Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ১১, লেখক বর্ষা রায়

 

আফজালের মৃত্যুর আর ডেইজিকে খুঁজে না পাওয়ার খবর শুনে অনামিকা যেনো থমকে গেলো। তার যেনো মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো। ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো। ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। ফোন পড়ার আওয়াজে রাশ রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে আসে। অনামিকাকে এমন পুতুলের ন্যায় দেখে রাশ বলে, মা কি হয়েছে তোমার? ফোনটা ফেলে দিলে কেনো।"কথা বলতে বলতে হাঁটু গেড়ে বসে।
--অনামিকা রাশের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে বলে, তোর বাবা আর বেঁচে নেই রে। ডেইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো।"
--সেই মুহুর্তে কলিং বেল বাজার শব্দ ভেসে আসে। রাশ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সামনেই তিনটে মানুষ হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাশের এমন মলিনতা ভরা মুখ খানা দেখে হাসি যেনো হাওয়ায় বিলিন হয়ে গেলো। রাশের চোখ দুটো ছলছল করছে।
জোয়ান পরিকে কোল থেকে নামিয়ে রাশকে বলে, কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো?
--রাশ কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, বাবা আর বেঁচে নেই। ডেইজিকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"
--জোয়ান দু'পা পিছিয়ে যায়। ভিতরে গিয়ে অনামিকার কাছে বসে বলে, মা।
"অনামিকা জোয়ানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।" অনামিকাকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না।"
--রাশ নীধিকে রুম নিয়ে যায়। নীধির নিজেকে অভাগী মনে হচ্ছে। শ্বশুড় বাড়িতে পা দিতে না দিতে শ্বশুড়ের মৃত্যু।"
--জোয়ান সবাইকে নিয়ে আফজালের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। আফজালকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবাই ভিতরে আসে, আগুন বসে আছে এক কোণায়।"
--পরি দৌড়ে গিয়ে আগুনের কোলে উঠে। " বাবা এই দেখ আমি এসেছি।" আগুন পরিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।"
--আলেয়া এসে অনামিকা কে কর্কশ গলায় বলে, কেনো এসেছো এখানে?" যে মানুষটা মারা গিয়েছে সেই মানুষটাকে। এর আগে তো কেউ দেখতে আসো নি। ওই মানুষটাকে কত কথা শুনিয়ে দিয়েছো৷ নেকা কান্না কেউ করবে না এখানে। এই মুহুর্তে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।"
--রাশ সামনে এগিয়ে এসে বলে, ভদ্র ভাবে কথা বলেন। আপনার এই এরকম কথা শোনার জন্য আসি নি। আর কি বললেন এতো দিন দেখতে আসি নি কেনো?
কারণ আপনার মতো মহিলা যেখানে আছে সেই বাড়িতে পরিবার টা আর পরিবার থাকে নি। আপনার জন্য মাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে গেছি। আপনাদের এতো এতো সম্পত্তির লোভ আমাদের নেই যে ভাগ চাইতে আসবো।
--দেখলি আগুন আমাকে কিভাবে অপমান করছে। আর এই মেয়েটাই বা কে তোকে বাবা বলছে কেনো?
--ও আমার মেয়ে।"
--তোর মেয়ে মানে?
--হ্যাঁ আমার মেয়ে।"
--তোর মেয়ে আমি মানি না।"
--আগুন বিরক্ত হয়ে বলে এখন কি এইসব বলার সময় তোমার। আর একটা কথাও বলবে না। ও আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে।"
--তোর বাবা মরে গেছে এখন সবাই পাল্টে যাচ্ছিস।" এই বাড়িতে এখন আমার কথায় সব কিছু চলবে। যেহেতু তোর বাবা মরে গেছে। তাই এই মুহুর্তে তোর মেয়েকে নিয়ে এরা চলে যাবে। হুট করে বললেই তো আর আমি সব কিছু মেনে নিবো না।"
-- আলেয়ার কথায় রাশ বিরক্ত হয়ে বলে, আপনার এ রকম কথায় কি মনে হচ্ছে যানেন তো, বাবাকে আপনি খুন করেছেন। কারণ আপনার মাঝে সেই ক্ষমতা টা আছে। আর আপনি যে ধুরন্ধর মহিলা সেটা বোঝা যায়। হয়তো সব কিছু আপনার নামে করার জন্য এমনটা করছেন। সেই জন্য পরিকেও আপনার ছেলের মেয়ে হিসাবেও মেনে নিচ্ছেন না। আর এদিকে ডেইজিকেও সরিয়ে দিয়েছেন।"
--রাশের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে রাইসা আর ফাহিম এসে হাজির।" রাশের কথা শুনে আলেয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। কপাল দিয়ে ঘাম ঝড়ছে।
--আলেয়া আমতা আমতা করে বলে, কি বলে এই ছিলে আমি নিজের স্বামীকে কেনো মারতে যাবো আর ডেইজি আমার নিজের মেয়ের মতো।".
--সব কিছুই ছিলো আপনার নাটক। শুধু সময়ের অপেক্ষা। নিজেই সব কিছু আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন।"
--আগুন তুই কিছু বলবি না বাবা। এই ছেলেটা সব কিছু মিথ্যা বলছে। আমার নামে মিথ্যা দুর্নাম লটাচ্ছে।"
--রাশ বাঁকা ঠোটে হাসি দিয়ে এগিয়ে যায় আলেয়ার কাছে। সবাই শুধু দর্শক হিসাবে দেখে যাচ্ছে। রাশের ভাব গতি কেউ বুঝছে না।"
--আগুন স্যার আপনার সুনাম ধন্য মা আর কত মিথ্যা বলবে। হ্যাঁ আপনার মা আপনি সব কিছু বিশ্বাস করবেন না। তবে আমি যা বলছি সব ঠিক।"
--আলেয়া রাগান্বিত কন্ঠে বলে, কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে বার বার মিথ্যা কথা বলছো?"
--প্রমাণ ছাড়া এই রাশ কথা বলে না। প্রমাণ চাই না আপনার ওয়েট।"
--কিছুক্ষণ পর কয়েক টা ছেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে। সাথে পুলিশ নিয়েও এসেছে। শুদু তাই নয় সাথে ডেইজি আছে। পুলিশ আর ডেইজিকে দেখতেই আলেয়ার ভয় যেনো বেরে গেলো।
--ডেইজি এসেই অনামিকাকে জড়িয়ে ধরে। অনামিকা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, মা তুই ঠিক আছিস তো তোর কিচ্ছু হয়নি।"
--আমি ঠিক আছি মা।" জোয়ানকেও ডেইজি জড়িয়ে ধরে। ভাইয়া...
--আগুন নিরব হয়ে সব কিছু দেখে যাচ্ছে। পরি চুপটি হয়ে বসে রয়েছে।"
--জোয়ান বলে, কি হয়েছিলো ডেইজি একটু বলবি।"
--ডেইজি আলেয়ার কাছে গিয়ে বলে, আমি কাল রাতে খাবারের জন্য কিচেনে গিয়েছিলাম। কিচেনে গিয়ে দেখি খাবার ফ্রিজে রাখা। তাই এই মহিলাকে বলতে গিয়েছিলাম গরম করে দিতে। কিন্তু এই মহিলা তখন ফোনে কাউকে বলছিলো, ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি কিছুক্ষণের মধ্যে ওই বুড়ো শেষ হয়ে যাবে। আর তোর সাথে ডেইজির বিয়ে দেবো। যাতে সম্পত্তি হাতাতে সমস্যা না হয়। তাই তো বিয়েটাও পিছিয়ে নিলাম।"
আমি কি করবো বুজতে পাচ্ছিলাম না। কাকে এই কথা গুলো বলবো। না জোয়ান ভাইয়া ছিলো না আগুন ভাইয়া। তাই রাশকে টেক্সট করেছিলাম যা যা শুনেছি।"
--আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ওই মহিলার রুমে ঢুকে যাই। সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, আপনি বাবা মারার জন্য ওষুধ খাইয়েছেন। আপনাকে আমি ভালো ভেবে ছিলাম। আমি এখনে পুলিশকে কল করে জানিয়ে দিবো৷" ফোনটা নিয়ে কল করতেই এই মহিলা মুখের মধ্যে কি একটা স্প্রে করে দেয়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।"
জ্ঞান ফিরে দেখি আমি অন্ধকার এক রুমের ভিতরে।"
--হঠাৎ করে দরজা খোলার শব্দ পেলাম। কে যেনো ভিতরে ঢুকছে। লোকটা আলো জ্বালাতেই পরিচিত এক মুখ ভেসে উঠলো। এই লোকটা আর কেও না সোহেল ছিলো।
--আমার তোকে তুলে আনার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। বাট কি করবো তুই সব কিছুই জেনে গেলি। তোকে আমি কিছুই করবো না। তোকে আমি ভালোবাসি, আর তোর গায়ে এতো টুকু আজ দিবো না।"
--সোহেলের এমন কথা শুনে চট একটা বুদ্ধি চলে আসলো মাথায়। ভালেবাসার মিথ্যা নাটক করলাম। সেও ভুলে গেলো। সে আমাকে বাইরে নিয়ে আসলো। আমি সুযোগ বুঝে মাথায় আঘাত করলাম। তারপর দৌড় দিলাম অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। একটা কালো গাড়ি অনেক কষ্টে দাঁড় করালাম।" লোকটি আমাকে রাশের বন্ধুদের আস্তানের কাছে নামিয়ে দিলো৷ ভাগ্যিস তারা ওখানে ছিলো।"
--আগুন ডেইজির কথা গুলো শুনে উঠে দাঁড়ায়। পরি নীধির কাছে চলে আসে। নিজের চোখের অশ্রু গুলো
মুছে আলেয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়৷ আগুনের মস্তিষ্ক ঘৃণায় ঝিনঝিন করে উঠলো। আলেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে, এটা করতে পারলে আম্মু। সবার সামনে কত টা ছোট করলে তুমি। আমাকে তুমি বাবা হারা সন্তান বানিয়ে দিলে। নিজের স্বামীকে মেরে কি পেলে বলবে।" তোমাকে মা বলতেই লজ্জা করছে আমার।
--আলেয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, হ্যাঁ আমি খুন করেছি। আর আমি তোর মা নই।
--কি বলছো তুমি এসব মা।"
--হ্যাঁ আমি ঠিক বলছি। আমি তোর মা নই।"
--আলেয়ার কথা শুনে আগুনের যেনো পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। পৃথিবী যেনো ঘুরতে শুরু করলো। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। পরক্ষণেই আগুনের দেহ টা ফ্লোরে পড়ে গেলো। রাইসা দৌড়ে গেলো আগুনের কাছে।
_________
আগুনের জ্ঞান ফিরলে চোখ খুলে নিজের রুমে অবস্থান বুঝতে পারলো। পাশেই বসে আছে পরি আর রাইসা। আগুন শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা করছে। রাইসা আগুনকে সাহায্য করলো। ছেলেটা যে মানসিক ভাবে ভেঙে গিয়েছে। রাইসার খুব কষ্ট হচ্ছে, ভালোবাসার মানুষের এমন অবস্থা হলে কেউ স্বাভাবিক থাকতে পারে না। রাইসার চোখ মুখ ফুলে গেছে।
--আগুন রাইসাকে বলে, আমাকে একটু পানি দিবে রাইসা।" রাইসা পানি এনে খাইয়ে দেয়।
পরি আগুনের কোলে উঠে বলে, বাবা তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
--রাইসা আগুনের হাত ধরে বলে, সব ঠিক হয়ে যাবে।"
--কি ঠিক হওয়ার আছে, সব কিছুই তো শেষ হয়ে গেলো। আমার কপাল'টাই পোড়া যানো। শুরু হওয়ার আগে শেষ।"
--রাইসা আগুন জড়িয়ে ধরে বলে,এমন কথা বলবেন না। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আপনার কষ্ট সহ্য না আমার। শোনেন না, আর কষ্ট পেয়েন না আমরা আবার শুরু করবো। আমাদের একটা নতুন সংসার হবে।
--আল্লাহর ইচ্ছে।"
--আগুন পরির কপালে চুমু দেয়। তারপর পরির গালে হাত রেখে বলে, আমার পরি মা খেয়েছে।"
--তুমি তো অসুস্থ তাহলে খাব কি করে। সবাই জোড় করেছিলো আমাকে আমি না বলেছি।তোমাকে ছাড়া খাব না আমি। তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।
--ঠিক আছে আমি তোমাকে খাইয়ে দিব।"
#চলবে
( আমি নিজের মতো করে সাজিয়েছি। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code