Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৯, লেখক বর্ষা রায়


 নীধি এসে জোয়ানকে ডেকে গেছে, কিন্তু জোয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। রান্না শেষ করে আবার রুমে আসে, বিরক্ত হয় নীধি। জানালার পর্দা খুলে দিয়ে আবার ডাকতে শুরু করে। জোয়ান এপাশ আর ওপাশ ঘোরাঘুরি করছে। আর বলছে,

--এই নীধি ঘুমাতে দেও না প্লিজ।"
--সিয়াম ভাইয়া ফোন করেছিলো তারাতাড়ি যেতে বলেছে। এভাবে ঘুমালে চলবে না। না উঠলে গায়ের মধ্যে পানি ঢেলে দিবো। "
--আর একটু ঘুমাই।"
--আর একটুও না। আমি আর ঘুমাতে দিব না।"
--জোয়ান আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। তারপর নীধির মুখশ্রীর দিকে তাকায়। নীধি জোয়ানকে বলে,"এভাবে আমাকে না দেখে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিন।"
--ঘুম থেকে উঠেই বউয়ের মুখটা দেখলে মন টা ফুরফরা হয়ে য়ায়। সারাদিন টা এতো ভালো কাটে কি বলবো তোমায়। তা আমার কাছে আসো একটু সকালের মিষ্টি টা নিয়ে নেই।"
--মোটেও না আমার প্রচুর কাজ পড়ে আছে।" পরি দৌড়ে এসে বলে, আন্টি তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে চলো।"
--হ্যাঁ দিবো তো। পরি কে কোলে তুলে নিয়ে চলে যায়।"
--জোয়ান বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যায়। পরি খাচ্ছে আর রাশের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। জোয়ান রাশ কে বলে, কি রে তোর কলেজ নেই আজকে।"
--আমার কলেজ যেতে ইচ্ছে করছে না তাই যাই নি।" পাশেই অনামিকা রাশকে খাওয়াছিলো। রাশ বলে, ভাইয়া মায়ের হাতে খেলে তারাতাড়ি চলে আসো।"
--হুম যাবো কয়েক দিন পর।" তখন আমি একাই খাইয়ে নিবো তোকে আর খেতে দিবো না।"
--ভাইয়া আমি কিন্তু তোমাকে খুব মিস করছি। তারাতাড়ি ভাবিকে নিয়ে চলে এসো।"
--রাশের কথা শুনে পরি ফোনটা নিয়ে অভিমানি কন্ঠে বলে, তুমি খুব পঁচা। তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।"
--রাশ বুঝতে পাচ্ছে না তার দোষ টা কোথায়। পরি রাগ করলো কেনো? পাশে সবাই পরির কথা শুনে হাসছে। পরি মুখটা ফুলিয়ে বসে রইলো।
--আচ্ছা পরি আমি কি করেছি সত্যি বুঝতে পাচ্ছি না।"
--তুমি আমাকে যেতে বলো নি কেনো? আমিও তো চাচুর সাথে যাবো।
--ওহ আচ্ছা। হ্যাঁ তুমি তো আসবে, তোমাকেও নিয়ে আসবে ওরা।"
--চাচু তুমি আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে যাবে তো।"
--জোয়ান পরির গালে হাত রেখে বলে, হ্যাঁ বাবা নিয়ে যাবো।"
--পরি লাফিয়ে উঠে বলে, কি মজা আমিও তোমাদের সাথে যাবো।"
___________
আগুনকে তার বন্ধুরা ফোন করেছে তারা ঘুরতে যাবে সিলেটে। অনেক দিন ঘোরা হয় নি। আগুন তেমন একটা সময় দেয় না এখন বন্ধুদের। তাই বন্ধুদের কথা ফেলতে পাচ্ছে না। আফজাল বাসায় নেই বাইরে গেছে। তাই আলেয়ার কাছে যায়। আলেয়া কিচেনে রান্না করছিলো। পিছন থেকে আগুন বলে, কি রান্না করছো আম্মু।"
--খিচুড়ি আর মাংস। তোকে কত দিন হলো রান্না করে খাওয়াই না। তাই আজকে তোর জন্য রান্না করছি।
--ঠিক আছে রান্না টা শেষ কর তারপর খেয়ে বের হবো।"
--কোথায় যাবি তুই।"
--বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছে ঘুরতে যাবে তাই যাচ্ছি। কি করবো ওরা তো আমার কোনো কথা ফেলে না।"
--সাবধানে যাস। ঠান্ডার দিন কাপড় নিবি বেশি করে। কয়দিন থাকবি তুই। এমনিতেও দেশের অবস্থা ভালো না। তুই বাইরে থাকলে খুব চিন্তা হয়। কখন যে খারাপ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে।"
--কি বলছো আম্মু?
--কিছু না তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।"
--আগুন নিজের রুমে যাওয়ার আগে ডেইজির রুমে লক্ষ্য করে। অসময়ে এই মেয়েটা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে কি ভাবে। পাগলি একটা, বলে চলে যায়।"
--ফ্রেশ হয়ে খাওয়া করে নেয়। হাতে ব্যাগ নিয়ে ডাইনিং রুমে আসে আগুন।" ডেইজির খুব মন খারাপ এমনিতে এ বাসায় কেউ নেই একা থাকতে ভালো লাগে না। তার উপর আগুন চলে যাচ্ছে। আগুনের সাথে সময় কাটতো একটু হলেও। নিজেকে একা কম মনে হতো। আগুনের ফোন নিয়ে বেডের উপর বসে আছে। আগুন গিয়ে ঘুমটা ভেঙে দিয়েছে।
--আগুনের খুব খারাপ লাগছে। এর মাঝে আলেয়া এসে বলে, বাবা একটা তোর আব্বুর সাথে দেখা করে যা। কখন কি হয় বলা তো যায় না।"
--আম্মু এটা কি ধরনের কথা। এমন কথা বলবে না। এক সপ্তাহের জন্য যাচ্ছি শুধু। এই ডেইজি বোন আমার লেট হয়ে যাচ্ছে ফোনটা দিয়ে যা। আশার সময় তোর জন্য অনেক কিছু আনবো।"
--ডেইজি রুম থেকে বেরিয়ে এসে আগুন হাতে ফোনটা ধরিয়ে দেয়। আর বলে, আমাকে ভিডিও কল করবে। আমি তোমাকে খুব মিস করবো। সাবধানে থাকবে কিন্তু।"
--ঠিক আছে আমার মিষ্টি বোন।"
--গাড়ি চলেছে আপন গতিতে। বাইরের সুন্দর পরিবেশ দেখে কারো মন খারাপ থাকতেই পারে না। ঠিক আগুনের একটু মন খারাপ ছিলো বাট এখন নেই। প্রকৃতির কাছে মন খারাপ এক নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। "হোটেলে উঠেই গভীর ঘুমে ডুবে গিয়েছে সবাই।
--রাইসা আগুনের ফোনে কল করেছিলো অনেক বার কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। বাধ্য হয়ে ডেইজিকে কল করে। ডেইজি বলেছে, ভাইয়া আমায় ফোন করেছে হোটেলে উঠেছে।'
--রাইসা ঠিক আছে বলে কেটে দেয়।"
______
নীধি পরিকে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে। জানালের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ি আসার শব্দ শুনে নিচের দিকে তাকায়। জোয়ান এসেছে দেখে ক্ষীণ হাসলো নীধি৷ একটু পর জোয়ান রুমে চলে আসলো।" নীধি ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো। বাইরে কি ঠান্ডা। জানালা বন্ধ করে দেও।"
--হুম বন্ধ করছি।"
--খুব খিদে পেয়েছে খেতে দেও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।"
--নীধি খাবার বেরে বসে আছে। জোয়ান এসে বসে পরে। খাবার মেখে নীধির মুখের সামনে ধরে। নীধি চুপচাপ খেয়ে নেয়। জোয়ান এখন রাতে নীধিকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। নীধিও জোয়ানকে ছাড়া খায় না। এই একটা মানুষ তার সব।"
--খাওয়ার পর রুমে গিয়ে বসে পরে। নীধি জোয়ানের পাশে বসে জোয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে, একটা কথা বলবো।"
--জোয়ান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, একটা কেনো হাজারটা কথা বলো।"
--বাইরে হাঁটতে যাই।"
--ঠিক আছে চলো।"
--দুজনে হাতে হাত রেখে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। বাইরে কত মানুষ নিজের কাজে মগ্ন। সামনেই একটা চায়ের দোকান সেখানে গিয়ে দুজনে চা খেতে বসলো।চায়ের দোকানের লোকটা জোয়ানকে চেনে প্রায় এসে চা খায়। কুশল বিনিময় করে চা খেতে শুরু করলো। খাওয়া শেষ করে বাঙলোর দিকে পা বাড়ায়।
--জোয়ান নীধির কানে কানে বলে,নীধি তুমি কি আমাকে বাবা ডাক টা শুনতে দিবে না।"
--কেনো দিব না, সময় হোক।"
--কবে সময় হবে?"
--জানি না।"
--বলো না, আমি কিন্তু সিরিয়াস। যদি নিতে চাও বলে দাও স্বামীর কাছে লজ্জা পেতে নেই বুঝলে।"
--নীধি জোয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে, হ্যাঁ।
--বাঙলোতে এসে পরির কাছে আসে নীধি। পরি সেই আগের ন্যায় শুয়ে আছে। পরির কপালে চুমু দিয়ে দেয়। পরিকে তার নিজের সন্তানের মতোই ভালো বাসে।" জোয়ান নীধিকে ডাকছে। নীধি পরির কাছ থেকে উঠে আসে জোয়ানের কাছে। নীধি আসতেই জোয়ান কোলে তুলে নেয়।
--কি করছেন কি?
--কি আবার ভুলে গেলে এতো তারাতাড়ি। সমস্যা নেই রুমে নিয়ে যাই তারপর বোঝাবো। জোয়ানের কথা শুনে জোয়ানের টি-শার্ট খামছে ধরে। মুখ গুঁজে দেয় তার বুকে। জোয়ান রুমে ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
___________
সকাল সকাল রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছে আগুনের ফ্রেন্ড রা সাথে আগুন আছে। শীতের কারণে রাস্তা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। আগুনের ফোন বেজে উঠার কারণে সবার পিছনে পড়ে যায় আগুন। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে বাবা নাম টা। রিসিভ করে নেয়।
-- আফজাল ও পাশ থেকে বলে, তোকে কি এই সময়টাই ঘুরতে যেতে হবে। সামনে নির্বাচন, পরিস্থিতি পুরাই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে কত টাকা লাগিয়েছি তুই জানিস তো। তার পরেও জেতার সম্ভাবনা কম।"
--এখানে আমি কি করতে পারি। আমি কি চেষ্টা করেনি। তোমার কি কথা শুনি নি বলো দেখি।
--আমাদের গোপন কথা গুলো কে পাচার করছে এটাই বুঝতে পাচ্ছি না। আমরা যা করতে চাচ্ছি সেটা আগে থেকেই অন্য দল করে নিচ্ছে। এভাবে তো আর জেতা যাবে না।"
-- ঠিক আছে কয়েক দিন পর বাসায় ফিরে দেখছি কি করা যায়।"
--ঠিক আছে।"
--আগুন ফোনটা কেটে দিয়ে, সামনের দিকে তাকায়। সামনেই একটা ছোট বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি আসছে বাচ্চা টার দিকে। দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে সরিয়ে নেয়।"
--বাচ্চা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আগুন বুকে লুকাচ্ছে।
" এই মা মনি ভয় পেয়েছো।"
--বাচ্চাটা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। আগুন কে দেখা মাত্রই হেসে দেয়। বাচ্চাটার এমন হাসি দেখে আগুনও হেসে দেয়।"
--নাম কি তোমার?"
-- পরি।"
--তুমি একা বেরিয়েছো কেনো? তোমার মা কোথায়?"
--আমার মা নেই, আমাকে ছেড়ে ওই আকাশে চলে গেছে। কিন্তু আমার একটা আন্টি আছে আমাকে মায়ের মতোই দেখে। আন্টি রান্না করছিলো একা একা ভালো লাগছিলো না। আবার নানা অফিসে চলে গেছে৷ চাচুও অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তাই বাইরে চলে এসেছি।"
--একটা বৃদ্ধ লোককে দৌড়ে আসতে দেখে পরি আগুনকে বলে, আমাকে লুকিয়ে রাখো। দারোয়ান নানা আসছে আমাকে নিয়ে যাবে।"
--বৃদ্ধ লোকটি বলে, পরি বোনু তুমি এই খানে আসছো। ও দিকে তোমাকে খুঁজতেছে।"
--আগুন কর্কশ গলায় বলে, আপনারা কোন ধান্দায় থাকেন এখনে বড় একা এক্সিডেন্ট হয়ে যেত।"
--কি বলেন। হায় হায় স্যার জানতে পারলে আমার চাকরি চলে যাবে।" পরি বলে,
--তুমি চলে যাও আমি যাবো না কোথাও। আমি আঙ্কেলের সাথে থাকবো।"
-- তা কি করে হয়।"
-- তুমি গিয়ে আন্টিকে বলো আমি ঠিক আছি। আর আমি নানুর বাসায় আছি। আঙ্কেল আমার সাথে চলো।" পরি আগুনকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। আগুন কিছু না বলে পরির সাথে যেতে থাকে।"
--পরি তার রুমে নিয়ে যায়। পরির রুম টা অনেক সুন্দর করে সাজানো। ছোট বাচ্চার রুম যেমন হয়। আগুন পরি কে বলে,
-- বাহ! তোমার রুমটা তো অনেক সুন্দর।"
--পরির রুমটা দেখতে গিয়ে একটা ফটো ফ্রেমের দিকে দৃষ্টি যায়। সেই ফটো টা দেখতে পুরনো এক অতীত যেন মস্তিষ্কে হানা দিলো।"
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code