Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৮, লেখক বর্ষা রায়

 

চারিদিকে অন্ধকার শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। তার উপর শীতকাল হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ডেইজি ফোনটা থেকে মুখ তুলে সামনের দিকে দৃষ্টি করে। আগুন চা নিয়ে এসেছে দুজনে মিলে খাবে। চায়ের কাপটা হাতে নিতে নিতেই ফোনে এসেমেস চলে আসে। এসেমেস টা দেখে আগুন কে বলে, জোয়ান ভাইয়া টাকা পাঠিয়ে দিলো।
--ওহ।"
--আর কোথাও যাবি।"
--না ভাইয়া বাসায় চলো বাইরে কি ঠান্ডা।"
--ঠিক আছে।"
--গাড়িতে উঠার সময় রাস্তা দিয়ে ফাহিমকে হেঁটে যেতে দেখলো ডেইজি। তার সাথে কয়েকটা ছেলে হয়তো তার বন্ধু হতে পারে। হাসতে হাসতে যাচ্ছে। ডেইজি হাত তুলে ডাকলো, এই যে শুনছেন।"আগুন গাড়ির ভিতর থেকে বলে, কিরে কাকে ডাকছিস।"
--ফাহিমকে ডাকছি।'
--ফাহিম সহ সবাই ডেইজির দিখে তাকিয়ে আছে।"ডেইজিকে দেখেই ফাহিম ক্ষীণ হাসে। কি রে ফাহিম মেয়ে টা কে?"
--কে আবার তোদের ভাবি।"
--বাহ! তলে তলে এতো কিছু আর আমাদের বললি না। সালা তুই তো খুব সেয়ানারে। যা তোর বউয়ের কাছে আমরা যাই। "
--ফাহিম রাস্তা পার হয়ে ডেইজির কাছে আসে। আগুন গাড়ি থেকে বের হয়।" ফাহিম আগুন কে বলে, কেমন আছেন ভইয়া।"
--হুম ভালোই আছি। তুমি কেমন আছো?
--আছি ভালো।"
--তো তোমরা দুজন কি একটু ঘুরবে নাকি, তাহলে আমি চলে যাই।"
--ডেইজি টুপ করে বলে, হ্যাঁ ভাইয়া তুমি যাও। "
--ঠিক আছে। ফাহিমকে বলে, ওকে সাবধানে বাসায় পৌঁছে দিও।" আর না হলে আমাকে ফোন করিও আমি এসে নিয়ে যাব। " আগুন গাড়ি নিয়ে চলে যায়।"
--মাঝরাস্তায় আগুনের ফোন বেজে উঠে। ফোনটা বের করে হাতে নিয়ে দেখে রাইসা নাম টা জ্বলজ্বল করছে। রিসিভ করে কানে ধরে। রাইসা বলে, কোথায় আছেন আপনি?
--এইতো গাড়ি চালাচ্ছি। "
--ওহ আচ্ছা, তাহলে আমি রেখে দেই পরে কথা বলবো।"
--বলো তুমি কিচ্ছু হবে না।"
--রিস্ক নিতে চাই না আমি,বাই।"
--এ মেয়ে দেখি আমায় পাগল করে ছাড়বে।"
______
নীধি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বসে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না। কি করে বসে থাকবে, তার মায়ের কথা বাবার কথা ভিষণ মনে পড়ছে। চোখ দিয়ে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তখনি কেউ পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো। নীধি মুখটা নত করে হাতের দিকে তাকালো, তারপর মুখে স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে বললো,
--পরি কোথায়?"
--রাশের কাছে আছে।"তোমাকে এতো তারাতাড়ি নিজের করে পাব কখনোই ভাবি নাই। সব কিছুই কেমন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আজকে তো ফুলসজ্জা।"
--জোয়ানের কথা শুনে নীধি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।"
--কি হলো লজ্জা পাচ্ছো। এমন করে লজ্জা পেলে যে বাবা ডাকটাও শুনতে পাব না গো। "
--ধূর আপনিও না কি যে বলেন।" ইচ্ছে করে আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন তাই না।
--বউয়ের যে লজ্জা মাখা মুখটা আমায় কাছে টানছে সেটা কি জানো।"
--নীধি হাত ছাড়িয়ে পালাতে ধরলে জোয়ান টেনে ধরে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।"আমার কাছে আসলে আবার আমার কাছ থেকে দূরে যাচ্ছো। তোমাকে আমি যেতে দিব না।"
--আমার কেমন লাগছে। "
--ইশ রে, কেমন লাগছে বউ?"
--আমি আপনার সাথে থাকবো না। "
--জোয়ান ভুরু কুঁচকে তাকায়," এই নীধি কি বলছো বুঝতে পারছো তুমি।"
--নীধি থমথমে খেয়ে যায়। আজকে তো এই মানুষটার সাথেই থাকবে।" শুঁকানো ঢক গিলে, না মানে আসলে আমার সত্যি হাত পা কাঁপছে।"
--জোয়ান নেশালো কন্ঠে বলে, এই নীধি আমার দিকে তাকাও।"
-- নীধি আসতে আসতে নিজের মুখটা তুলে জোয়ানের মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি করে।"জোয়ান নিজের ওষ্ঠদ্বয় ডুবিয়ে দেয় নীধির ওষ্ঠদ্বয়ে। তারা দুজনে ডুবে নিজের কার্যসিদ্ধিতে।"
--হটাৎ করে দরজা ধাক্কানোর শব্দে দুজনে ছিটকে যায়। জোয়ান মাথায় হাত দিয়ে দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলতে পরি রুমের ভিতর চলে যায়। রাশ দাঁড়িয়ে নিজের সব কটা দাঁত বের করে কেবলার মতো হাসি দিয়ে দিলো। জোয়ান বিরক্ত সূচক দৃষ্টিতে
রাশের দিকে তাকালো।তারপর রাশের সামনে জোড়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।"
--রাশ ভোতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।"অনামিকা এসে বলে, কি রে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। লজ্জা স্বরমে'র মাথা খেলি নাকি। "
--আম্মু কি সব বলছো আমি কি করলাম। "
--দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস আবার বলিস কি করছিস। বাদর ছেলে। অনামিকা চলে যায় নিজের রুমে।
" যাক বাবা ধূর বাবা আমি ঘুমাতে যাই।"
--পরি গিয়ে বেডের মাঝখানে শুয়ে পড়ে। নীধির জোয়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে চেঞ্জ করার জন্য চলে যায়।" জোয়ানে বাধ্য ছেলের মতো পরির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।" নীধি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে জোয়ান পরির সাথে ঘুমিয়ে গেছে।"নীধি গিয়ে পরির পাশে শুয়ে পরে। "
--ডেইজিকে বাসার নিজে রেখে গেছে ফাহিম। ডেইজি সোজা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আগুনের রুমে চলে গেলো। আগুনের রুমটা একবার পর্যবেক্ষণ করে নিলো। কিন্তু আগুন রুমে নেই।"
--তারপর আলেয়ার রুমে গেলো। আলেয়া ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো। সেই সময় ডেইজি এসে আলেয়াকে বলে,
--আগুন ভাইয়া কোথায়?"
--আলেয়া হকচকিয়ে উঠে, ফোনটা কেটে দিয়ে শুঁকনো একটা ঢোক গিলে বলে, ছাদে গেছে মনে হয়।"
--ঠিক আছে। "
--ডেইজি চুপিচুপি ছাদে যায়। আগুনের পিছনে দাঁড়িয়ে আগুনের কানে কানে বলে, কি ব্যাপার প্রেম করা হচ্ছে বুঝি।"
-- আগুম চমকে উঠে দু'পা পিছিয়ে যায়। তারপর কলটা কেটে দেয়। ডেইজির মাথায় গাট্টা মেরে বলে, কি করছিস ভয় পাচ্ছিলাম তো।"
--ইশ, পারসোনাল কথা বলছো বুঝি। "
--ছি ছি, বোন কখনো ভাইকে এসব কথা বলে। "
--কেনো বলে না।"
--ডেইজির কানটা টেনে ধরে বলে, তুই দিন দিন বাদর হচ্ছিস।"
--আহা ভাইয়া লাগছে তো ছেড়ে দেও না।"
--ছেড়ে দিলাম।"
--আচ্ছা ভাইয়া তুমি রাইসাকে ভালেবেসে ফেলছো তাই না। আমার কিন্তু রাইসাকে খুব ভালো লেগেছে।"
--তাহলে তোর ভাবি বানিয়ে নে।"
-- আগুনের কথা ডেইজির কর্ণপাত হতেই চোখ বড় বড় করে তাকায়। আগুন যে ডিরেক্ট এই কথা বলবে ভাবতেও পারে নি।" ওহ, তোমারো বুঝি বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। চিন্তা নেই আমি আছি না আব্বুকে বলে তোমার বিয়ে টাও লাগিয়ে দিবো।"
--লাগবে না, আমার জিনিস আমি বুঝে নিবো।"
--বাহ!আমি না হলে তো রাইসা কে পেতেই না। এখন আমাকে বাদ দিয়ে নিজের জিনিস হয়ে গেলো।"
--বেশি কথা বলবি না। চল্ প্রচুর ঘুম পাচ্ছে ।
--চলো।
__________
মাঝেই কেটে গেছে এক সপ্তাহ। ফাহিমের বাবা আফজালকে ফোন করে বলেছে, বিয়েটা যেনো পিছিয়ে নেয়। আফজাল আর মানা করে নি। আফজাল নির্বাচনের পর বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে। তার একমাত্র মেয়ে কিছুদিন থাকুক। ডেইজিকে আগের থেকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। আগুনের সাথে ডেইজির ভাব জমে গেছে দেখে তার মনে প্রশান্তি এসেছে। ডেইজিকেও আর বাইরে যেতে মানা করে না।"
--আগুন এখন প্রায় রাইসার সাথে দেখে করে রেস্টুরেন্টে। মেয়েটাকে তার বেশ মনে ধরেছে। এই তো আজকেও দেখা করতে যাচ্ছে।" রাইসার বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। রাইসা আজকে শাড়ি পড়েছে নীল রঙের। আজকে রাইসাকে শাড়িতে পড়তে দেখে আগুন চোখ ফেরাতে পারছে না৷ হুট করেই আগুনের মন এই নারীতে আটকে গেছে। রাইসা গাড়িতে উঠে আগুন মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে দেয়। হাসি দেখেই আগুনের বুকটা ধুক করে উঠলো।"
--কিছু না বলেই গাড়ি চালাতে শুরু করে। আধাঘন্টা পর একটা জায়গায় দাঁড় করায়।" সামনেই ছোট একটা নদী। শীর শীর করে বাতাস বইছে। সূর্য ঠিক মাথার উপরে তবে সূর্যের তাপ খুব অল্প।"
--রাইসা নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ায়। বাতাসে চুল গুলো উড়ছে সাথে আঁচল উড়ে চলেছে। হাত দুটো বাড়িয়ে মুখটা উপর দিক করেই প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো।"
--আগুন গিয়ে নদীর ধারে বসে পড়ে।" তারপর একটা সিগারেটে আগুন ধরায়।" সিগারেটটা মুখে দিতেই রাইসা এসে কেড়ে নেয়।"
--এই সিগারেট টা এখন আমি খাব।" রাইসার এমন কথায় বিস্মিত হয় আগুন। পরক্ষণেই আগুন সিগারেট টা কেরে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।"
--কি করলেন এটা।"
-- এটা তোমার খাবার জিনিস না৷"
--ওই খানে কি লেখা আছে আমি খেতে পারবো না। "
--লেখা নেই তাতে কি হয়েছে, আমি বলেছি তো।"
--হয়েছে হয়েছে রাগ করার কি আছে, খাটাশ।"
-- আমি খাটাশ।"
-- না থুক্কু, সরি।" আমি আগে না আপনার সিগারেট খাওয়া দেখতাম। তো বাসায় চুপিচুপি কাগজের পাতা ছিড়ে সিগারেটের মতো করতাম। তারপর আপনার মতো বসে হাতে সিগারেট নিয়ে মুখে দিতাম।" তো একদিন মা হঠাৎ করেই আমার রুমে ঢুকে পরে আর এমন অবস্থায় দেখে বলে, রাইসা তুই কি করিছিস।"
--আমি কাগছ টা নিয়ে খুলে মায়ের সামনে ধরে বলেছিলাম,দেখ এটা সাদা কাগজ। আমি কিছু করিনি।"
-- মা এসে কান টা টেনে ধরে বলেছিলো, বাদর মেয়ে কলেজে গিয়ে কি এসব শিখছিস। ছেলেদের মতো করে সিগারেট খাচ্ছিস।"
--মা তোমার কি চোখের সমস্যা এটা সাদা কাগজ।"
--মা আমার গাল টেনে বলেছিলো, চোখের সমস্যা হলে কি আর সিগারেট খাওয়া দেখতাম । তারপর মা সবাইকে বলে দেয় আর আমি কাগজ টা নিয়ে গিয়ে দেখাই।"
--রাইসার কথা শুনে হেসে দেয় আগুন।"আগুনের এমন হাসি দেখে রাইসা বলে, জানেন আপনার ওই ঠোঁটে চুমু দেওয়ার খুব ইচ্ছে।"
--আগুনের হাসি বন্ধ হয়ে যায় রাইসার কথা শুনে।" "মেয়েটার সত্যি লজ্জা কম (আগুন মনে মনে ভাবে)
--হয়েছে, নিজের করে পাবে যে পাবে সেদিন দেখবো কত গুলো চুমু করতে পারো।"
--রাইসা হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে নেয়।"
--হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না।"
-- রাইসা আগুনের দিকে ঘুরে বলে, কোথায় লজ্জা পেলাম পাইনি তো।"
--আগুন এবার রাইসার দিকে তাকিয়ে থাকে।" রাইসার কেমন অসস্তি হচ্ছে। আগুনের নেশা লেগে যাচ্ছে। রাইসা দাঁড়িয়ে যায়। তারপর বলে, এভাবে কি দেখছেন?
" দেখছি, তুমি সত্যি মায়াবী।
" তারপর রাইসার হাতটা টেনে ধরে বলে,
ওগো মায়াবী তোমার মায়ার জালে যে ফেসে গেছি। নিজের দুর্বলতার জায়গায় যে তোমাকে বসিয়েছি। তোমাকে ছাড়া যে আমার পৃথিবী অন্ধকার। তোমার "ভালোবাসায় যে সাড়া দিয়ে ফেলেছি।
"ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।
ভালোবাসি ওগো মায়াবী।"
--রাইসা নিস্তব্ধ হয়ে আগুনের কথা শুনে গেলো। বসে থেকে আগুন উঠলেই জড়িয়ে ধরে রাইসা।
" আমিও আপনাকে বড্ড ভালোবাসি।"
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code