Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৩, লেখক বর্ষা রায়

 

জোয়ানের কর্ণকুহরে নীধি নামটা যেতেই থমকে গেলো দু'পা। চেনা পরিচিত নামটা শুনতেই বুকটা কেমন ভারী হয়ে আসছে। নীধির কথা তার মনেই ছিলো না। কি করে ভুলে গেলো জোয়ান। মেয়েটাকে তো সে কথা দিয়েছিলো তাদের বাড়ি যাবে। জোয়ান এই প্রথম বার কাউকে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি। নিজের খুব রাগ হচ্ছে তার। কিন্তু এই রাগ যেনো মেয়েটাকে দেখতেই এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।
--পরি এদেখো আমি খুব সুন্দর একটা দৃশ্য আঁকিয়েছি। কথাটা বলেই পেছন ঘুরতে জোয়ানকে দেখতে পায়।সাথে সাথে মুখ দিয়ে বাক্য উচ্চারণ করে বলে,
--আপনি এখানে?"
--নীধি তুমি এখানে কি করছো তোমার তো ঢাকায় থাকার কথা।"
--নীধি এবার ঘুরে বসে, পরি জোয়ানকে বলে, চাচু তুমি নীধি আন্টিকে চেনো?" হ্যাঁ পরি চিনি। পরি কথাটা শুনতেই হাতে তালি দিয়ে লাফিয়ে উঠলো। তাহলে আমরা ঘুড়তে যাবো সবাই মিলে। জানো চাচু আমরা ঘুরতে যেতে চাইলে নানু মানা করে দেয়। তাই আর যাওয়া হয় না। এইবার এসে গেছো আর কেউ মানা করতে পারবে না। পরির এমন কথা শুনে নীধি আর জোয়ান দুজনে হেসে দেয়।"
--নীধি আপু চলো সবাই মিলে ছাঁদে যাই। কথাটা বলেই টানতে টানতে দুজনকে নিয়ে গেলো। নিরবকেও ছাড়েনি, তাকেও জোড় করে নিয়ে গেছে পরি। তবে জোয়ানের কৌতূহল এখনো থামে নি। কি করে আসলো এখানে নীধি, তার মা কোথায়। তার মা তো অসুস্থ ছিলো। ভাবতে ভাবতে ছাঁদে চলে এসেছে। চারিদিকে অন্ধকার তবে বেশ ঠান্ডা লাগছে বাইরে। শিরশিরে বাতাস বইছে, আকাশের চাঁদ টা জ্বলজ্বল করছে।"
--নিরব আর পরি দুজনে খুনসুটি করছে৷ এই ফাঁকে জোয়ান নীধির কাছে এসে শান্ত কন্ঠে বলে,
-- নীধি।"
--হ্যাঁ, কিছু বলবেন?"
--হুম, তুমি এখানে কি করে আসলে?"
--নীধি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটু পিছিয়ে চাঁদের দিকে দৃষ্টি রেখে বলতে শুরু করলো,
--যে দিন আপনি রাতে আমায় রেখে গেছিলেন। তারপরের দিন আমার মা মারা যায়। আমি ভেঙে পরেছিলাম, কি করবো বুঝতে পাচ্ছিলাম। মা ছাড়া তো আর এই পৃথিবীতে কেউ ছিলো না। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছিলো। সেদিনি জামাল আঙ্কেল আমাদের বাড়িতে আশে। পাশের বাড়ির এক চাচি এসে বললো, বাইরে কেউ একজন এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। বাইরে বের হয়ে দেখি জামাল আঙ্কেল দাঁড়িয়ে আছে। জামাল আঙ্কেল আমার বাবা বন্ধু ছিলেন। আমাকে দেখার মতে কেউ নেই তো তাই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। কথা গুলো বলেই কাঁদতে লাগলো নীধি।"
--আই এম সরি নীধি। আমার মনেই ছিলো না তোমাদের বাড়ির যাওয়ার কথা। অফিস নিয়ে এতে বিজি ছিলাম। আর তোমাকে যে কার্ড টা দিয়েছিলাম, সেখানে তো আমার নম্বর টা ছিলো।একবার কল তো দিতে পারতে।"
--চোখের অশ্রু মুছে নিয়ে বলে, আসলে কার্ড টা কোথায় রেখেছি ভুলে গিয়েছিলাম।"
--জোয়ান একটু চুপ থেকে বলে, তোমার তো এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না৷"
--না, এখানে আঙ্কেল একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।" তাহলে তো ভালোই হয়েছে।"
--ছাঁদে জামাল হোসেন আলে আসে।" পরি এ দেখো কি এনেছি।
--পরি দৌড়ে গিয়ে জামাল হোসেনের কোলে চরে।" কি এনেছো নানু?"
--গরম গরম পিৎজা। তোমরা সবাই ছাঁদে তাই ছাঁদেই নিয়ে এলাম। সবাই মিলে মজা করে খাবো। তা জোয়ান বাবা কেমন আছো?"
--আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন?"
--আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।"
--ছাঁদে টেবিলে বসে সবাই মিলে জিলাপি খাচ্ছে। জামাল জোয়ানকে বলে, তা বাবা তোমার মা কেমন আছে।"
--জি আঙ্কেল ভালো আছে।" জোয়ান আর চোখে নীধি কে দেখছে। নীধি বুঝতে পাচ্ছে, তার কেমন অসস্তি হচ্ছে। পিৎজা খেতে পাচ্ছে না। জোয়ান বলে, নীধি তুমি পিৎজা খাচ্ছো না কেনো?"
--না মানে এমনি।"
--জামাল জোয়ানকে নীধির সাথে কথা বলতে দেখে বলে, তুমি কি নীধি কে চেনো?"
--হ্যাঁ আঙ্কেল চিনি তো।"
--বাহ!তাহলে তো খুব ভালো কথা। তা তোমরা থাকো বাবা আমি তাহলে নিচে যাই। দেখি আমার বউ কি করছে একটু হেল্প করে দেই।"সবাই হেসে উঠে।
--রাতের খাবার খেয়ে জোয়ান নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়ে।"
________
--জোয়ান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। গায়ে শীতে পোশাক পড়ে বাইরে বেরিয়ে পরে। নিরব চলে গেছে ঢাকার উদ্দেশ্য।
জোয়ানের এসিস্ট্যান্ট সিয়াম ছুটিতে ছিলো, তার ছুটি শেষ তাই এখন সিলেটে আসবে জোয়ানের কাছে।"
--বাগানে জোয়ান ব্যায়াম করছে। পিছন থেকে পরি এসে বলে, চাচু আমিও তোমার সাথে ব্যায়াম করবো।
ঠিক আছে, আমি যেভাবে করছি তুমিও সে ভাবে করো।"
--পরি করতে পাচ্ছে না, বরং সে হাসছে। পরির হাসি দেখে জোয়ান তাকে কোলে তুলে নেয়।" আচ্ছা পরি তোমার নীধি আন্টি কি করছে?"
--নীধি আন্টি তো আমাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য জোর করছিলো, আমি বাগানে পালিয়ে এসেছে। পিছন পিছন আপু দৌড় দিয়েছে। আশে পাশে কোথাও আছে আমাকে খুঁজতেছে।"
--পরি তোমার আন্টি ভয় পেয়ে যাবে তো। চলো আমরা খুঁজি আবার নিজেই না হারিয়ে যায়।"
--ছোট একটা লেবুর গাছ ছিলো বাগানে সেখানেই নীধির চাদর টা আটকে যায়। এক হাতে দুধের গ্লাস, আর এক হাত দিয়ে চাদর খোলর চেষ্টা করছে। কিন্তু বরাবর সে ব্যর্থ হচ্ছে। পিছন থেকে পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসে।"
--নীধি আমি সাহায্য করে দিচ্ছি।"
--নীধি পিছন দিকে ঘুরে তাকায়। জোয়ান কে দেখে ক্ষীন হাসে। জোয়ানের পিছনে পরি লুকিয়ে আছে আর মিটি মিটি হাসছে। পরির মিষ্টি হাসি দেখে নীধিও হেসে দেয়। জোয়ান এসে কাটা গুলোর চাদর টা বের করে দেয়।"
--পরি দুধ কিন্তু তোমাকে খেতে হবে। আমি কিন্তু না খাইয়ে যাবো না।"
--আন্টি আমি খাব না। প্লিজ আন্টি জোর করো না। জোয়ান নীধিকে বলে, আমাকে দেও আমি খাইয়ে দিচ্ছি ওকে।"
--নীধি গ্লাস টা এগিয়ে দেয়। জোয়ান গ্লাস টা নিয়ে পরির মুখের সামনে ধরে। কিন্তু পরি তার মুখ তো হাত ঢেকে রেখেছে। সে খাবেই না।"
পরি তুমি যদি দুধ না খাও তাহলে তুমি দুর্বল হয়ে যাবে। তুমি দুধ খেলে আমার মতো ব্যায়াম করতে পারবে। তুমি তারাতাড়ি বড় হয়ে যাবে। তাই খেয়ে নেও কেমন। হা কর পরি হা কর।"
--না চাচু আমি খাব না।"
--আচ্ছা পরি, তুমি কি আমার সাথে ঘুরতে যাবে। তোমাকে আমি চা বাগান দেখাতে নিয়ে যাবো।"
--সত্যি চাচু তুমি আমাকে নিয়ে যাবে।"
--হ্যা তো তোমার চাচু বুঝি মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু তার আগে দুধ খেতে হবে।"
--ঠিক আছে তাহলে আমি খাব। পরি আসতে আসতে সব দুধ খেয়ে নেয়। গ্লাস টা নিয়ে নীধির কাছে দিলো। নীধি এতোক্ষণ জোয়ানের বাহানা গুলো দেখলো। কিভাবে পরি দুধ খাইয়ে দিলো।"
--চাচু আমরা কিন্তু রেডি হতে চলে গেলাম, তুমিও রেডি হয়ে নেও। কি মজা আমরা ঘুরতে যাব।"
--নীধি একটা শুভ্র রঙের গাউন পড়েছে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। কানে ঝুমকা দুল পড়েছে। চুল গুলো পুরো পিঠে ছড়িয়ে দিয়েছে। গায়ে সোয়েটার আর চাদর জরিয়ে নেয়। পরিকেও সে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। রেডি হয়ে বাইরে যায়। গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জোয়ান সাথে সিয়াম। সিয়াম কিছুক্ষণ আগে এসেছে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীধি আর পরি। সিয়ামকেও পরি চেনে তাই দৌড়ে গিয়ে কোলে উঠে বলে, ভালুক আঙ্কেল তুমি আমার জন্য কি এনোছো?"
--ভালুক নাম টা শুনে নীদি হেসে দেয়। নীধির হাসি দেখে বেচারা সিয়াম লজ্জায় নুইয়ে যায়।" নীধি বলেই ফেলে, আপনার নাম ভালুক কেনো?"
--আসলে আগে এখানে স্যারের সাথে প্রচুর
এসেছিলাম। তখন পরি আরো ছোট ছিলো। ভালুক সেজে খেলা খেলেছিলাম, আবার ভালুক না সাজলে খেতে চাইতো না।তাই ও আমাকে ভালুক বলে ডাকে।" --ওহ।"
--পরি তোমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছি। পকেট থেকে চকলেট বের করে দেয়। এদিকে জোয়ান সামনে থাকা মায়বী কি দেখতে ব্যস্ত। আকাশের চাঁদ বুঝি মাটিতে এসেছে। মনে মনে বলে,
--ওগো মায়াবী আমি তোমার প্রতি প্রচন্ড দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। ভিতরে যে এক অচেনা অনুভূতি এসে জড়ো হচ্ছে। এই অনুভূতি আগে আমার শহরে আসে নি। তবে তুমি আসার পরেই এই অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে।
--জোয়ানের এমন তাকানো দেখে নীধি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সেখান থেকে সরে গিয়ে তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়ে। সিয়াম জোয়ানের গা ধাক্কা দিতেই ফিরে আসে নিজের মাঝে। মাথায় হাত দিয়ে মুচকি হেসে গাড়িতে গিয়ে উঠে।"
_________
রাশ রাস্তা দিয়ে নিলাকে নিয়ে হাঁটছে। তার ফ্রেন্ডরা সবাই বাইক নিয়ে ঘুরতে গেছে। রাশ কে বলেছিলো যেতে কিন্তু সে মানা করে দেয়। সে তার ভাইয়াকে কষ্ট দিতে চায় না। নিলা মনে মনে রাশ কে পছন্দ করে কিন্তু কখনো বলতে পারেনি। নিলা জোড় করেছে রাশের সাথে হাঁটবে। রাশকে গিয়ে বাদাম কিনে নিয়ে আসে। দুজনেই বাদাম খাচ্ছে। সামনেই একটা ব্রেঞ্চে একটা মেয়ে বসে আছে। তবে রাশ মেয়েটাকে চেনে।
--ডেইজি আপু তুমি এখানে কি করছো।"
--কিছু না বাসায় একাই একাই বোরিং লাগছিলো। তাই চলে এলাম এখানে। আমার তো আর কেউ নেই যে আমার সাথে সময় কাটাবে। যে ছিলো সে তো এখন নিজের অফিস নিয়েই ব্যস্ত।"
--এমন করে কেনো বলছো আপু। তুমি চাইলেই তো আমাদের বাসায় যেতে পারো। মায়ের একা একা বোরিং লাগে তুমি গেলে একটু শান্তি পেতো। আর আমি আছি কি করে, আমাকেও তো কল করতে পারো৷ নাকি আমাকে ভাই হিসেবে মানোই না। ভাইয়া তো অফিস নিয়ে ব্যস্ত সে তো তোমাকে সময় দিতে পারবে না। কথা টা বলেই ডেইজির পাশে গিয়ে বসে জড়িয়ে ধরে।
--ডেইজি তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, তুই ভাইয়ার মতো না। তুই তোর মতো করে জীবন বেঁচে নিলি।"
-- আমি এখন ভালো হয়ে গেছি আপু,পড়ালেখায় মনোযোগ দিয়েছি। বিশ্বাস না হলে নিলা কে জিগ্যেস করো।"
--নিলাও ডেইজির পাশে বসে বলে, হ্যাঁ আপু। ও তো তিন থেকে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে।"
--তোদের সবার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে আমার। কিন্তু সেই সাধ্য নেই যে আমার। নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করেছি। দম বন্ধ হলে বাইরে আসি। চার পাঁচ টা মানুষের মতো আমাকেও যে বাঁচতে ইচ্ছে করে।"
--আপু তুমি যে কেনো পড়ে আছো ওই বাড়িতে বুঝি না। ওই আগুন কে জাস্ট সহ্য হয় না আমার। আর ওই আফজাল চৌধুরীকে একদমেই না।"
--এর মাঝেই একটা কালো গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ায়। তিনজনেই কালো গাড়ির দিকে দৃষ্টি করে রেখেছে।"
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code