Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ২, লেখক বর্ষা রায়


 সকাল সকাল ম্যানেজার ফোন করে ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে জোয়ানের। বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ম্যানেজার কে একটা ধমক দেয়।" কি সমস্যা নিরব।

নিরব কাচুমাচু হয়ে বলে,স্যার আসলে, আজকে তো ১০টা নাগাদ ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিলো। আপনি বলেছিলেন মনে করিয়ে দিতে তাই আপনাকে ফোন দিলাম। স্যার এখন তো ৯ টা বাজে কখন আসবেন।
মাথায় হাত দিয়ে বলে, ঠিক আছে আমি যাচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যে।
--জোয়ান রেডি হয়ে ডাইনিং রুমে খেতে আসে।অফিসে জরুরি মিটিং আছে যেতে হবে তারাতাড়ি । কিন্তু টেবিলে চোখ যেতেই খাওয়ার রুচি চলে যায়। হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যেতে ধরলে পিছন থেকে অনামিকা ডাক দেয়।"এই জোয়ান বাবা খেয়ে যা, না খেয়ে যাচ্ছিস কেনো?
--অনামিকার কথা কর্ণপাত না করেই চলে গেলো জোয়ান। রাশ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। লাবলু রাশ কে বলে, এ রাশ সামনের দিকে দেখ এটা তোর ভাইয়া না।" রাশ একবার তাকিয়ে আবার চোখ কচলিয়ে সামনের দিকে তাকায়। সত্যি এটা তো তার ভাইয়া। রাশ ভয়ে শুঁকানো ঢোক গিলে। জোয়ান রাশের কাছে এসে, রাশের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। রাশ বুজতে পাচ্ছে না জোয়ান কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে, জোয়ানকে না বলে এসেছে তাই এমন করছে। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বাসায় নাকি। আবার ভাবছে, আমি তো কোনো ভুল করি নি। ভয়ে চোখে অশ্রু চলে এসেছে রাশের। জোয়ান এর আগে কখনোই এমন করে নি। কলেজ থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তা পার হয়। কলেজের সামনেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে রাশকে নিয়ে যায়। রাশ এবার বুঝতে পেরেছে খাবার টেবিলে ফেলে এসেছিলো। জোয়ান দেখেছে, তাই খুব ক্ষেপে আছে।
--জোয়ান ওয়েটার কে খাবার আনতে বলে। দুই ভাই মিলে খাবার খেয়ে নেয় চুপচাপ। রাশ মনের মধ্যে সাহস নিয়ে বলে, ভাইয়া তুমি আমার উপর রাগ করে আছো।"
--তুই আমায় কোনো দিন বুঝতে পারবি না।"
--জোয়ান কিছু না বলেই বিল দিয়ে চলে যায়। রাশ জোয়ানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।"
--সত্যি ভইয়া আমি তোমার সাথে খুব অন্যেয় করে ফেলেছি। রাশের চোখ দিয়ে এক ফোটা অশ্র গড়িয়ে পড়ে।
--মিটিং শেষ করে রেস্ট নিচ্ছে জোয়ান। এর মধ্যে নিরব এসে হাজির। নিরব আমতা আমতা করে বলে, স্যার একটা কথা বলবো?
--হুম বলো।"
--আসলে বাইরে আফজাল চৌধুরী এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।" আফজাল চৌধুরী নাম শোনা মাত্রই চোখ খুলে সামনের দিকে তাকায়। বেশ ক্ষানিকটা অবাক হয় জোয়ান। ভুরু কুঁচকে ক্ষীণ হেসে বলে,
--কি বলছো কি নিরব, আফজাল চৌধুরী তাও আবার আমার অফিসে। বাহ! জানতাম আমি এই আফজাল চৌধুরী আমার অফিসে আসবে। তার উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য। জোয়ান উঠে দাঁড়ায়, পেন্টের পকেটে হাত গুঁজে দিয়ে জানালার কাছে যায়। কিছুক্ষণ বাইরের দৃশ্য দেখে নিরব কে বলে, ভিতরে আসতে বলো।"
--আফজাল চৌধুরী তোমার পদার্পণ ঘটলো। কিছুক্ষণের মধ্যে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পড়া এক বয়স্ক লোক ভিতরে প্রবেশ করে। সাথে দুজন কালো পোশাক পড়া লোক দেখতে বেশ নাদুসনুদুস। নাম হলো মিন্টু আর চিন্টু।"
--আফজাল চেয়ার টেনে বসে পড়ে। জোয়ান জানালার পাশ থেকে এসে নিজের স্থানে এসে বসে পড়ে। কি খাবেন চা নাকি কফি?"
--কিছু খাব না।"
--ওকে ফাইন। কি জন্য এসেছেন এই জোয়ান চৌধুরীর কুটিরে।"
--আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। তুমি ভালো করেই জানো। তুমি নিশ্চয়ই জানো সামনে
নির্বাচন । এই নির্বাচনে আমাকে জিততে হবে। তুমি একজন সফল বিজনেসম্যান। সবাই তোমাকে চেনে। তাই আমি চাই তুমি আমাকে সাহায্য কর।"
--জোয়ান ঠোঁটে হাত দিয়ে এতোক্ষণ থেকে কথা গুলো শুনলো। তারপর টেবিলে দুই হাত রেখে বলে,
--সরি মিস্টার আফজাল আমি আপনাকে কোনো রকম সাহায্য করতে পারবো না।"
--ভুলে যেও না আমি তোমার সম্পের্ক..
কথাটা বলা শেষ না হতেই জোয়ান হাতের ইশারায় বলে, ব্যাস আমি কোনো সম্পর্কের কথা শুনতে চাই না। যে সম্পর্কের কোনো মানে নেই।"
--কেনো আপনার গুনো ধর ছেলে, আপনার কথা শোনে না বুঝি। তাকে কত স্নেহ মায়া দিয়ে বড় করেছেন। কেথায় গেছে সেই ছেলে। মেয়েদের সাথে ফুর্তি করা, বন্ধুদের সাথে নেশা করা। নিষিদ্ধ পল্লীতে যাওয়া, কি করবে। যাকে নিয়ে এতো গর্ব করতেন, কই সেই ছেলে কে তো পাশে দেখছি না। সময় সব কিছু বলে দেয় মিস্টার আফজাল, কে কার কাছে কতটা দামী আর কতটা প্রয়োজন। আপনি এখন আসতে পারেন।"
--জোয়ান তুমি কিন্তু রীতিমতো আমাকে অপমান করছো।"
--এটা আপনার অপমান মনে হলো। হতেই পারে, আপনি এতো বড় একজন সম্মানিত ব্যক্তি। বাট এতো বড় দূর সাহস আমার নেই যে আপনাকে অপমান করবো। আপনাকে অপমান করতেও আমার মুখে আটকায়। যেতে পারেন আমার সময় নেই কাজ আছে আমার।"
--আফজাল চৌধুরী রাগান্বিত মুখশ্রী নিয়ে বেরিয়ে যায়। নিরব হুর মুর করে ভিতরে এসে বলে, স্যার ওনার চেহারা দেখলাম। হাসি পাচ্ছে আবার কষ্ট হচ্ছে।"
--জোয়ান ভুরু কুঁচকে বলে, কেনো?"
--আসলো আপনার কাছে সাহায্য চাইতে, কিন্তু ঘুরে অপমান হয়ে চলে গেলো।"
--এখনো কিছুই হয়নি, দেখতে থাকো। তুমি এখন যাও, আমার জন্য কফি নিয়ে এসো।"
--ঠিক আছে স্যার। নিরব ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে, স্যার আপনার বোন ফোন করেছিলো।"
--ঠিক আছে।"
_________
আব্বু তুমি ভাইয়ার কাছে কেনো গেছিলে?ওরা তো ওদের মতোই আছে, শান্তিতে আছে। তোমার পরিবার থেকেই তো দূরে আছে। তাহলে কেনো পড়ে আছো ওদের পিছনে। তোমার রাজনীতি তুমি করবে, তোমার ছেলে আছে নেও না তাকে সাথে। তোমার এই রাজনীতি খেলায় আর কত মানুষ কে শেষ করে দিবে।
--ডেইজি তুমি দিন দিন বেশি কথা বলছিস৷আর তোর সাহস দেখি বেড়ে চলেছে। আমি কি করবো না করবো সেটা তোর কাছ থেকে নিশ্চয়ই শুনবো না। নিজের কাজ কর, আর এসব বিষয়ে নাক গলালে নিশ্চয়ই ভালো হবে না তোর জন্য।
--কি আর ভালো রেখেছো তুমি। নিজের পরিবার থেকেই তো দূরে রেখেছো।" কথাটা বলেই কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে যায় ডেইজি।"
--আফজাল নিজের রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে আসে। সোফায় বসতে বসতে আলেয়াকে চা নিয়ে আসতে বলে।"
--আগুন কে বাইরে থেকে আসতে দেখে আফজাল বলে, কোথায় গিয়েছিলিস তুই?"
--আগুন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, দেখতেই তো পাচ্ছো বাইরে গেয়েছিলাম।"
--বাবার মুখের উপর কথা বলছিস। ঠাটিয়ে চর মারবো। এতো দিন থেকে আমি কুলাঙ্গার কে পুষেছি। বাবার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় সেটাই ভুলে গেছে। অসভ্য ছেলে।"
--আলেয়া চা এনে টেবিলে রাখে। তারপর আফজালের উদ্দেশ্য বলে, তুমি উত্তেজিত হইও না।"
--উত্তেজিত হবো না মানে। সব কিছু তোমার আশকারা পেয়ে হয়েছে। না হলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না। আমাকে অপমান হতে হতো না। কারো সাহায্য চাইতে হতো না। তোমার ছেলে নেশা করে বেরাবে, মেয়ে মানুষকে ধর্ষণ করবে। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে আর আমি ওকে বার বার ছাড়িয়ে আনবো৷ আমি কিন্তু আর কাউকে ছাড়িয়ে আনতে পারবো না।"
--আগুন আফজালকে বলে, ওয়েট ওয়েট, তুমি কার কাছে সাহায্য চাইতে গেছিলে, আবার অপমান করেছে। আমার ধারণা ভুল না হলে তুমি জোয়ান চৌধুরীর কাছে গেছিলে।"
--হ্যাঁ গেছিলাম।"
--কেনো গেছিলে, তোমার কি করতে হবে আমাকে বলো। ওই জোয়ানের কাছে তুমি সাহায্য চাইতে কেনো গেলে। আর ওর সাহস কি করে হয় তোমাকে অপমান। রক্তিম আঁখিযুগল করে বলে, খুন করে ফেলবো আমি ওই জোয়ানকে।"
--চুপ কর তুই। জোয়ান চৌধুরী তোর মতো মাতাল নয়। শান্ত মস্তিষ্কের মানুষ ও। জোয়ান তোর মতো নেশাখোর কে ভয় পায় না। সে নিজের যোগ্যতায় আজকে প্রতিষ্ঠিত। তুই কি করেছিস জীবনে। তোকে আমি কি দেই নি সব কিছু দিয়েই আজকে এই দিনটা দেখতে হচ্ছে।"
--হ্যাঁ আমি তো তোমার খারাপ ছেলে, তাই তো তুমি তোমার ভালো ছেলের কাছে গিয়েছিলে। তাহলে যাও না, থাকতে দেও আমার মতো।"
--আলেয়া তোমার ছেলেকে সাবধান করে দেও আমি কিন্তু ওকে খুন করে ফেলবো।"
--আলেয়া আগুন টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়।"
--ছেড়ে দেও আমায় আম্মু, থাকবো না আমি এবাড়িতে। চলে যাব আমি।"
--আগুন তোর কি বদবুদ্ধি সব লোভ পেলো নাকি। কি করছিস কি হুম। তুই কি চাস এ বাড়ি থেকে তোকে আর আমাকে তোর বাবা বের করে দিক। তোকে কত বার বোঝাবো আমি, সব কিছু বুঝে শুনে চলিস। কিন্তু আমি কাকে বোঝাবো, সে তো তার মতো পড়ে আছে।
শোন, এই বাড়িতে যা কিছু আছে সব কিছু তোর। তাই তোর বাবা যেটা বলবে শুনে চল। ইলেকশন শেষ না হওয়া অব্দি। বাকিটা আমি সামলে নিবো।
--ঠিক আছে, তুমি এখন বাইরে যাও আমি ঘুমাবো। আলেয়া আগুনের রুম থেকে বেরিয়ে যায়।"
_____________
কেটে গেলো তিনটে দিন। এই কয়দিনে জোয়ান ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে। আজকে সে সিলেট যাবে অফিসের কাছে। থাকবে মাসখানিক। ঘুম ঘুম চোখে জানালার কাছে এসে মিঠে রোদের স্বাদ নিচ্ছে। আজকে সকাল টা তার খুব মনোমুগ্ধকর লাগছে। মনটা বেশ খুশি খুশি, কিন্তু কেনো এতো খুশি লাগছে তার বুঝতে পাচ্ছে না।
ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াশরুমে। শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে সবে মাত্র। নিরব এসে হাজির।
--গুড মর্নিং স্যার।"
--গুড মর্নিং।"
--স্যার সব কিছু রেডি। শুধু আপনি রেডি না।"
--হুম তুমি যাও আমি যাচ্ছি।"
সিলেটের রাস্তা গুলো উপর থেকে ধীরে ধীরে নিচে নেমে এসেছে। জোয়ান চারিদিকের সবুজে ঘেরা প্রান্ত গুলো উপভোগ করছে। এর আগেও সিলেটে অনেকবার এসেছিলো জোয়ান। সিলেটের এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তার খুব ভলো লাগে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা তাদের বাঙলোতে এসে পৌঁছায়। অনেক দূর জার্নি করে এসেছে, তাই ফ্রেশ হয়ে বেডে শুয়ে পরে। প্রায় তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছে।
--নিরবকে নিয়ে জামাল হোসেনের বাসায় যায়। তাদের পাশের বাঙলোতে থাকে তারা। তাদের সাথে সম্পর্ক অনেক দৃঢ়। কলিং বেল বাজাতে একজন বয়স্ক মহিলা দরজা খুলে দেয়। জোয়ান মহিলাকে দেখে বলে,আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?
--আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা। তুমি ভালো আছো তো।"
--আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি আন্টি।"
--ভিতরে আসো বাবা।"
--জী আন্টি।"
--সোফায় বসে টিভি চালু করে দেয় জোয়ান। জোয়ান এই বাসায় নিজের মতো করেই থাকে। এটা তার আরেক পরিবার। আন্টি আঙ্কেল কোথায়?
--তুমি আসবে বলে, বাজার করতে গেছে। অনেক দিন পর আসলে বাবা। তোমাকে কি দিব চা নাকি কফি?"
--সিলেটে এসেছি চা না খেলে হয়। আন্টি পরি কোথায়?"
--ও রুমে আছে। ও জানে না তুমি আসবে। দাঁড়াও ওকে ডেকে আনছি৷ পরিকে বলা মাত্রই ছুটে চলে এসেছে।"
--জোয়ানের কোলে এসে বসে আছে। আর ছোট ছোট কোমল দু হাত জোয়ানের গালে ছুইয়ে বলে, চাচু তুমি এসেছো। তোমাকে কত মিস করেছি জানো।"
--আমিও তোমাকে খুব মিস করেছি। তোমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছি। এই নেও।"
--জানো চাচু আমাদের বাসায় একটা নতুন আন্টি এসেছে। অনেক কিউট দেখতে তোমার মতোই আমাকে খুব ভালো বাসে। চলো না দেখবে। নিরব বলে, স্যার আপনি যান আমি ততক্ষণে টিভি দেখি। পরি হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় রুমে। মেয়েটি বেডে বসে ছবি আঁকাচ্ছে। " নীধি আন্টি দেখো আমি কাকে নিয়ে এসেছি।"
#চলবে
(আজকে অনেক বড় করে দিয়েছি ১৫৩৪ শব্দ আছে।
আপনারা অবশ্যই কমেন্টে বলবেন কেমন হয়েছে। আমি একজন নতুন লেখিকা। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code