Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ১২

আঙ্কেল দেখলাম আমার ধারনা কে ভুল প্রমাণিত করে। জড়িয়ে ধরলেন আমাকে, এরপর হা হা করে হাসতে হাসতে বললেন বিয়ে করবে এটা তো আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো কথা কিন্তু সেটা বলতে এত ভয় পাওয়ার কি আছে?
- ঝর্না লাফিয়ে উঠে বলল বাবা তুমি রাজি?
- হ্যাঁ আমার মেয়ে একজনকে পছন্দ করে । ছেলেটা ও মাশাল্লাহ খুব ভালো তার সঙ্গে বিয়ে দিতে আমার সমস্যা কোথায়? আর তোরা যে দুজন দুজনকে ভালবাসিস সে কথা আশরাফ ভাই আমাকে আগেই বলেছেন।
- উপস্থিত সবাই অবাক চোখে বাবার দিকে তাকালো। আমি বাবার দিকে তাকাতেই বাবা মুচকি মুচকি হাসলো।
- মা বলল তোমরা বাবা ছেলে মিলে তলে তলে এত কিছু করছিলে আর আমি কিছুই জানিনা? আজ বাসায় চলো তোমাদের দুজনকে মজা বুঝাবো।
- ঝর্ণার বাবা মুচকি হেসে বললেন আপা আপনি রাগ করবেন না। আসলে এটা আমাদের প্ল্যান ছিল আপনার ছেলে দেশে ফেরার আগে কাউকে কিছু না জানানো।
- আমি ভুরু কুঁচকে তাকালাম আঙ্কেলের দিকে। ঝর্না তার বাবাকে বললো মানে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা?
- অভ্রনীল তো দেশে আসতে চাইছিল না। আরশাফ ভাই যখন তোদের বিষয়ে আমাকে বলল। তখন আমরা দুইজন মিলে প্ল্যান করলাম কিভাবে ওকে দেশে ফেরানো যায়। আশরাফ ভাই তখন আমাকে বলেছিল আমি যেন তোকে বিয়ের জন্য চাপ দিন। তাহলে তুই অভ্রনীলকে বিয়ের কথা বলে ওকে দেশে আসার জন্য চাপ দিবি। আর সে যদি তোকে সত্যিই ভালোবাসে তাহলে অবশ্যই সে দেশে আসবেই। আর আজ আমাদের প্লান সাকসেসফুল বলে আঙ্কেল আর বাবা হা হা করে হেসে উঠলো।
আমি বোকার মত তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে এইভাবে বোকা বানানো হইলো! তবে একদিক থেকে লাভ আমারই হয়েছে। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই যাকে ভালবাসি তাকে বিয়ে করতে পারব।
আমি তো ভেবেছিলাম ঝর্ণার বাবাকে রাজি করানোর জন্য অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে। এখনতো দেখছি সবাই আগে থেকেই রাজি।
- আলহামদুলিল্লাহ ভাই আপনারা অনেক ভালো কাজ করেছেন ওই শয়তানটা তো দেশে আসতেই চাইছিল না। এখন দুইজনের কান ধরে বিয়ে পরিয়ে দিন।( মা বললেন)
- ঝর্ণার বাবা বলল বিয়ে তো অবশ্যই দিব কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে ..?
- আমি মা বাবা সবাই অবাক হয়ে আঙ্কেলের দিকে তাকান। মা বলল কি শর্ত ভাই?
- অভ্রনীলকে আর দেশ ছেড়ে যাওয়া যাবেনা। বউ থাকবে এক জায়গায় স্বামী থাকবে আরেক জায়গায় এসব আমার পছন্দ না।
- মা বলল আলহামদুলিল্লাহ ভাই আমি আপনার শর্তে রাজি আছি
- আঙ্কেল আমার দিকে চাইলে আমি বললাম আঙ্কেল আমি যদি ঝর্নাকে আমার সঙ্গে করে নিয়ে যায় তাহলে তো আপনার সমস্যা নেই তাই না?
- আঙ্কেল বলল না আমি আমার মা মরা মেয়েকে আমার থেকে এত দূরে নিয়ে যেতে দেব না। ঝরনাকে বিয়ে করে তোমাকে দেশেই থাকতে হবে।
- কিন্তু আংকেল ওখানে তো আমি জব করি বিজনেস আছে। আমাকে তো ওখানে যেতেই হবে।
- তাতে কি এখানে জব খুজবে। যদি জব না পাও তাহলে তোমার বাবার বিজনেস সামলাবে। সেটাও যদি না পারো গ্রামে আমার অনেক জমিজমা আছে সেগুলো দেখাশোনা করবে।
- বাবাকে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। এসবই বাবার প্লান সেটা তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।
ঝর্ণার বাবা বলল এত চিন্তার কি আছে। ওখানে হয়তো তুমি বিলাসিতার জীবন পাবে অনেক অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকার যে সুখ সেটা কিন্তু পাবেনা। তাই এত চিন্তা বাদ দিয়ে আমার শর্তে রাজি হয়েছ।
- আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই ঝর্না কেক কাটার ছুরি হাতে আমার দিকে এগিয়ে এসে কানে কানে বলল। চুপ করে আছেন কেন বলে দিন যে আপনি বাবা শর্তে রাজি। আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান। যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলেছেন তো এই ছুড়ি একদম আপনার পেটে ঢুকিয়ে দেবো। আমাকে তো চেনেন না আমি অভ্রনীল চৌধুরী হবু স্ত্রী বলেই ভেংচি কাটলো।
- আমি বললাম আংকেল আমি আপনার শর্তে রাজি আছি। আপনারা যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি এখনি ওকে রিং পরিয়ে দিতে চাই।
- আজি এনগেজমেন্ট সেরে ফেলতে চাও। এটাতো আরো ভালো খবর।
আমার কথা শুনে সবাই অনেক খুশি হলেও একজন মুখ গোমরা করে দাঁড়িয়ে রইলো।
বাবা আমি এখন এনগেজমেন্ট করবো না। হুট করে ঝর্নার এমন কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল।
- মা বলল কেন মা ওই ফাজিল টা কি তোমাকে কিছু বলেছে?
- ঝর্না বাচ্চাদের মতো করে বলল না আন্টি আপনার ছেলে তো এতদিন ইংল্যান্ডে ছিল। না আমি ওনার সঙ্গে রিকশায় চড়ে ঘুরতে পেরেছি। না আমি ওনার হাত ধরে হাটতে পেরেছি। না আমরা পার্কে বসে ফুচকা খেয়েছি না আমি রেস্টুরেন্টে গিয়ে উনার পকেট খালি করতে পেরেছি। আমিতো একটু ভালোমতো প্রেম করতে পারিনি। তাই আমি আগে ভালো মতো প্রেম করবো তারপর বিয়ে।
- সবাই ঝর্নার কথা শুনে হেসে ওঠে। ঝর্নার বাবা বলল এটা কেমন বেহায়া পনা ঝর্না?
- মা বলল ভাই ওকে কিছু বলেন না ছোট মানুষ ।
ঝর্নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মা বলল পাগলি মেয়ে রে বিয়ের পর যত ইচ্ছা তত প্রেম করিস কেউ বারন করবে না।
- ঝর্না মন খারাপ করে বললো আমি কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম আমাদের ভালোবাসা অনেক বাধা বিপত্তি আসবে। প্রথমে কেউ আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেই না। এরপর আমরা দুজন পালিয়ে বিয়ে করবো। এরপর নীল ভাইয়া অনেক স্ট্রাগল করবে। আমরা একটা ভাঙ্গা বাসায় থাকব যেখানে বৃষ্টি হলে রুমের মধ্যে পানি পরবে। উনি সারারাত জেগে বৃষ্টির পানি আটকানোর চেষ্টা করবেন। আমার ঘুম যেন না ভাঙ্গে এইজন্য আমার মুখের উপর ছাতা ধরে সারারাত বসে থাকবে, আমি শান্তিতে ঘুমাব। এক বছর আমরা অনেক অনেক অনেক কষ্ট করবো। এক বছর পর আমার মতো একটা গুলুমুলু বাবু কোলে নিয়ে বাসায় আসব। আমার কোলে পিচ্চি বাবুকে দেখে আপনাদের ভীষণ মায়া হবে। সবাই নীল ভাইয়াকে ভীষণ বকবে। শ্বাশুড়ি মা বলবে বিয়ে করেছিস ভালো কথা এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেওয়ার কি দরকার ছিল? মেয়েটা তো নিজে একটা বাচ্চা ও কিভাবে আরেকটা বাচ্চা সামলাবে? এরপর আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বললে আমার লক্ষ্মী মেয়েটা আজ থেকে তুই আমার মেয়ে। এই অভ্র লাল চৌধুরী শোন খবরদার আমার মেয়ের আশেপাশে আসার চেষ্টা করবি না। তোকে যদি আমার মেয়ের পেছনে ঘুরঘুর করতে দেখি তাহলে তোর হাত পা ভেঙ্গে দেবো। এর পর আমি বলব ও গোঁ মা উনাকে আমার কাছে থেকে দূরে সরাবেন না। উনিত আমার বাবুর বাবা ওনাকে ছাড়া তো আমি থাকতে পারবো না। মা তখন বলবে যা তোকে মাফ করে দিলাম শুধুমাত্র আমার মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে। এরপর সবাই আমাদের মেনে নিবে।
ঝর্না ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
কিন্তু এমন তো কিছুই হলো না আপনারা এতো সহজেই সবাই মেনে নিলেন কেন? আপনারা সবাই এত ভালো কেন সিনেমার মতো একটু ভিলেন হতে পারলেন না? শাশুড়ি আম্মা আপনি সিরিয়ালের মতো একটু ডাইনি হতে পারলেন না?
- ঝর্নার কথা শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। এই মেয়েকে আমি কতবার করে বলেছি টিভি সিরিয়াল কম করে দেখতে কিন্তু সে কিছুতেই আমার কথা শোনে না।
- মা হাসতে হাসতে বলল শোন পাগলি মেয়ের কথা। তুই ভাঙ্গা টিনের ঘর থাকতে পারবি? আর আমি ডাইনি হলে তুই খুশি হতি বুঝি?
- আঙ্কেল বললেন বাবা তুমি ঐ পাগলীর কথা শুনে না তো তুমি রিং পরিয়ে দাও।
রিং পরিয়ে দেওয়ার সময় হলো আরেক ঝামেলা। রিং কিছুতেই ঝরনার আঙ্গুলে ঢোকে না।
- ঝর্না এক সময় রেগে গিয়ে বলল কি রিং নিয়ে আসছেন যেটা আমার আঙুলে ঢুকছে না?
- আমার কি দোষ আমি তো তোমার আঙ্গুলের মাপ চাইছি তুমি তো পন্ডিতি করে দাও নাই। আর আমি কি জানতাম না কি দু বছরে তুমি এতটা মুটকি হয়ে যাবা।
- আপনি আবার আমাকে মুটকি বলছেন সবাই যাক এরপর আপনার খবর আছে । শেষমেষ ঝরনার কনিষ্ঠ আঙ্গুলে রিং পরিয়ে দিলাম
- ঝর্না আমাকে একটা রিং পরিয়ে দিল।
- হঠাৎ ভাবী বলল ঝরনা ডায়মন্ডের নেকলেস কবে কিনেছিস ? বাহ তোকে তো অনেক সুন্দর মানিয়েছে।
- সবাই ঝর্না দিকে তাকানো । স্বর্ণা বলল নেকলেসটা তো দেখে মনে হচ্ছে দামি এতো টাকা তুই পেলি কোথায়?
- কেন তোমার কি মনে হয় আমি তোমার ব্যাংক ডাকাতি দিয়ে এই ডায়মন্ডের নেকলেস কিনেছি? তোমার ব্যাংকে এই নেকলেস কেনার মত টাকা নাই বুঝলে। আর এটা আমার বর গিফট করেছে। দেখো কত সুন্দর দেখতে । ভালোমতো দেখে রাখ তোমার বরকে বলবা এমন দেখে যেন একটা তোমাকেও গিফট করে।
- ভাবী বলল বাহ দেবরজি বিয়ে না করেই বউকে এত দামী দামী গিফট দেওয়া হচ্ছে। আর আমার মতো সুন্দরী ভাবীর দিকে কোনো নজরই নেই তোমার।
- আমি তাচ্ছিল্যের স্বরে বললাম আমি যাকে তাকে গিফট দিই না।
- মুহূর্তেই ভাবির মুখের হাসি উড়ে গেল।
কেক কাটার পর্ব শেষ করে ঝরনা আমার হাত ধরে বলল আপনারা সবাই গল্প করুন আমি উনাকে আমার রুম টা দেখিয়ে নিয়ে আসি।
বাবা আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল দেখিস আজি আবার বাসর সেরে ফেলিস না যেন।
আমি আর ঝর্ণা ওর রুমে ঢুকতেই দেখলাম মিষ্টি আমাদের পেছনে পেছনে রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
- ঝর্না মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্যাপার তুমি এখানে কি করো? এরপর আমার আর ওর হাতের রিং দেখিয়ে বলল দেখো কত সুন্দর মানাইছে । আচ্ছা বলতো আমাদের দুইজনকে পাশাপাশি কেমন লাগছে?
আচ্ছা আপু আমাদের দুজনকে পাশাপাশি দেখে কি তোমার কষ্ট হচ্ছে? খুব আফসোস হচ্ছে তাই না এত সুন্দর একটা ছেলের প্রস্তাব তুমি দুই বছর আগে ঠুকরিয়ে ছিলে। কি যেনো বলেছিলে ওহে লুচ্চা। আমরা এখন লুচ্চামি করব দেখবে? এই সোনা একটা কিস করো তো।
মিষ্টি আর দাঁড়ালো না দ্রুতপায়ে রুমের সামনে থেকে চলে গেল। যাওয়ার সময় আমি খেয়াল করলাম ওর দু'চোখ পানিতে ছলছল করছিল।
- শাকচুন্নি একটা আসছে নজর দিতে।
- ঝর্না তুমি ওর সাথে এরকম ব্যবহার না করলেও কি হতো না?
- তো কি করব ওকে আদর আপ্যায়ন করে মাথায় উঠিয়ে রাখবো। আপনি জানেন ওর জন্য আপু আমার সঙ্গে দুই বছর ধরে কথা বলেন। ওই শাকচুন্নির জন্য আপনি আপনার বড় ভাইয়ের হাতে মার খাইছেন। আরো কত কিছু বলতাম শুধু ও মানসিক অবস্থা এখন ভালো না এইজন্য বেশি কিছু বললাম না।
- আচ্ছা ঝর্না মিষ্টি তোমাদের বাসায় কি করছে? ওকি এখন তোমাদের বাসায় থাকে?
- না ওই শাকচুন্নি এখন আপনাদের বাসায় থাকে। বাবা আপনাদের বাসার সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে এইজন্য আমাদের বাসায় এসেছে।
- কেন ওদের বাসায় কি পদ্মার জলে ডুবে গিয়েছে যে আমাদের বাসায় থাকতে হবে ?
- সে অনেক কাহিনী আপনাকে বলা যাবে না।
- আচ্ছা না বলা কিন্তু এটা তো বলবা ও শুকিয়ে বাঁশ পাতার মতো হয়ে গেল কিভাবে?
- ঝরনা চোখ পাকিয়ে বলল, আচ্ছা আপনার মতলব কি বলেন তো? খুব মিষ্টি মিষ্টি করছেন? ও বাঁশপাতা হোক না তালপাতা হোক সেটা তো আপনার দেখার বিষয় না? নাকি ওকে দেখে পুরনো ভালোবাসা জেগে উঠছে?
- তুমি কি যে বলোনা । আমি জাস্ট এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল বেশ বড়সড়ই ছ্যাকা খেয়েছে।
- ওর সঙ্গে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে। যার কারনে আজ ওর এই অবস্থা। নিজের রূপ নিয়ে খুব অহংকার করত আজ সেই রুপ দেখানোর মত মুখ নেই ওর।
- মানে কি হয়েছে ওর সাথে?
- ওর একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। একসময় ছেলেটা সঙ্গে ওর গভীর সম্পর্ক হয়। ওই শয়তান ছেলেটা সেটা ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যায়। এখনকার মানুষরা খুব খারাপ বলেন? অন্যের মান সম্মান নিয়ে খেলা করতে তাদেরই কোনো কষ্ট হয়না। এক শয়তান ভিডিও ছাড়ে আর অন্য শয়তানগুলো সেই ভিডিওটা দেখে এবং শেয়ার করে যেন আরো সবাই দেখতে পারে। যেন ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যায়। কেন রে তোদের কি মনে হয় না ওই মেয়েটার মান সম্মান আছে তার একটা পরিবার আছে তাদেরও মান সম্মান আছে। ওই মেয়ে জায়গায় তোর বোনের যদি এরকম একটা ভিডিও কেউ ফেসবুকে ছেঢড়ে দিও তাহলে কি তুই সেটা এভাবে শেয়ার দিতে পারতি? পারতি তোর বোনের মান সম্মান তোর পরিবারের মান-সম্মান এভাবে ডুবিয়ে দিতে? ঝর্নার কন্ঠ জড়িয়ে আসছে। আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম সে কাঁদছে। একটু আগেই এই ঝর্ণায় মিষ্টিকে কথা শুনেছিল আর এখন তার জন্য কাঁদছে। মেয়েদের বোঝা সত্যিই কঠিন।
- জানেন মিষ্টি আপু ওই শয়তান ছেলে টার সঙ্গে যেতেই চাইনি। ওই শয়তান ছেলেটা ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করাবে বলে নিয়ে গিয়েছিল ওদের বাসায়। কিন্তু বাসায় কেউ ছিল না। ওই শয়তানটা মিষ্টি আপুকে অজ্ঞান করে নোংরা কাজগুলো করেছে। এরপর ওই ভিডিওটা দেখে মিষ্টি কে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। সে আবারও ফিজিক্যাল রিলেশন করার জন্য মিষ্টি আপুকে চাপ দেয় কিন্তু মিষ্টি আপু রাজি না হলে সে ফেসবুকে ভিডিও ছেড়ে দেয় বলেই ঝর্না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল।
আমি ঝর্না কে আমার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলাম। শান্ত হও ঝর্না
আচ্ছা এই পৃথিবীর মানুষ গুলো এত খারাপ কেন? জানেন এদের মত অনেক ছেলে আছে যারা মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে ট্যাপে ফেলে এধরনের অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করে। কেউ কেউ আবার ভালবাসার দোহাই দেয়ি এসব করে। ফিজিক্যাল রিলেশন না করলে সম্পর্ক রাখবে না এরকম ধামকি ও দেয় অনেকে। আর একবার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়ে গেলে বিভিন্নভাবে হ্যারাস করতে শুরু করে। এরপর যখন সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তখন ছবি বা ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। আর আমাদের মত সাধারন জনগন তারা সেই ভিডিও বা ছবিকে ভাইরাল করে মজা নেই। তাদের একমাত্র কাজ হলো মজা নেওয়া। তারা একবারও ভাবে না যে, এই একটা ভিডিও একটা মেয়ের সুন্দর জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই একটা ভিডিও একটা ফ্যামিলি নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তারা একবারও ভাবে না তাদের লাখ লাখ শেয়ারের ফলে একটা মেয়ে চিরদিনের জন্য এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারে। " তারা একবারও ভাবে না ওই মেয়ের আত্মহত্যা করার জন্য তাদের কেউ হিসাবের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে একদিন"
আচ্ছা আপনি বলেন এখানে তো মিষ্টির কোন দোষ ছিলনা। তাহলে কেন সমাজের লোকজন তাকে ..শ্যা খেতাব দিলো? কেন সমাজ তাকে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী হতে বাধ্য করলো?
আমি ঝরনা চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম, এই সমাজ কখনো ছেলের দোষ খুঁজে না ঝর্না এই সমাজ সব সময় বাঁকা চোখে দেখে মেয়েদেরকে। মেয়েদের দোষ খুঁজে বেড়ানো এই সমাজের একমাত্র কাজ। মেয়েরা দোষ না করলেও এই সমাজের চোখে তারাই দোষী
- আচ্ছা আপনি যদি দেশে থাকতেন তাহলে আপনিও কি আমার সাথে এরকম করতেন? আমার না এখন ছেলেদের দেখলে ভীষণ ভয় করে।
আমি কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই পাশের রুম থেকে স্বর্ণার চিৎকার ভেসে এলো। বাবা বাবা মিষ্টি গলায় ফাঁস দিয়েছে....
চলবে ...



 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code