Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ১৮

 

ঝর্না ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলো। মুখ জুড়ে ফুটে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম । ঝর্নার হার্টবিট যেন 100 কিলোমিটার গতিতে ওঠানামা করছে। এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল। এই ভয়ানক স্বপ্নটা সে আজ নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখেছে। তার পুরো শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
ঝর্না দোয়া পড়ে বুকে ফু দিল। কিন্তু তাতেও তার কাঁপা কাঁপি বন্ধ হলো না।সে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে অভ্রনীলের নাম্বার ডায়াল করলো। কিন্তু ফোন বন্ধ দ্বিতীয়বার কল দিতে নিল ঝর্না এমনভাবে কাঁপছিলো যে ঝর্নার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল ফ্লোরে।
ঝর্না বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো।
সত্যি সত্যি অভ্রনীলের কিছু হয়নি তো? ঝর্না আর কিছু ভাবতে পারল না ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
- এত রাতে বোনের কান্না শুনে ছুটে এল স্বর্ণা। কি হয়েছে তোর? তুই এত রাতে এভাবে কান্না করছিস কেন? মা'র কথা মনে পড়েছে?
- ঝর্না ওর বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল না আপু আমার ভীষণ ভয় করতেছে ওনার কিছু হলে আমি বাঁচব না। আমার বুকে ভীষণ ব্যাথা করতেছে। আমি বোধহয় মরে যাব আপু
- স্বর্ণা ঝর্নাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজেও কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল এই কি হয়েছে তোর? কি সব আজেবাজে কথা বলতেছিস? তুই কি কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছিস? শান্ত হ তোর কিছু হবে না আমি আছি তো।
- আপু তুই বাবাকে ডাকে দে আমার এখনই ওই বাসা তে যেতে হবে। তাছাড়া আমি মরে যাব আপু।
- স্বর্ণা ঝর্নাকে বিছানায় শুইয়ে ছুটে গেল তার বাবার রুমে। বাবাকে গিয়ে বলল বাবা জলদি ঝর্না রুমে আসো ঝর্না কেমন পাগলামি করতেছে। স্বর্ণার কান্না শুনে তার বাবা ধড়ফড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কি হয়েছে মা কাঁদছিস কেন?
- ঝর্না কেমন কেমন করছে তুমি তাড়াতাড়ি ওর রুমে চলো।
- বাবাকে রুমে ঢুকতে দেখে ঝর্না পাগলের মতো ছুটে গেল ওর বাবার কাছে। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল বাবা আমাকে এখনই নীল দের বাসায় নিয়ে চলো।
-কেন মা কি হইছে তোর? বাবা ঝর্নারকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল।
- বাবা আমি তোমাকে এখন কিছুই বলতে পারবোনা তুমি আমাকে এখনই উনাদের বাসায় নিয়ে চলো।
- মা তুই একটু শান্ত হও নীল কি তোকে কোন কিছু বলেছে? বললে আমাকে বল আমি ওর বাবার সঙ্গে কথা বলব। তুই এভাবে কাঁদছিস কেন।
- বাবা নীল আমাকে কিছু বলেনি তুমি প্লিজ এতো প্রশ্ন করোনা আমাকে এখনই ওখানে নিয়ে চলো।
- এখনতো রাত তিনটা বাজে তুই আর একটু অপেক্ষা কর সকাল হলেই আমরা ও বাসায় যাব। এত রাতে মানুষের বাসায় যাওয়া কেমন দেখায় বল?.
- না বাবা আমি এখনি যাবো। আমাকে তুমি এখনি ওখানে নিয়ে চলো আমি নীল কে না দেখলে মরে যাব বাবা প্লিজ বাবা।
- তোর কি হয়েছে আমাকে একটু বল? তুই এমন করছিস কেন?
- আমি খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি। আমি এখনই উনার কাছে যেতে চাই ‌। উনাকে না দেখা পর্যন্ত আমি কিছুতেই শান্ত হতে পারছি না বাবা। আমার হার্ট বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বাবা তুমি প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো।
- ঝর্না জোরাজুরিতে তার বাবা রাজি হলেন। কিন্তু তিনি প্রথমে বাবাকে ফোন করলেন।
- বাবা এত রাতে স্বর্ণার বাবার ফোন দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।
- ঝর্না বাবা বলল ভাই এত রাতে আপনাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করলাম।
- না সমস্যা নাই কোন বিপদ হয়েছে কি ভাই?
- না তেমন কিছু হয়নি কিন্তু মেয়েটা কেমন পাগলামি করছে আপনাদের বাসায় যাওয়ার জন্য আমি বললাম যে সকালে রেখে আসবো কিন্তু সে এখনই যাবে। বলেন তো দেখি এখন কি করি? এত রাতে আপনাদের বিরক্ত করতে চাইছিলাম না কিন্তু মেয়েটা কোন কথা শুনছে না।
- বাবা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল নীলের সঙ্গে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
- না ! কি না কি স্বপ্ন দেখছে কাঁদতে কাঁদতে শেষ
- আচ্ছা নিয়ে আসুন না এখানে এলে যদি ও একটু শান্ত হয় তাহলে অসুবিধা কোথায়। আর ও তো আমাদেরি মেয়ে ওর যখন ইচ্ছা তখন আসবে সমস্যা নেই তো।
- দরজা খুলতেই ঝরনা ছুটে গেল অভ্রনীলের রুমে। তখনো কাঁদছে সে । ঝর্না জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর আমার নাম ধরে ডাকছে। এদিকে আমি তখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি।
- ঝর্নার চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙ্গলো চিৎকার করলে ভুল হবে সে এক ভয়ঙ্কর চিৎকার। আমি প্রথমে ভাবলাম আমি স্বপ্ন দেখছি। কারণ এত রাতে তো ঝর্নার এবাড়িতে থাকবার কথা না।
কিন্তু একটু পর মার কন্ঠ শুনতে পেলাম। মা ঝর্নাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি যখন বিছানায় বসে চোখ কচলাচ্ছি তখন আমার কানে এল মা ঝর্না কে বলছে। এই পাগলি মেয়ে তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেন? এরকম করলে তুই তো নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বি। ওই শয়তানটার কিছুই হয় নাই দেখ গিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। তুই মিছে মিছে এতো টেনশন করতেছি একটু শান্ত হ মা। মা দরজায় জোরে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল এই শয়তান তুই ঘুমানোর সময় কি চোখের সঙ্গে সঙ্গে কানো বন্ধ করে ঘুমাইছিস? এত করে ডাকছি তুই শুনতে পাচ্ছিস না অভ্রনীল ওঠ বলছি তাড়াতাড়ি দরজা খোল ।
- এরপর ঝর্নার ফোঁপানির আওয়াজ পেলাম। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মাকে বলছে মা দেখছেন উনি কোন কথা বলছেন না। উনার নিশ্চয়ই কোন কিছু হয়েছে ।মা আপনি প্লিজ দরজা ভাঙ্গার ব্যবস্থা করুন। আমি আর এভাবে থাকতে পারছিনা মা
- আমি ওদের কথাবার্তা শুনে দ্রুত গিয়ে দরজা খুললাম। আর সেটাই যেন আমার জন্য কাল হলো। ততক্ষণে ঝর্ণার কান্নার আওয়াজ শুনে এ বাসার সবাই এসে দাঁড়িয়েছে ঝর্নার পেছনে।
আমি দরজা খুলতেই ঝর্না আশেপাশে কারো তোয়াক্কা না করে ঝাপিয়ে পরল আমার বুকে। ঝর্নার এমন হঠাৎ করেই আমার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়াই আমি তাল সামলাতে না পেরে ঝর্না কে সাথে নিয়ে হুড়মুড় করে পড়ে গেলাম। ঝর্না আমার গালে কপালে পাগলের মত চুমু দিয়ে বলল আপনি ঠিক আছেন? জানেন আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। ঝর্না তার কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিল।
এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত আমি বুঝতে পারছি না। কারণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবাই ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
- আমি ঝর্নাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললাম কি হয়েছে ঝর্না তুমি এরকম করছ কেন? একটু শান্ত হও প্লিজ সবাই দেখছে তো সবাই কি ভাবছে বলতো দেখি?
- ঝর্না আমার কথা শুনে একবার দরজার দিকে তাকালো। এরপর আমাকে ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। দরজা লাগিয়ে ছুটে গেল আমার খাটের কাছে এরপর পাগল মতো কী যেন খুঁজতে লাগলো।
আমি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম কি খুঁজছো এভাবে আমাকে বল আমি বের করে দিচ্ছি?
- আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল সিগারেট কই রাখছেন
-কী
- কি বলছি শুনতে পান না সিগারেট কই রাখছেন।
- আমি সিগারেটের প্যাকেট বের করে দিতেই ঝর্না মুহুর্তের মধ্যেই আমার দুই প্যাকেট সিগারেট ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে।
- ঝর্না তুমি কি পাগল হয়ে গেছো এভাবে সিগারেট গুলো নষ্ট করলে কেন?
- ঝর্না চোখের পানি মুছে বলল আজ থেকে আপনি আর কোন সিগারেট খেতে পারবেন না। আপনাকে কতবার করে বারণ করেছি সিগারেট না খেতে কিন্তু আপনি আমার কোন কথায় কানে নেন না। আজ থেকে আপনি আর সিগারেট ধরতে পারবেন না। আজকে আপনাকে কথা দিতে হবে আপনি আর কখনোই সিগারেট খাবেন না।
- আমি অসহায় গলায় বললাম তুমি আমার সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে এত রাতে এ বাড়িতে হানা দিয়েছে?
- হ্যাঁ কেন আপনার কোন সমস্যা এটা আমার শ্বশুরবাড়ি আমি যখন ইচ্ছা তখন আসতে পারি। আপনাকে যেটা বললাম সেটা করেন আপনি ওয়াদা করেন আজ থেকে আর কোন সিগারেট খাবেন না।
- আমি সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করছি তো কিন্তু তোমাকে তো বলেছি সকালে টয়লেট করার সময় সিগারেট না খেলে আমার হাগা বের হয় না।
- অসভ্য লোক একটা! আমি এত কিছু শুনতে চাই না আপনি সিগারেট ছাড়বেন কি ছাড়বেন না সেটা বলুন?
- আমি ছাড়ার চেষ্টা করছি তো এভাবে হুট করে কি ছাড়া যায়?
- ঝর্না আমার কলার ধরে চোখ বড় বড় করে বললো তুই সিগারেট ছাড়বি না তোর বাবা ছাড়বে।
- আমি মুচকি হেসে বললাম তাহলে আমার বাবাকে গিয়ে বল
- ঝর্না আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
- আমি শুধু বোকার মত বসে রইলাম। আজকে নিশ্চয়ই ঝর্নার মাথায় ভূত চেপেছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই মা সবকিছু জেনে গেছে আমার কপালে আজ শনি আছে। ঝর্না রুম থেকে বেরিয়ে যেতে সবাই রুমে এলো। সবাই একসঙ্গে আমাকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে কিছু বুঝতে পারলি?
- আমি নিষ্পাপ ছেলের মত বললাম না বাবা হঠাৎ করে কেন যে পাগলামি করছে ঠিক বুঝতে পারছিনা।
- হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠলো নীল তুই তো সিগারেট খাস না তাহলে রুমে এত সিগারেট কোথায় থেকে এলো?
- আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই দেখলাম ঝর্না বঁটি হাতে আমার রুমে ঢুকছে। আমি দৌড়ে বাবার পিছনে লুকালাম।
ও বাবা গো ও মা গোঁ এই পাগল মেয়ে আমাকে আজকে মেরেই ফেলবে তোমরা প্লিজ এই পাগলি মেয়ের হাত থাকে আমাকে বাঁচাও।মা গো আমি বিয়ে করবো না গোঁ তুমি প্লিজ আমাকে বাঁচাও।
- বঁটি হাতে ঝর্নাকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। সবাই ঝর্নাকে আটকানোর চেষ্টা করল কিন্তু কেউ আটকাতে পারল না।
- ঝর্না সবাইকে বটির ভয় দেখিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে আমার উপর চড়াও হলো।
আমাকে বেডের উপর ফেলে দিয়ে বঁটি হাতে আমার বুকের উপর উঠে বসলো। ভয়ে তখন আমার জান যায় যায় অবস্থা। এরকম ভয়ঙ্কর রূপে ঝর্ণাকে আমি কখনই দেখিনি।
- ঝর্না বঁটি দেখিয়ে বলল তুই জানিস না সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? তবু তুই কেন সিগারেট খাস? আমার মোবাইলটা নিয়ে কি জানি ঘাটাঘাটি করল এরপর আমার দিকে মোবাইল ছুঁড়ে দিয়ে বললো দেখ।
প্রতিবছর ধূমপানের কারণে প্রায় 50 লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষ এবং নারী ধূমপায়ী গড়ে তাদের জীবন থেকে 13. 2 ও 14. 5 বছর হারান।
বলা হয়ে থাকে একটি সিগারেট প্রায় 11 মিনিট আয়ু কমিয়ে দেয়। আর তুই না জানি দিনে কয়টা করে সিগারেট খাস কাঁদতে কাঁদতে বলল ঝর্ণা। ধূমপানের কারণে আপনার ক্যান্সার হতে পারে আপনি জানেন না? সিগারেট খেলে আপনি অকালে মরে যেতে পারেন।
ঝর্না আমার গলায় বঁটি ধরে বলল বলেন আর সিগারেট খাবেন?
- আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম ঝর্না প্লিজ বডিটা সরাও আমি আর কখনো সিগারেট খাব না। আল্লাহর দোহাই লাগে তুমি প্লিজ বঁটি টা সরাও। আমার সোনা বউ আমার জান পাখি প্লিজ
- ঝর্না বটি ফ্লোরে ছুড়ে ফেলল এরপর আমার মাথার পেছনে হাত দিয়ে আমার ঠোট তার ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিল। এক মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে বলল এই ঠোঁটে আপনি যদি আর সিগারেটস ছোঁয়ান তাহলে আপনি আমার মরা মুখ দেখবেন।
- আমি ঝর্নার মুখে হাত দিয়ে বললাম কি বলছ কি তুমি এসব বাজে কথা মুখে আনবে না।
- ঝর্না কাঁদতে কাঁদতে বলল তাহলে আপনি কেন সিগারেট ছাড়ছেন না?একটা সিগারেট আপনার জীবন থেকে 11 মিনিট নিয়ে নিচ্ছে আপনি ভাবতে পারছেন? আপনি জানেন না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি? আপনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে? আমি বাঁচবো কাকে নিয়ে ‌।
ঝর্নার আর কিছু বলতে পারলো না লুটিয়ে পড়ল আমার বুকের উপর।
পাগলী মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে। আমি ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুমের দরজা খুলতেই দেখলাম মা ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দরজা খুলে বের হতে দেখে দুই তিনটা ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি দিয়ে বলল হারামজাদা তুই সিগারেট খাস? আর জীবনে খাবনামা প্লিজ মেরো না মা এমনিতেই খুন হতে হতে বেঁচে এলাম। আল্লাহ দোহাই তুমি আর মেরো না আমাই। তোমার বৌমা অজ্ঞান হারিয়েছে তুমি আগে ওকে দেখো প্লিজ।
সকালবেলা আমার রুমে ভুলকি দিতে দেখলাম ঝর্না মার কোলে মাথা রেখে গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। আমি রুমে ঢুকতেই মা ঝাড়ু ছুঁড়ে মারলেন আমার গায়ে। হাতের ইশারায় রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। এটা কোন কথা আমার রুমে আমি ঢুকতে পারছি না? ঝাড়ু একদম সাথে নিয়ে বসেছেন কি ডেঞ্জারাস মহিলা?
- মা বলল তুই যাবি না মার খাবি?
কি আর করার আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
ঘন্টাখানিক পর আবারও রুমের সামনে যেতেই দেখলাম ঝর্না আর মা গল্প করছে। ঝর্না মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে মা ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।
- হঠাৎ মা ঝর্ণাকে প্রশ্ন করল আমার ছেলেটাকে খুব ভালবাসিস তাই না?
- ঝর্ণা বোধহয় লজ্জা পেল সে মার আচল দিয়ে মুখ ঢেকে বলল তোমার ওই ফাজিল ছেলেকে ভালবাসতে আমার বয়েই গেছে।
বাহ আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে বেশ ভালো আমি মনে মনে ভাবলাম
- মা মুচকি হেসে বলল জানি রে পাগলি । তুই ওকে পাগলের মত ভালবাসিস বলেই এক স্বপ্ন দেখে অত রাতে এখানে ছুটে এসেছিলি। এত বেশি ভালবাসতে যাস না কারণ তাহলে বেশি কষ্ট পেতে হবে।
- আমি মার কথা শুনে আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না রুমের মধ্যে ঢুকে বললাম এটা কেমন কথা মা? কই তুমি আমার বউ কে কিভাবে ভালোবাসতে হয় সেগুলো শিখাবে তা না।তুমি আমার বউকে বলতাছো কম করে ভালবাসতে এটা কি ঠিক?
- হারামজাদা তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ
দুদিন পর
মা প্লিজ আমাকেও নিয়ে চলো না তোমাদের সঙ্গে।
- না ওখানে তো যাওয়া যাবে না।
- এটা কেমন কথা মা ? আমার বউয়ের গায়ে হলুদে আমি যেতে পারব না?
- এটাই নিয়ম আর নিয়ম মেনে সবকিছু হবে যা রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে থাক।
- মা এটা কি রকম নিয়ম আমি এসব নিয়ম মানিনা আমি যাব মানে যাব।
- এক থাপ্পর দেবো ফাজিল কোথাকার যা রুমে যা। বিয়ে না হতেই বউ বউ করছিস লজ্জা করে না তোর?
- বুঝতে পেরেছি মা আমাকে যেতে দেবে না অতএব অন্য প্ল্যান করতে হবে।
- ঝর্নাদের বাসা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ঝর্না স্টেজে বসে আছে একে একে সবাই তাকে হলুদ মাখাচ্ছে। ঝর্নাকে হলুদ শাড়িতে একদম হলুদ পরীর মত লাগছে। তার মুখের সেই মিষ্টি হাসি লেগেই আছে। ইস আমার বউটা এত সুন্দর কেন।
আমাদেরকে আসতে দেখে আমার শশুর আব্বা আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। তিনি একদম আমার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ভাবী কে বলেন। বৃষ্টি ইনি কে এনাকে তো চিনলাম না?
- আমার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে তখন। আমি মনে মনে ভাবতেছি এই যা ধরা খেয়ে গেলাম। সত্যিই পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়া খুবই কঠিন।
ভাবি একবার আমার দিকে চাইলেন এরপর মুখে হাত দিয়ে হাসি চেপে রেখে বলল উনি অভ্রনীলের দুরসম্পর্কের ফুফু। আমার ফুপু শ্বাশুড়ী।
- আমার শশুর মশাই লম্বা একটা সালাম দিয়ে বললেন আসলে আপনাকে কখনো দেখা হয়নি তো তাই জিজ্ঞেস করলাম। আপনি প্লিজ সামনের সিটে গিয়ে বসুন
আমি শুধু মাথা ঝাকালাম। আমি এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচি।
একেতো এই গরমের মধ্যে ভাবি কালো একটা বোরখা পড়েছে আমাকে। তারপর হাত মোজা পা মোজা সব পড়তে হয়েছে মুখ চোখ সব ঢাকতে হয়েছে। গরমে আমার জান যায় যায় অবস্থা। তারমধ্যে শ্বশুরমশাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন আমি মার্ডার কেসের আসামি।
- হঠাৎ করে আমার বোরকার মধ্যে থেকে একটা আপেল খসে পড়ল। আমি একবার চারিদিকে দেখলাম কেউ বিষয়টা খেয়াল করেছে কিনা। যাক ভাগ্য ভালো কেউ দেখেনাই।
আমি দ্রুত ওখান থেকে কেটে আসার চেষ্টা করলাম কিন্তু একটা পিচ্চি এসে সব পয়মাল করে দিল।
- পিচ্ছি টা আমার সামনে এসে আপেল হাতে নিয়ে বলল আন্টি আপনার আপেল
- আমি ওকে পাশকাটিয়ে আসার চেষ্টা করলাম কিন্তু খচ্চর টা কিছুতে আমার পিছু ছাড়লো না।সে আন্টি আপনার আপেল আন্টি আপনার আপেল বলে আমার পিছন পিছন ঘুরছে
- সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তখন আমার ওপর
- ওই পিচ্চির থেকে পালাতে গিয়ে খেলাম শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে ধাক্কা। আরেকটা আপেল টপ করে খুঁলে পড়ল। এই যা ধরা খেলাম বুঝি
- আমার শশুর আব্বা আপেল টা তুলে নিয়ে বললেন আপা আপনার আপেল .....
- আমি দুই হাত দিয়ে বোরকা উঠিয়ে দিলাম এক দৌড়
- আমার শশুর আব্বা অবাক হয়ে বলল কিরে বৃষ্টি তোর ফুপু শ্বাশুড়ী এরকম ভাবে দৌড় দিল কেন..?
চলবে....
বিশেষ দ্রষ্টব্য ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
এই পর্ব টা কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code