Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ১, লেখক বর্ষা রায়

 

এই প্রথম বার নি'ষি'দ্ধ পল্লীতে এসেছে জোয়ান। এসেই একটা বোরকা পড়া মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে যায়। জোয়ান বি'র'ক্ত হয়ে মেয়েটি'কে বলে, তোমার সাহস হয় কি করে এই জোয়ান চৌধুরীর সাথে ইচ্ছে করে ধাক্কা লাগার। পতিতা হয়ে তোর সাহস দেখে জাস্ট অবাক আমি!তোদের মতো পতিতারা সব ছেলেকে'ই এক ভাবিস তাই না। এই জোয়ান চৌধুরী কোনো নোংরা মেয়ের দিখে মুখ ফিরেও তাকায় না।
--মেয়েটি ভয়ার্ত কন্ঠে বললো, আসলে আমি এই প্রথম বার এখানে এসেছি আর আমি পতিতা নই।"
--এতো রাতে বোরকা পড়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে এসেছিস। আবার মিথ্যা কথা বলছিস তুই পতিতা না, হাস্যকর বিষয়। জোয়ান কথা গুলো বলে হালকা হাসলো।"
মেয়েটি মাথা নত করে বললো,
--সত্যি বলছি, আমি পতিতা না। আর আমি ইচ্ছে করে আপনাকে থাক্কা দেই নি। মেয়েটি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আমি পতিতা না। আমাকে আজকে একটা লোক এই জায়গার কথা বলেছিলো, তাই এসেছি। বলেছিলো আমাকে চাকরি দিবে। কিন্তু আমি জানি না এটা কোন জায়গা। কি হয় এখানে। আমার মা খুব অসুস্থ বাবা মারা যাওয়ার মাত্র ৩ মাস হয়েছে। চাকরির জন্য অনেক জায়গায় গেয়েছি কিন্তু কেউ চাকরি দেয়নি।"
--জোয়ান মেয়েটির কান্না দেখে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো, ঠিক আছে ঠিক আছে কান্না করতে হবে না।"
--পিছন থেকে একটা লোক এসে দাঁড়ায়। মুখে হাসি নিয়েই বলতে শুরু করে, মামা আপনি কি এখানে নতুন।"
--আমি এখানে কোনো পতিতার সাথে খেলতে আসি নি। আমি আমার ভাইকে খুঁজতে এসেছি। সে এখন এখানেই আছে আমার ধারণা।"
--মামা এখানে তো অনেকই আসে, আপনার ভাই কে সেটা তো বলতে পারবো না।"
--গালের মধ্যে ঠাঁটিয়ে একটা চর মানলে সব বলতে পারবি। খারাপ কাজ করিস আবার আমাকে মামা বলে ডাকা হচ্ছে। জোয়ান কর্কশ কন্ঠে বললো, চিনিস আমি কে?
--মেয়েটি বলে উঠলো, তখন এই লোকটাই আমাকে এখানে আসতে বলেছিলো।"
--জোয়ান মেয়েটির দিকে এক পল তাকিয়ে,লোকটির দিকে এগিয়ে গিয়ে শার্টের কলারটা ধরে। তারপর লোকটির গালে পর পর চারটা থাপ্পড় মেরে দেয়। তোদের মতো লোক এই সমাজে আছে বলেই অনেক মেয়ে নিজের শরীর বিক্রি করে দিচ্ছে। খারাপ পথে চলে যাচ্ছে শুধু তোদের কারণে।
--স্যার আমাকে মারবেন না, মাফ করে দেন আপনার পায়ে পড়ি।"
--তোকে মাফ করবো ভাবলি করে, আজ যদি এই মেয়েটার সাথে দেখা না হতো, তাহলে কি হয়ে যেতো আজকে ওর সাথে। সারা জীবনের জন্য শরীরে কলঙ্কের দাগ লেগে যেতো। ফুলের মতো জীবন টা নষ্ট হয়ে যেতো এক নিমিষেই।"
--স্যার আমি আর এমন করবো না। আপনার ভাইয়ের নাম বলে দেন, আমি আপনাকে বলে দিব।"
--রাশ চৌধুরী।"
--লোকটি চোখ বড় বড় করে তাকায় জোয়ানের দিকে। রাশ মামা আপনার ভাই। আশে পাশে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে চিল্লিয়ে উঠে, ওই যে রাশ মামা পালাচ্ছে।
--জোয়ান লোকটির কলার ছেড়ে দিয়ে পিছন দিকে তাকায়। কালো চাদর গায়ে মুরিয়ে পালাচ্ছে। এদিকে লোকটি ছাড়া পাওয়ায়, এক মুহুর্ত দেড়ি না করে দৌড় দেয়।"
--জোয়ান চিৎকার করে ডাকছে,রাশ, এই রাশ দাঁড়া বলছি।"
--জোয়ানের কথায় কর্ণপাত না করেই অন্ধকারে হারিয়ে গেলো রাশ।"
--জোয়ান রাগে চোয়াল শক্ত করেছে। পায়ের কাছে একটা বোতল ছিলো স্ব জোড়ে একটা লাত্থি মারে। পাশে থাকা মেয়ে ভয় পেয়ে যায়। জোয়ান নিজের স্থান ত্যাগ করে গাড়ির দিকে যায়। মেয়েটার কথা তার মাথায় নেই। তার শুধু একটাই কথা মাথায় ঘুরছে, রাশ কে পেলে খুন করে ফেলবে। সাহস হয় কি করে ওর নিষিদ্ধ পল্লীতে আসার। গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই জোয়ানের কর্ণকুহরে একটা মেয়ের আর্তচিৎকার ভেসে আসে।"
--জোয়ানের মনে পড়ে যায় তখন কার মেয়েটির কথা। দৌরে আসে সেই জায়গায়, এসেই দেখতে পায় একটা মাতাল লোক মেয়েটির হাত ধরে টানছে। মেয়েটি কান্না করছে আর বলছে, আমাকে ছেড়ে দেন আমি বাড়ি যাবো।"
--আরে ডার্লিং তুই চলে গেলে আমার প্রানের জ্বালা মেটাবে কে বল। তোকে আমি ছাড়ছি না। আর তুই তো পতিতা, তাহলে এমন করছিস কেনো।পতিতারাও কি এমন করে চিল্লায় বাঁচার জন্য। তারা তো তাদের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়। কথা গুলো বলে হাসতে শুরু করলো। এই হাসি বেশিক্ষণ টিকলো না।
--জোয়ান এসে স্ব জোড়ে লাত্থি মারে লোকটিকে। লোকটি নিজেকে সামলাতে না পেড়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। মেয়েটি দৌড়ে এসে লুকিয়ে পরে জোয়ানের পেছনে। তোকে তো আমি,কথাটা বলেই হাতের কাছে একটা লাঠি পেয়ে লোকটিকে ধামাধাম পেটাতে থাকে। রাশের রাগ টা লোকটির উপর ছুঁড়ে দেয়। লোকটির মার খাওয়ার পরেও কেমন বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো। জোয়ান লাঠিটা লোকটির উপর ছুঁড়ে দেয়। মেয়েটির হাত ধরে নিয়ে যায় গাড়ির দিকে। গাড়িতে উঠিয়ে দেয় মেয়েটিকে, সাথে নিজেও গাড়িতে উঠে যায়। পানির বোতল বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দেয়।
--মেয়েটি মুখ থেকে বোরকা টা তুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয়। জোয়ান আর চোখে মেয়েটির দিকে একবার তাকালো। তবে এই তাকানোই যে তার চোখ আটকে গেলো। ল্যামপোস্টের আপছা আলোয় মেয়েটির মুখ জ্বলজ্বল করছে। ঠোঁট জোড়া গোলাপি, পানি খেয়ে ভিজে গিয়েছে। মেয়েটি পানি খেয়ে জোয়ানের দিকে বোতল এগিয়ে দেয়। জোয়ান এখনো তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। মেয়েটির চোখের কি চাহনি, একটা মেয়ের মুখে এতো টা মায়া ছড়িয়ে থাকে এই মেয়েকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না। আর আগে কত মেয়েকে দেখেছে। কিন্তু এই অপরিচিত মেয়েটির মতো না।"
--জোয়ানের এমন তাকানোতে মেয়েটি মুখ নত করে নেয়। নিজের বোরকা টা নামিয়ে মুখটা ঢেকে নেয়।
পাশ দিয়ে ট্রাক যাচ্ছিলো, ট্রাকের শব্দে জোয়ানের ধ্যান ভাঙ্গে। মেয়েটির কাছ থেকে বোতলটি নিয়ে নেয়।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেয়েটিকে বলে, নাম কি তোমার?
--নীধি।"
--জোয়ান নীধিকে তার বাড়িতে নামিয়ে দেয়। হাতে দুই হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দেয়।" এটা নিয়ে তোমার মাকে ওষুধ কিনে দিও, আমার কাছে আর টাকা নেই।
কাল এসে দিয়ে যাব। আর হ্যাঁ বাড়ির বাইরে বের হবে না। এই কার্টে আমার সব কিছুই লেখা আছে। দরকার পড়লে ফোন করে নিও।"
--নীধি জোয়ানের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। চোখ দুটো ছলছল করছে। আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পাচ্ছি না।"
--লাগবে না ভিতরে যাও। আর হ্যাঁ বাইরে কিন্তু বের হবে না।"
--নীধি মাথা নাড়িয়ে ভিতরে চলে যায়।"
--জোয়ান গাড়ি নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে। ডাইনিং রুমে অনামিকা চৌধুরী বসে ছিলো। জোয়ান কে হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে আসতে দেখে অনামিকা দাঁড়িয়ে পরে। কি হয়েছে জোয়ান?
--কি হয়নি সেটা বলো, তোমার গুনধর ছেলে কতটা নিচে নেমে গেছে। আমার ভাবতেও ঘ্রিনা হয় ও আমার ভাই। ডাকো তোমার ছেলেকে, ওকে আমি মেরে ফেলবো আজকে। এতো কষ্ট আমি কার জন্য করছি। তোমাদের জন্যই তো, তাহলে কি করে পারলো মা, এই প্রতিদান দিলো ও আমাকে। কথা গুলো বলেই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে জোয়ানের।
--অনামিকা জোয়ানের কথা শুনে, রাশকে ডাকে। রাশ রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
--কি করেছিস তুই?"
--রাশ মাথা নত করে আছে, মুখ দিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারণ করছে না। সে জানে এই মুহুর্তে বেশি কথা বললে, এতে বিপরী হবে। জোয়ানের যে পরিমাণ রাগ, হয়তো এই মুহুর্তে আধমরা করে দিতে পারে। রাশ নিজের দোষটা অস্বীকার করতে পারবে না। তাই সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
--জিজ্ঞেস করো তোমার ছেলে কে, কেনো চুপ করে আছে সে? রাশের কাছে গিয়ে গালে ঠাঁটিয়ে দু'টো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রাশের ঠোঁট দিয়ে রক্ত পড়ছে। তবুও কোনো কথা বলছে না।"
--কি করে পারলি রাশ। তোকে আমি কোনো দিন বাবার অভাব বুঝতে দিয়েছি। কি দেই নি তোকে, যা চেয়েছিস তাই দিয়েছি। তারপরেও তুই কি করে নিষিদ্ধ পল্লীতে গেলি।"
--নিষিদ্ধ পল্লীর কথা শুনে অনামিকা দু'পা পিছিয়ে গেলো। তার আদরের ছোট ছেলে তাও আবার নিষিদ্ধ পল্লীতে। নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না। কি বলছিস কি জোয়ান? সত্যি রাশ সেখানে গিয়েছিলো?
--মা আমি কয়েকদিন থেকেই রাশের এই কুকর্মর কথা শুনছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নি। আমার ভাই এমন টা করতেই পারে না। বাধ্য হয়ে আমাকে সেখানে যেতে হয়। সেখানে গিয়ে দেখি তোমার ছেলে গায়ে চাদর জড়িয়ে পালিয়ে গেলো। তোমার ছেলেকে নিশ্চয়ই আমার চিনতে ভুল হবে না। তোমার ছেলে কি জানতো তার সব খবর আমার কাছে আসে। আজকের পর থেকে আমার কোনো ভাই নেই। জোয়ান কথাটা বলে চলে যেতে ধরলেই রাশ এসে জোয়ানের পা ধরে ফেলে। ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দেও, আমি আর কোনো দিনো এমন করবো না। আমি ভালো হয়ে যাবো। প্লিজ ভাইয়া এক বার সুযোগ দেও। তুমি দেখ আমি সত্যি ভালো হয়ে যাব। আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিও না।"
--রাশ আমার পা ছেড়ে দে। তোর কোনো কথাই এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না। প্লিজ রাশ আমার রাগ টা আর বাড়িয়ে দিস না।"
--রাশ পা টা ছেড়ে দেয়। জোয়ান নিজের রুমে চলে যায়। রাশ অনামিকার কাছে এসে বলে, তুমি অন্তত একটা বার সুযোগ দেও। আমি আর এমন কিছুই করবো না। আমি সত্যি ভুল করে ফেলেছি।
--অনামিকা ছেলের প্রতি অভিমানী কন্ঠে বলে, আমি ভাবতেও পাচ্ছিনা, তুই এমন কিছু করবি। কি করবো বল মায়ের মন, ভালো হয়ে যা বাবা, তোর ভাইয়া যে ভিষণ কষ্ট পেয়েছে। আর এমন কিছু করিস না যাতে তোর দাদা সমাজে মুখ দেখাতে না পারে। তোর দাদা যে তোকে নিয়ে খুব গর্ব করে রে। চারিদিকে তোর দাদার সুনাম। সেটা নষ্ট করে দিস না। কথা গুলো বলেই অনামিকা চলে যায়।"
--রাশ সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।"
--সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার জন্য ডাইনিং রুমে আসে রাশ। আম্মু আমাকে খেতে দেও আমি কলেজ যাবো। অনামিকা খাবার হাতে নিয়ে চলে আসে। কোনো কথা না বলেই খাবার দিয়ে চলে যায় কিচেনে। অনামিকার এই রকম নিরবতা দেখে রাশের বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে। অনামিকা প্রতি দিন রাশকে খুব যত্নে করে খাইয়ে দিতো। মাথা চুমু দিতো কিন্তু আজকে তার ব্যাতিক্রম। সে বেশ বুঝতে পাচ্ছে,তার আম্মু অভিমান করেছে। তাই খাবার না খেয়ে চলে যায় কলেজে।"
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)
#সূচনা_পর্ব
#ভালোবাসি_ওগো_মায়াবী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code