Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ০৯

 

কিরে বলদ তোকে নাকি শুভর শালী লাথি দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে? তুই আসলে একটা বলদ চৌধুরী বংশের মান-সম্মান তুই রাখলি না। তোকে দিয়ে জমিতে হালচাষও হবে না। গাধা কোথাকার সামান্য একটা বাচ্চা মেয়ে কে পটাতে পারলিনা ? বাবা ফোন দিয়েই উরাধুরা গালি শুরু করে দেওয়ায় আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম।
- ককককি বলছ কি তুমি বাবা? আমাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার সাহস আছে কারো?
- একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছিস সে আবার মুখের উপর রিজেক্ট করে দিয়েছে তাহলে সেটা লাথি দিয়ে বের করে দেয়া হল না তো কি হল গাধা কোথাকার। তুই আমার ছেলে হয়ে একটা মেয়েকে পটাতে পারলিনা ছি।
কেমন করে প্রপোজ করলি যে মেয়েটা তোকে রিজেক্ট করে দিলা?
- ওর পিছনে আমার মত হাজার ছেলে নাকি লাইন দিয়ে রয়েছে। আমার মত ফালতু ছেলের সঙ্গে ও রিলেশন করতে চায় না।
- এসব শোনার পরে তুই এখনো বেঁচে আছিস কিভাবে? তোর তো গ্লাসের জলে ডুবে মরে যাওয়া উচিত ছিল।
- বাবা তুমি এসব জানলে কিভাবে?
- শুভ আমাকে ফোন করেছিল।
- কিন্তু শুভ ভাইয়ার তো জানার কথা না?
- শুভু তো আমাকে বললো ও বাসার সবাই জানে। তুই আমাদের মান-সম্মান কিছু রাখলিনা।
মেয়েটা তোকে রিজেক্ট করলো কিভাবে? জানিস আমি যখন আর্মিতে ছিলাম মেয়েরা আমাকে দেখলে পাগল হয়ে যেত। শুধু তোর দাদা জান আগেই বুদ্ধি করে আমার বিয়েটা করে দিয়েছিল। তা না হলে আজ তোর মা হয়তো কোন রাজ্যের রাজার মেয়ে হত। আমার দুই তিনটা বউ থাকতো। আহ কি শান্তি আমি শুধু আরামে বসে বসে খাইতাম।
- আজাইরা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো মা জানতে পারলে তোমার অবস্থা খারাপ করে দেবে।
- আমার কথা যেন তোর মাকে বলিস না বাবা তাহলে কিন্তু কেলেংকারী হয়ে যাবে। এমনিতে ইরানি মেয়ের কথা শুনে তোর মা আমার উপর ভীষণ রেগে আছে। জানিস বাসার সব কাজ আমাকে করতে হচ্ছে।
- বাবা আমি আর দেশে থাকতে চাই না। আমি ইংল্যান্ডে যাবো তুমি একটু মাকে ম্যানেজ করো না।
- কেন দেশী গাই ঘাস খাচ্ছে না এজন্য ইংল্যান্ডের গাই কে ঘাস খাওয়াতে যাবি? শোন তোর মা বলে দিয়েছে কোন ইংল্যান্ডের গাই কে আমাদের বাসার ঘাস খাওয়ানো যাবে না।
- বাবা আমি কি ওখানে বিয়ে করার জন্য যাচ্ছি? আমিতো যাচ্ছি ওখানে পড়াশোনা করার জন্য। পড়াশোনা শেষ হলেই চলে আসব। আর ওখানে গেলে কষ্টটাও একটু কমবে।
- এমন ভাব করতেছি যে তুই সেই লেভেলের ছ্যাকা খাইছিস? শোন তোর মা ভাবতেছে তুই ওখানে গেলে 100% ওখানকার কোন মেয়েকে বিয়ে করবি। আর ওখানেই সেটেল হয়ে যাবি। তোর মা তোকে খুব ভালোবাসে তো এইজন্য তোকে নিজের কাছ থেকে দূরে যেতে দিতে চায় না। তুই এসে তোর মাকে সুন্দর করে বোঝালে বুঝবে। তার আগে তুই ওই মেয়েটা কে একটু শায়েস্তা কর। ও তোকে রিজেক্ট করেছে তো করেছে এখন আবার সবাইকে বলে বলে বেড়াচ্ছে এটা কোন ধরনের কথা?
- কিন্তু বাবা ওকে শায়েস্তা করব কিভাবে?
- তোকে কি এমনি আমি গাধা বলি সবকিছু যদি আমাকে বলে দিতে হয় তাহলে তুই কি করবি? আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। ফাস্ট মেয়েরা ইগনোর করা পছন্দ করেন। তো এখন তোর প্রথম কাজ হবে ওই মেয়েটাকে ইগনোর করা। সেকেন্ড একটা মেয়ে আরেক জন মেয়েকে সহন করতে পারে না। ধর তোর মা কে আমার ভীষণ রাগাতে ইচ্ছা করছে আমি তখন কি করি অন্য মেয়েদের প্রশংসা করি ঐ সময় কি হয় তোর মা একদম রেগে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। এখন সেম কাজটাই তোকে করতে হবে। তুই ওই মেয়েটার সঙ্গে এখন থেকে আর কোন কথা বলবি না কিন্তু বাকি মেয়েগুলোর সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবি মিসবি। থার্ড যেটা করবি সেটা হলো তুই খুঁজে বের করবি ওই মেয়েটা কোন মেয়েকে দেখতে পারেনা। সেই মেয়েটার সাথে তুই ফ্রেন্ডশিপ করার চেষ্টা করবি আর যদি সম্ভব হয় দুজন মিলে প্রেমের অভিনয় করার চেষ্টা করবি। এরপর দেখবি মেয়েটা একদম জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তুই যদি এগুলো সঠিকভাবে করতে পারিস আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতেছি ঐ মেয়েটাই তোর পিছনে পিছনে ঘুরবে। যে তোকে রিজেক্ট করেছিল।
- বহ বাবা তুমি এত কিছু জানলে কিভাবে?
- তুই এখন যে স্কুলে ছাত্র আমি একসময় এই স্কুলের হেডমাস্টার ছিলাম। এমনি কি তোর দাদাজান এতো দ্রুত আমার বিয়ে করিয়েছিল।
একসময় আমি আশেপাশে তিন-চারটা গ্রামের মেয়েদের ক্রাশ ছিলাম। ইভেন এখনো আমাকে দেখলে তিন-চারটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
- শেষের টা একটু বেশি বেশি হয়ে গেল না বাবা?
- ও একটু বেশি বেশি বলে ফেলেছি তাই না? কি করবো বয়স হচ্ছে তো। আমি যে তোকে কথাগুলো বলেছি এগুলো যেন তোর মাকে আবার বলিস না । তোর মা দেখতে সুন্দর হলেও মহিলা খুব ডেঞ্জারাস ‌।
- রুম থেকে বের হতে যাবো এমন সময় ঝর্না দৌড়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।
মিষ্টি তো আপনার ভাইয়াকে সবকিছু বলে দিয়েছেন। দুলাভাই তো ভীষণ রেগে গিয়েছিল পরে বৃষ্টি আপু দুলাভাইকে বোঝালেন। কিন্তু দুলাভাই আপনার বাবাকে ফোন করে সব বলে দিয়েছে। আমি দরজার আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম আপনার ভাইয়ের মুখ দেখে মনে হল আপনার বাবা খুব রাগ করেছেন।
- হ্যাঁ বাবা আমাকে ফোন করেছিল বেশ বকাঝকা করল। আচ্ছা ঝর্না তুমি একটা কথা বলো আমি ওকে প্রপোজ করেছি। ওর আমাকে ভাল লাগেনি ও রিজেক্ট করছে বাস শেষ। এরপর আমি তো ওকে ডিস্টার্ব করিনি তাহলে ও কেন আমার ভাইকে এসব বলতে গেল? ভাইয়া ভাবী এখন আমার সম্পর্কে কি কি ভাবছে? ওকে আমি মজা দেখে ছাড়বো অভ্রনীল চৌধুরীকে ও চেনেনা।
- ঝরনা ঝাড়ি মেরে বলল আপনি রাখেন তো আপনার ফালতু ডায়লগ। প্রথম দিন থেকে শুনতেছি অভ্রনীল চৌধুরীরকে তো চেনে না অভ্রনীল চৌধুরীকে তো চেনে না। আপনার শুধু এ ডায়লগে আছে কিন্তু কাজের বেলায় কচু । আচ্ছা আপনি আমাকে একটা কথা বলুন তো । এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে ওই মিষ্টি শাকচুন্নি কে আপনার কিভাবে পছন্দ হলো?
- আসলে ও আমাকে মরিচের গুড়ার শরবত খাওয়াই ছিল না? তখন মনে হয়েছিল ও আমার মত দুষ্ট। তাই ওকে ভালো লেগেছে আর কি।
- আচ্ছা এখন যদি মিষ্টির চেয়ে সুন্দর একটা দুষ্টু মেয়ে আপনাকে প্রপোজ করে। তাহলে কি আপনি রাজি হবে?
- কি জানি, হলে হতে পারি।
- ও আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে শুনুন। খুব তুচ্ছ কারনে যে কারো প্রতি ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। কোন মেয়ের ভূবন ভুলানো হাসি দেখে এক মুহুর্তেই তাকে ভালো লেগে যেতে পারে। কিংবা রাস্তায় চলতে ফিরতে সুন্দরী কোন মেয়েকে এক পলক দেখেই যে কোন ছেলের হার্টবিট মিস হয়ে যেতে পারে। অথবা কোন ছেলে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে, কিংবা গান শুনিয়ে কোন মেয়েকে মুগ্ধ করে দিতে পারে। আর তাতে ছেলেটার প্রতি মেয়েটার এক ধরনের অনুভূতি তৈরি হয়। এই অনুভূতিগুলোকে আসলে ভালো লাগা বলে। ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা এত সহজে হয়না। একজন মানুষের জন্য ভালোবাসা তৈরী হয় খুব ধীরে ধীরে। চাইলেই যে কাউকে ভালোবাসা যায়না। চাইলেই যে কাউকে ভালোবাসি বলা যায়না। চাইলেই সব ছেড়ে ছুঁড়ে কেউ একজনের হাত ধরে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করেনা। চাইলেই কেউ একজনের জন্য পুরো পৃথিবীর বিপক্ষে চলে যাওয়া যায়না। সেই কেউ একজন টা খুব স্পেশাল একজন মানুষ হয়। যাকে শুধু ভালোবাসাই যায়। চোখ বন্ধ করে যার উপর নির্ভর করা যায়। যে অনুভূতি খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয় তা হারিয়েও যায় খুব দ্রুত। অনুভূতি হারিয়ে গেলে সে মানুষটাও কিছু না বলে চুপি চুপি আপনার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। আমার মনে হয় আপনার এটা ভালোবাসা না জাস্ট ভালোলাগা ছিল। আচ্ছা আপনি চোখ বন্ধ করুন তো।
- কেনো?
- আহা এত কথা বলেন কেন আপনাকে যেটা বলছি সেটা করুন।
আমি চোখ বন্ধ করতে ঝর্না বলল কি দেখতে পাচ্ছেন?
-আজব চোখ বন্ধ করলে কিছু দেখা যায় নাকি? সবকিছু অন্ধকার দেখতেছি
- আরে মন থেকে দেখার চেষ্টা করুন।
- মন থেকে সেটা আবার কিভাবে দেখে? না কোন কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না।
- আচ্ছা চোখ খুলুন এখন। আমি চোখ খুলতেই ঝর্না বলতে শুরু করল যেদিন চোখ বুঝলেই তাকে দেখতে পারবেন। যেদিন কেউ একজন আপনার নির্ঘুম রাতের কারন হবে। যেদিন চোখ বুঝলেই বারবার তার ছবি ভেসে উঠবে চোখে। সেদিন বুঝবেন আপনি তাকে ভালবাসেন। হঠাৎ করে একটা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ হয় ওটা আসলে ভালোবাসা না। ওটা শুধু ভাল লাগা।
- আমি শুধু হাঁ করে তার কথা শুনছিলাম। এটুক একটা পিচ্চি মেয়ে আমাকে ভালোলাগা আর ভালোবাসার পার্থক্য বোঝাচ্ছে। মেয়েটা পিচ্ছি হলে কি হবে কথা বলার স্টাইলটা খুব সুন্দর। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে।
- এমন হা করে তাকিয়ে না থেকে চলুন বাইরে ঘুরতে যাব। রাজশাহী শহর টা যে কত সুন্দর সেটা আপনাকে দেখাতে হবে না।
- আচ্ছা ঝর্না তুমি যে আমাকে এতগুলো কথা বললে এগুলা কোথায় পাইছো?
- ঝরনা মুচকি হেসে বলল আমি অনেক গল্প পড়ি তো সেগুলো থেকেই আপনাকে কিছু ঝেড়ে দিলাম।আচ্ছা আপনার ফোন নাম্বারটা দিন তো।
- কেন আমার ফোন নাম্বার দিয়ে কি করবে?
- আরে ভাই ফোন নাম্বার দিয়ে কি করে ফোন করবো। আপনি যদি কোথাও হারিয়ে যান তখন আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে না? ও হ্যাঁ আরেকটা কথা আমি কিন্তু মিসকল ছাড়া কল দিতে পারব না।সো যখনি দেখবে দুই-তিনটা মিসকল তখনই বুঝবেন আমি ফোন দিয়েছি। দয়া করে কল টা ব্যাক করবেন ।
- আচ্ছা তোমাদের পরিবারের সবাই কি ফকিন্নি নাকি? সবাই দেখি শুধু মিসকল দেয়?
- সবার কথা জানিনা তবে আমি একটু কিপটা তো টাকা খরচ করতে খুব কষ্ট লাগে। আমি যদি এক টাকা কাউকে দিই তাহলে মনে হয় আমার জানটা দিয়ে দিলাম।
- তাহলে তো তোমার হাসবেন্ড খুব লাকি হবে। এখনকার মেয়েরা তো হাজবেন্ডের টাকা খরচ করতে করতে হাজবেন্ড কে ফকির বানিয়ে ফেলে।
- আপনি আমার হাজব্যান্ড হবেন? করবেন আমাকে বিয়ে?
- হঠাৎ ঝর্নার এমন কথায় আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। ঝর্নার কথার পরিপেক্ষিতে কি উত্তর দিব ভাবছিলাম এমন সময় ঝর্না হেসে বলল ভয় পেয়েছেন? আমি তো মজা করছিলাম
- সেদিন আমি ঝর্না , বৃষ্টি ভাবির আরো কয়েকটা কাজিনরা সবাই মিলে ঘুরলাম রাজশাহী শহর। রাজশাহী শহর টা সত্যিই অনেক সুন্দর শহর। পরিষ্কার এবং গোছানো শহর। স্বর্ণা আর মিষ্টি আমাদের সঙ্গে শুধু আসেনি। আমরা পদ্মার পাড়ে যখন পৌছালাম তখন বিকাল হয়ে গেছে। সূর্য অনেকটা হেলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে।
নৌকায় চড়ে যখন ওপাশের চরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার নজর পড়লো আমার সামনে বসা এক এলোকেশী সুন্দরী রমণীর ওপর। পিচ্চি মেয়েটা যে এত সুন্দর আমি এর আগে কখনও খেয়াল করিনি। নৌকা চলছে দ্রুতগতিতে বাতাসে মেয়েটার চুলগুলো বারবার মুখের সামনে আসছিল। মেয়েটা বারবার চুলগুলো কানের পিছনে গোঁজার চেষ্টা করছিলো কিন্তু সে প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছিল। মেয়েটা যখন তার চুল ঠিক করতে ব্যস্ত তার ফাঁকে আমি সেই অপূর্ব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম। যখন সে দেখতে পেল আমি তাকে ক্যামেরাবন্দি করতেছি সে বাধা দিলো না বরং মুচকি হাসলো। কি মারাত্মক সুন্দর না সেই হাসিটা। একটা ছেলেকে ঘায়েল করার জন্য তার এই ভুবন ভুলানো হাসিটাই তো যথেষ্ট।
- বাসায় আসার পর ঝরনা আমরা সারাদিন কি করেছি কোথায় কোথায় ঘুরেছি এসব কিছু মিষ্টি সামনে এমনভাবে বলতে লাগল যেন সে শুনে একটু কষ্ট পায় কিন্তু মিষ্টির মধ্যেও কোন প্রভাব পরল বলে আমার মনে হলো না।
- রাত বারোটা ঝরনার কিছুতেই ঘুম আসছে না। এদিকে আর সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশের রুমে মিষ্টি আর স্বর্না শুধু জেগে আছে। ওদের রুমে এখনো লাইট জ্বলছে। ঝর্নার নীলকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। পরপর দুবার মিসকল দিল ঝর্না নীলের নাম্বারে
- আমি কল ব্যাক করতেই ঝর্ণা বললো কি করছেন একটু ছাদে আসেন তো মিষ্টি শাকচুন্নি খুব ভাব নিচ্ছে ওকে একটু মজা দেখাতে হবে।
- এত রাতে ছাদে আসবা কেউ যদি দেখে ফেলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে?
- আরে কিছু হবে না আর এখন সবাই ঘুমাচ্ছে। আপনি এত ভয় পান কেন? খুব তো বলেন অভ্রনীল চৌধুরীকে চেনে না তো এখন আপনার অভ্রনীল চৌধুরী কোথায় গেল?
- আচ্ছা আসতেছি তুমি এক মিনিট দাড়াও আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
- ঝরনা মুচকি হেসে বলল আচ্ছা আসেন তবে আমি দাঁড়াতে পারবো না পায়ে খুব ব্যাথা। ঝর্না রুম থেকে বেরোনোর আগে একজনকে উঠিয়ে তার কানে কানে কয়েকটা কথা বলে মুচকি হাসি দিলো।
- আমি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ঝর্না। সে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি ওর দিকে না তাকিয়ে বুঝতে পারছি সেটা।
ঝর্ণা প্রথমে কথা শুরু করলো আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল আজকের চাঁদ টা খুব সুন্দর তাই না?
- আমি আকাশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ওর মুখের দিকে তাকালাম। চাঁদের আলোয় ঝর্নার মুখটা ভীষণ মায়াবী দেখাচ্ছে। আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগল আচ্ছা চাঁদের আলোয় কি সব মেয়েকেই ঝর্নার মত মায়াবী দেখায়?
- কি হলো চুপ করে আছেন যে?
- হ্যাঁ অনেক সুন্দর কিন্তু তার চেয়েও বেশি সুন্দর একজন আছে এখানে।
ঝর্ণা বললো নিজের প্রশংসা নিজে করতে আপনার লজ্জা লাগে না? মানছি আপনি সুন্দর তাই বলে চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর নন।
- আমি তো আমার কথা বলিনি আমার পাশে যে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে তার কথা বলছি।
- ঝর্না অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ওমা তাই বুঝি!
- হ্যাঁ আমি বাচ্চা মেয়ে ভেবে এতদিন তোমার দিকে সেইভাবে তাকাইনি । এই পিচ্চি তুমি কোন ক্লাসে পড় গোঁ?
- ঝরনা নাক ফুলিয়ে বলল এই মিস্টার! আমি পিচ্চি না বুঝলেন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমি অনেক বড়।
- হায় হায় বলে কী ! আমি তো ভেবেছিলাম ক্লাস ফাইভে পড়ো বলেই হিহি করে হাসলাম।
- ঝর্না মুখ বাঁকিয়ে বলল আর আমি আপনাকে দেখে কি ভাবছি জানেন? আমি ভাবছি আপনি 40 বছরের বুড়া।
- হঠাৎ ঝর্নার মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। ঝরনা সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত ধরে দোলনায় গিয়ে বসলো। আমাকে বলল হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখছেন কি তাড়াতাড়ি আমার কোলে শুয়ে পড়ুন।
- ঝরনার কথা শুনে আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম। তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
- বেশি কথা বলেন না তো আপনাকে যেটা বলছি সেটা করুন। ওই মিষ্টি শাকচুন্নি আসতেছে জলদি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ুন। আমার কোলে শুয়ে একদম রোমান্টিক রোমান্টিক কথাবার্তা বলবেন। যাতে ওই শাকচুন্নি দেখে মনে করে যে আমাদের মধ্যে কিছু একটা চলছে।
- আমার কি জানি হলো আমিও শুয়ে পরলাম। দোলনাটা বেশ বড় তিন-চারজন যাবে। আমি ঝর্ণার কোলে মাথা রাখতে সে আমার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল। কেমন আনইজি ফিল করছিলাম ঝরনা ও মনে হয় আনইজি ফিল করছে। কেমন কচর মচর করতেছে আমি বললাম তুমি কি আনকম্ফোর্টেবল ফিল করছো তাহলে আমি উঠি?
ঝর্না আমার চুল শক্ত করে ধরে বলবো না আসলে এই প্রথম কেউ আমার কোলে মাথা রেখেছে তো তাই কেমন জানি মনে হচ্ছে।
- ও আচ্ছা আমি কতজনের কোলে মাথা রেখেছি জানো?
- প্লীজ স্টপ আমি শুনতে চাই না।
- হা হা শুধু আমার মায়ের কোলে মাথা রেখে ছিলাম। আর সেকেন্ড তোমার কোলে মাথা রাখলাম বেশ ভালো লাগছে। শখ ছিল ভাইয়ার বাসর রাতে ভাবীর কোলে মাথা রাখবো কিন্তু ভাবি তো ব্যাঙ দেখে অজ্ঞান হয়ে গেল।
- ইস কি লুচু আপনি জোরে চুল টান দিয়ে বলল ঝর্না
- এই আস্তে আস্তে লাগছে তো। ভাবতেছি এমন একটা দোলনা আমাদের বাসার ছাদে বসাবো। বিয়ের পরে বউয়ের কোলে এরকম মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস করব কেমন হবে বল তো? বেশ ভালো হবে তাই না?
- আমি কিভাবে জানবো আমি কি আপনার বউ নাকি? তবে মেয়েদের অনেক শখ থাকে বিয়ের পরে সেগুলোর মধ্যে একটা এইরকম নির্জন ছাদে স্বামীর সঙ্গে চন্দ্রবিলাস করা।
- আচ্ছা ঝরনা তোমার বাবা মাকে তো দেখলাম না। উনার আসেননি বিয়েতে?
- আমার মা নেই সৎ মা মামার বাসায় আসে না। আর বাবা অনেক ব্যস্ত মানুষ। বিয়ের দিন শুধু এসেছিল আপনি হয়তো খেয়াল করেননি।
- হয়তে পারে, আচ্ছা তোমার বাবা কি করে?
- আমার বাবা এসপি ।
- হায় হায় বল কি পুলিশের এসপি? আমি যে তোমার কোলে শুয়ে এখানে তোমার সঙ্গে গল্প করছি এটা যদি জানতে পারে আমাকে আবার জেলে পুরে দিবে না তো?
- না না আপনাকে কেন জেলে পুরে দিবে। আমার বাবা কি আপনার বাবার মত হিটলার নাকি?
- এই এই খবরদার আমার বাবাকে হিটলার বলবা না। আমার বাবা খুব ভালো।
- তাই বুঝি? বলেই ঝরনা আমাকে কুতকুতি দিতে লাগলো।
- এই কি করছো? আমার ভীষণ কুতকুতি আছে । এখন জোরে জোরে হেসে দিবো তখন দেখবা নিচ থেকে লোকজন চলে আসবে।
- ঝরনা ওর চুলগুলো আমার মুখের উপর ফেলে বলল। আচ্ছা আপনার নাম নীল কে রেখেছে? আপনার নাম রাখা উচিত ছিল লাল কারণ আপনি যখন রেগে যান আপনার মুখ পুরোটা একদম লাল টকটকে হয়ে যায়। অভ্র লাল চৌধুরী নামটা কিন্তু জোশ। এই নাম টা হলেই বেস ভালো লাগতো।নাম টা বেশ ফানি হত হাহাহা। আপনাকে না একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
ঝর্নার কথা শুনে আমি হকচকিয়ে উঠলাম এই মেয়ে বলে কি!
তখনই দেখলাম মিষ্টি তালি বাজাতে বাজাতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। বাহ এই ছিল আপনার ভালোবাসা। রিজেক্ট করতে না করতে আরেকজনকে পটিয়ে ফেলেছেন? আর এখন প্রেমের নামে ওর সাথে উল্টাপাল্টা কাজ করতেছেন? ছিঃ আপনার লজ্জা করে না? আপনাকে কি আমি সাধে লুচ্চা বলি।
- ঝর্ণা বললো কেন তোমার সমস্যা হচ্ছে? ভাইয়া তোমাকে প্রপোজ করছে তুমি রিজেক্ট করে দিয়েছ। আমাকে করছে আমি একসেপ্ট করছি এখন তোমার তো সমস্যা হওয়ার কথা না? আর এখানে কোন উল্টাপাল্টা কাজ হচ্ছে না।
- এখানে কি হচ্ছে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।
- ঝর্না আমার বাহু চেপে ধরে বলল এই তুমি কি পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছো আশেপাশে মনে হয় কোন কিছু জ্বলছে। আচ্ছা আপু বাই এনি চান্স তুমি কি আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে জেলাস ফিল করছো?
- মিষ্টি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল আমি কেন জেলাস ফিল করতে যাব? দেখ ঝর্না তুই যদি ভেবে থাকিস তুই আপুর দেবরের সঙ্গে প্রেম করে আমাকে কষ্ট দিবে তাহলে কিন্তু তুই নিজের মস্ত বড় ক্ষতি করবি। তোর সমস্যা আমার সঙ্গে তাহলে আমাদের মধ্যে এই লোকটাকে কেন আনছিস। তুই কি একবার ভেবে দেখেছিস? আমাকে শিক্ষা দিতে যেয়ে তুই নিজেই নিজের মস্ত বড় ক্ষতি করছিস।
- আমার ক্ষতি আমি বুঝবো আর আমি কাউকে শিক্ষা দিচ্ছি না আমার সত্যিই উনাকে অনেক ভালো লাগছে। আমি উনাকে ভালোবাসি। এখন তুমি দয়া করে এখান থেকে যাও আমাদের একটু একা সময় কাটাতে দাও।
মিষ্টি মুখ বিষ করে দ্রুত নিচে নেমে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল তোদের পস্তাতে হবে।
মিষ্টি নেমে যেতে ঝর্না মুখ টিপে হাসতে শুরু করল।
- আমি ঝর্না দিকে তাকিয়ে বললাম বাহ বেশ ভালোই তো অভিনয় করতে পারো? তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ এত সুন্দর অভিনয় কই থেকে শিখলে?
- ঝর্না হাসতে হাসতে বলল সবি স্টারের কামাল।
আমি ছাদের রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাতে ঝর্ণা বললো ছিঃ আপনি আবার সিগারেট খাচ্ছেন। আপনি সিগারেট ছাড়তে পারেন না?
- না খেলে একটু সমস্যা হয়?
- আচ্ছা আপনি দিনে কটা করে সিগারেট খান?
- সর্বনিম্ন একটা
- একটা না খেলে কি হয়? একেবারের মত সিগারেট ছেড়ে দিবেন এই-সিগারেট জিনিসটা আমার মোটেই পছন্দ না। নিজের ক্ষতি তো করছেনই সঙ্গে আশেপাশের মানুষের ক্ষতি করছেন।
- পাগল নাকি? সকালে টয়লেটে বসে আমি যদি সিগারেট না খায় তাহলে আমার হাগাই বেরোবে না।
- ছিঃ ছিঃ ছিঃ অসভ্য লোক একটা কথার কি শ্রী? আপনি এমন জঘন্য কথা বলেন কিভাবে? ওয়াক থু এসব অশ্লীল কথাবার্তা বলতে আপনার লজ্জা করেনা?
আচ্ছা আপনার মা কিছু বলে না আপনি যে সিগারেট খান?
- না মা জানলে তো বলবে আমি যে সিগারেট খাই এটা কেউ জানে। মা জানলে তো আমাকে ঝাড়ু পেটা করে বাসা থেকে বের করে দিত
- ঝর্না উদাস কন্ঠে বলল, আপনার মা আপনাকে খুব ভালবাসে তাই না?
- আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম হুম খুব ভালো বাসে
- ইস আমার যদি মা থাকতো আমাকেও খুব ভালবাসতে তাই না? আমার সৎ মা আমাদের দু বোন কে একটুও ভালোবাসে না।
- আমি ঝরনা দিকে তাকাতেই দেখলাম সে কাঁদছে।
আমি সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখে পানি মুছে দিতেই ঝর্না আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
আমার সমস্ত শরীরের মধ্যেও যেন বিদ্যুত খেলে গেলো। আমি ঝর্না কে শান্তনা দিচ্ছিলাম হঠাৎ দেখলাম ভাইয়া ভাবি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
- ভাইয়া রাগে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল নীল তোর এসব ছেসরামি করতে লজ্জা করে না? মিষ্টি তোকে পাত্তা দেয়নি এখন তুই আবার ঝর্নার সঙ্গে লেগেছিস বলেই আমার গালে একটা ঠাস করে থাপ্পর মারলো।
ভাইয়া এর আগে কখনোই আমার গায়ে হাত উঠাইনি। আমার গাল বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।
আমি ঝর্নার দিকে তাকালাম ভাইয়েদের এমন হঠাৎ আগমনে সে ও কিছুটা ঘাবড়ে গেছে। ভয়ে সে থর থর করে কাঁপছে।
ভাইয়া আমার গালে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলল তুই কি ভুলে গেছিস এটা আমার শশুর বাড়ি। তোর না হয় মান সম্মান নাই কিন্তু আমার তো মান সম্মান আছে তাই না? বিয়ের মধ্যে যা করার করেছিস কিন্তু এখন যা করছিস এগুলো কি ঠিক? তোকে আমার ছোট ভাই বলতে ঘৃণা করছে। আমার ছোট ভাই কখনো এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না । বাবা এসব শুনলে কতটা কষ্ট হবে জানিস? বলে আরেকটা থাপ্পড় মেরেল।
ঝর্না ভাইয়াকে বলার চেষ্টা করছে কিন্তু ভাইয়া ঝর্নার কোন কথাই শুনছে না।
এই মুহূর্তে তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা। তোর এই মুখ নিয়ে আমার সামনে আর কখনো আসবে না।
- আমি মিষ্টির দিকে তাকালাম সে ভাইয়া ভাবির পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। সে যে ভীষণ খুশি হয়েছে সেটা তার হাসি দেখে বোঝা যাচ্ছে।
- আমি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলাম সিঁড়ির দিকে। একবার পিছন ফিরে দেখলাম ঝর্নার দিকে । সে বৃষ্টি ভাবীর হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর বলছে আপু নীল ভাইয়ের কোন দোষ নেই তোমরা যেমনটা ভাবছ এখানে সেরকম কিছুই হয়নি। কিন্তু কেউ তার কথা শুনতে রাজি না। কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম পা আর চলছে না। ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি আর কখনোই এই মুখ আমি ভাইয়াকে দেখাবো না। ফোন থেকে সিম কার্ড খুলে ছুড়ে মারলাম ড্রেনে।
দুই বছর পর কলিং বেল দিতেই মা দরজা খুলে দিলো। মা যে দু বছর পর আমাকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে সেটা মার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম মা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
- কি ইংল্যান্ডের গাইকে বিয়ে করে নিয়ে আসছিস...?
-না মা অস্ট্রেলিয়ান গরু ...
- হারামজাদা তুই এখনি বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে বলেই মা আমাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো.....
চলবে...


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code