ নেই।
মিষ্টিকে একটা টকটকে লাল শাড়ি পড়ানো হয়েছে। শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। মিষ্টি আর আবিরকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
সবাই অনেক খুশি শুধু একজন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তার ভীষণ রাগ হচ্ছে হ্যাঁ আপনারা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন ঝর্নার ভীষণ রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছে কাজি সাহেবের মাথা ফাটিয়ে ফেলতে।
তার বিয়ে একমাস আগে ঠিক হয়েছে অথচ তার আগেই এই মিষ্টি শাকচুন্নির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সব সেই অভ্র লাল চৌধুরী এই ফাজিল টার মাথাটা ফাটাতে পারলে কি যে ভালো লাগতো।
- ঝরনা আমার পাশে এসে দাড়ালো। কানের কাছে মুখ নিয়ে সে ধীরে ধীরে বলল-এই বাবাকে বলেন না আজ আমাদের বিয়েটা সেরে ফেলতে। এক খরচ এই দুইটা বিয়ে পারি হয়ে যাবে।
- আমি ভুরু কুঁচকে তাকালাম ঝর্নার দিকে। এই কিপটা তোমার না বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন। হলুদের অনুষ্ঠান হবে তুমি হলুদ শাড়ি পরবে তোমাকে সবাই হলুদ মাখাবে তুমি হাতে মেহেদি দিবে আরো কত কিছু না তোমার স্বপ্ন? এখন বিয়ে করলে স্বপ্ন গুলো কিন্তু পূরণ হবে না।
- ঝর্না ঠোট উল্টিয়ে বলল ওই মিষ্টি শাকচুন্নির বিয়ে আমার আগে হয়ে যাচ্ছে। আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা দেখছি অথচ আমার বিয়ে আগে হওয়ার কথা ছিল। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আজকে বিয়ে করবো দু'দিন পর আবার বিয়ে করবো তখন সব অনুষ্ঠান হবে প্লিজ আপনি বাবাকে বলুন না।
- আমার লক্ষী বউটা দুদিন অপেক্ষা করো তারপরেই আমাদের বিয়ে।
- ঝর্না মার কাছে গিয়ে বাচ্চাদের মত করে বলল মা এদের বিয়ে দেখে আমার ও আজি বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।
- মা ওকে বুকে জড়িয়ে বলল পাগলি মেয়ে আর তো মাত্র কিছুদিন। একটু ধৈর্য ধর।
- ঝর্না আমার পাশে এসে বলল ওই দেখেন ওই দেখেন ওই মিষ্টি শাকচুন্নি টা আমাকে দেখে মুখ কিভাবে ভেঙ্গাছে। ওর বিয়ের আমি এখনই বারোটা বাজাচ্ছি বলে ঝর্না মিষ্টির দিকে এগিয়ে যেতে নিলে আমি ওকে বাধা দিলাম।
- লক্ষী বউ আমার ওতার কিছুদিন পরে চলে যাবে আর এখানে সবাই আছে প্লিজ কোন সিনক্রিয়েট করো না।
-ঝর্না সবার সামনে আমার কান টেনে বললো সব দোষ আপনার পাত্র আর পেল না একদম ফরেনার। বাসর ঘরের যদি আমি বারোটা না বাজাইছি তাহলে আমার নামও হুমায়রা ইসলাম ঝর্ণা না। শাকচুন্নি আমাকে ভাব দেখায়। বর টা পেল আমার জন্য আবার আমাকে ভাব দেখাচ্ছে। দাঁড়া তোর ভাব আমি ছোটাচ্ছি বলে ঝর্না আমার হাত ধরে উপরে নিয়ে এলো।
- কি হলো ঝর্ণা এখানে নিয়ে এলে কেন?
- ওদের বাসরঘর কোনটা?
- আমি ঝর্ণাকে ওদের বাসর ঘরে নিয়ে যেতেই ঝর্না রুমের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল। শাকচুন্নি আমাকে মুখ ভ্যাংচানো? আজ বাসর রাতে তোর কোমর ভেঙে ছাড়বো আমি। আজ রাতে তোদের শান্তি নাই। আমার দিকে ঘুরে বললো জান গিয়ে বেশি করে রঙ নিয়ে আসবেন আবার আবীর আইনেন না। দোকানদারকে বলবেন হাজার পাওয়ারের রং। যেন ডোলে ডোলে উঠাইতে হয়। এরপর রিন নিবেন একটা লাক্স সাবান নিবেন একটা ছোট দেখে বালতি আর শক্ত সুতা নিবেন। জান দ্রুত নিয়ে আসবেন 10 মিনিট সময় আপনার হাতে। একটা রাবারের সাপ নিয়ে আসবেন।
- আমি বোকার মত বললাম এসব দিয়ে কি করবে?
- আপনাকে সঙ্গে নিয়েই করবো। তাই এখন যেটা বললাম সেটা করেন। আর ভালো কথা এসব যেন কেউ না দেখতে পায়।
- 20 মিনিট পর ঝর্ণাকে তার লিস্টে সবকিছু দিতেই সে একটা শয়তানি হাসি দিল। এরপর আমার হাত ধরে আবার ওদের বাসর ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো চলুন কাজ শুরু করা যাক।
- আমি ইতস্ত বোধ করে বললাম না বাবা এখনো তো আমাদের বিয়েটা পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এখন ওগুলো করলে পাপ হবে।
- ঝর্না চোখমুখ কুঁচকে বলল অসভ্যের মত কথা বলবেন না। আমি কি ঐসব বাজে কাজ করতে বলছি? সব সময় শুধু মাথার মধ্যে যত্তসব আউলফাউল চিন্তা। এরপরা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল জান পানি নিয়ে আসুন অসভ্য লোক একটা
- এরপর ঝটপট দুজন মিলে কাজ সেরে ফেললাম। কাজ শেষ করার পর আমি ঝরনা কে বললাম ঝর্না এটা কি একটু বেশি বেশি হয়ে গেল না?
- ঝর্না আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল আর আপনি যেটা বৃষ্টি আপু সঙ্গে করেছিলেন ওটা এরচেয়ে বেশি ছিল অতএব চুপচাপ থাকেন।
- না মানে কোমড় যদি সত্যি সত্যি ভেঙে যায় তখন কি হবে?
- ভাঙলে ভাঙলে ফরেনার হাজবেন্ড আছেনা ট্রিটমেন্ট করাবে। ওসব নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না আপনার চিন্তা এখন শুধু আমাকে নিয়ে হবে বুঝলেন।
- এই ঝর্না এখন তো এখানে কেউ নাই একটা চুমু দিবে?
- ঝর্না আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললো আপনি তো দেখছি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন? যান গিয়ে নামাজ পড়ুন এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা তাহলে আর মাথায় আসবে না।
- মিষ্টি বাসর ঘরের দরজা খুলে যেই না ভেতরে ঢুকতে নিল অমনি উপর থেকে এক বালতি রং মেশানো পানি তার মাথায় এসে পড়ল। তখন মিষ্টির মুখ দেখার মত ছিল। রং মেশানো পানি দিয়ে একদম শাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে।
সবাই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল অভ্রনীল এটা কিরকম ফাজলামি? ফাইজলামি করবা ঠিক আছে কিন্তু এটা কোন ধরণের ফাইজলামি? মেয়েটার সবকিছু ভিজে গিয়েছে। রং দিয়ে গাঁ মেখে গিয়েছে। এই শীতের রাতে মেয়েটাকে আবার গোসল করতে হবে।
-আমি সবাইকে কত করে বললাম এসব আমি করিনি কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। মিষ্টিকে দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আর একটু হলেই কান্না করে দিত সে।
ঝর্নাকে দেখলাম সে সবার চোখের আড়ালে মিটিমিটি হাসছে। নিশ্চয়ই মনে মনে মিষ্টি কে বলছেন কি কেমন লাগে আমার সামনে ভাব দেখানো। এতো ট্রেইলার থা পিকচার আভি বাকি হে মেরে দোস্ত।
- মিষ্টি আমাকে চোখ রাঙিয়ে বলল এক মাঘে শীত যায় না।
- আমি শুধু বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
- ভাবি বলল জগরা পরে করিস আগে যা বাথরুমে গিয়ে গোসলটা সেরে নে। ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লাগবে।
- আমি মনে মনে ভাবতে ছিলাম এই পরবর্তীতে কি হবে।
- একটু পরে ধপাস করে একটা পড়া শব্দ হলো। তারপর ভেসে এলো মিষ্টি মিষ্টি কন্ঠে ওমাগো চিৎকার।
- আমি আর ঝর্ণা দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। ঝরনা তো হাসতে হাসতে শেষ। সে ভীষণ খুশি মিষ্টি কে উচিত শিক্ষা দিতে পেরেছে।
ঝর্না সাবান দিয়ে পুরো বাথরুমে মেঝেতে পিচ্ছিল করে রেখেছিল। যে কেও ওখানে পা দিলে স্লিপ কেটে পড়বেই পড়বে আর যদি না পড়ে তাহলে তার জন্য রয়েছে বেসিনের আয়না সামনে সুন্দর একটা রাবারের সাপ যদিও হাতে না নিলে বোঝা কঠিন....
- কেমন দিলাম বলেন ঝর্ণা আমাকে বল?
- ঝর্না আমার এখন চিন্তা হচ্ছে আমাদের বাসর নিয়ে। আমি তো সবার বাসরের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি এখন ওরা যদি আমাদের বাসরের বারোটা বাজায়ে...
ঝর্নার চোখেমুখে আতঙ্কে ছায়া নেমে এলো
চলবে....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code