Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ১৩, লেখক বর্ষা রায়

 


খেতে বসে অনামিকা আগুনের উদ্দেশ্য বলে, বাবা তোমায় একটা কথা বলার ছিলো।

" হ্যাঁ মা বলো।"
--বলছি যে রাইসা কে এবার এ বাড়ির বউ করে নিয়ে আসো।"
--মা আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আরো কিছুটা সময় যাক। তুমি বরং ডেইজিকে বিয়ে দিয়ে দেও। কতো দিন আর বাপের বাড়িত থাকবে। শ্বশুড়বাড়িতে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে।" পাশেই ডেইজি বসে ছিলো, জোয়ানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করো তাকায়।"
--এভাবে কি দেখছিস খেয়ে ফেলবি নাকি।"
--আমার একটা ক্লিয়ার কথা শুনে রাখো। তুমি যে দিন বিয়ে করবে আমিও সেদিন বিয়ে করবো।"
--জোয়ান মজা করে বলে, আমরা যে ঠিক করেছি তোকে আগে বিয়ে দিব।"
--তোমরা আমাকে তাড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছো কেনো বুঝলাম না। বোঝা হয়ে গেছি নাকি আমি।"
--পাগলি একটা ফাইজলামি বুঝিস না।"
--কেনো বুঝবো না, আমি ছোট না। আর আমি যা বলেছি তাই হবে।"
--অনামিকা বলে তোদের যা ভালো মনে হয় তাই করিস।"
--সবাই খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায়। নীধি পরি কে নিয়ে আগুনের রুমে চলে যায়। রুমে আগুনকে দেখতে পায় না। বেলকনি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া আসছিলো। বুঝতে আর বাকি নেই। নীধি পরি কে ঘুম পারিয়ে দেয়।
--আগুনের ফোন বেজে উঠে। ফোনটা রিসিভ করে বলে, হ্যালো।"
--আপনি বুঝি আমার জন্য ওয়েট করছিলেন।"
--না।"
রাইসা মুখটা ভোতা করে বলে, তাহলে আপনি কি করছিলেন।"
--আমি তো, কোনো এক মায়াবীর প্রেমে পড়ে দেবদাস হয়েছি।"
--রাইসা আগুনের কথা শুনে মুচকি হাসে।" তারমানে আপনি এখন সিগারেট খাচ্ছেন।"
--বুঝলে কি করে?"
-- আপনার মায়াবী কিন্তু আপনার মন পড়তে পারে।"
--ওহ আচ্ছা।" তাহলে বলো তো আমার মন এখন কি চাচ্ছে।"
--আপনার মায়াবীকে কাছে পেতে মন চাচ্ছে।"
--আগুন ক্ষীণ হেসে বলে, বাহ! তাহলে চলে আসো।"
--এতো রাতে আমি একা, আপনি চলে আসেন।"
--আগুন একটু ভেবে বলে, ঠিক আছে।" তুমি বাইরে বের হও আমি আসছি।"
--আগুন রুমে এসে দেখে নীধি পরিকে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।আগুন নীধিকে বলে, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।"
--ঠিক আছে,আমি পরির কাছে আছি।"
--আগুন গাড়ি নিয়ে রাইসার বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। রাইসা গেট খুলে গাড়ির কাছে আসে। তারপর গাড়িতে উঠে যায়।"তারপর আগুনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, কোথায় যাবো আমরা?"
--যে দিকে দুচোখ যায়।" আগুন ড্রাইভ করা শুরু করে।
--আগুনের দিকে এক পলক দেখে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি করে।"বাহিরের বাতাস এসে রাইসার চুল গুলো কে এলো মেলো করে দিচ্ছে। রাইসা বিরক্ত হয়ে চুলো গুলো ঠিক করতে শুরু করে।
--আগুন গাড়ি দাঁড় করায়। রাইসা আগুনের দিকে তাকায়। এখানে কেনো থামালেন?
--আগুন জানালা বন্ধ করে দেয়।"
--তা দেখে রাইসা বলে, বন্ধ করলেন কেনো?
--কারণ আমার মায়বীর চুল উড়ছে। সে ডিসটার্ব ফিল করুক আমি চাই না। "
--রাইসা আগুনের গাল দুটো টেনে দেয়।"
--গাল না টেনে দিয়ে, গালে একটা দিতেই পারতে।"
--আগুনের কথা শুনে রাইসা পুরা থ হয়ে গেছে। বাট এই সুযোগটা সে হাত ছাড়া করতে চায়। সে সুযোগের ব্যবহার টা করবে। তাই আগুনের গালে শব্দ করে চুমু বসিয়ে দেয়।"
--রাইসা চুমু দেওয়ায় আগুন কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো। তার বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। সত্যি সত্যি যে চুমু বসিয়ে দিবে বুঝতে পারো নি। গালের মধ্যে হাত দিয়ে রাইসার দিকে তাকায়। রাইসা মিঠি মিঠি হাসছে।"
--মাথাটা ঝাঁকি দিয়ে আবার ড্রাইভ করতে শুরু করে।"
--কিছুটা দূরে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ায়। রাইসাকে বলে, কিছু খাওয়ার জন্য। সে কফি আনতে বললো।"
--দু'টো কপি হাতে নিয়ে ফিরে এলো। কফি খাওয়া শেষ হলে বাসার দিকে রওনা দেয়। রাইসা আরো কিছুক্ষণ থাকতো একসাথে। কিন্তু আগুন শুনলো না। ঠান্ডার মধ্যে বাইরে থাকার কোনো মানে হয় না। তাকে কোনো রকম অসুস্থ করতে চায় না।"
--বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।"
--জোয়ান রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। নীধি সেই যে গেলো এখনো অব্দি তার ছায়া পায়নি।" বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। এদিকে ঘুম এসে চোখে হানা দিচ্ছে। ল্যাপটপ টা রেখে দিয়ে ডেইজির রুমে যায়। ডেইজি ফোনে গান শুনছিলো জোয়ানের ডাকে রুমের বাইরে চলে আসে।
--কি হয়েছে ভাইয়া?
--তোর ভাবি কোথায়?"
--জানি না, হয়তো আগুন ভাইয়ার রুমে।"
--দুজনে পা বাড়াতে ধরলে, আগুন চলে আসে।"ডেইজি বলে, ভাইয়া তুমি আবার কখন বাইরে গেলে?"
--গেছিলাম, তোরা এখানে কি করিস?
--নীধি আপুকে খুঁজছি।"
--কেনো নীধি পরির সাথে নেই।
--আমরা দেখি নাই এখনো।"
--ওহ।"
--আগুন রুমে যাবে তখনি ডেইজি হাত টেনে ধরে।
"কি হলো হাত ধরে কেনো টানছিস?
--ডেইজি আগুনের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, ভাবির কাছে চুমু নিয়েছো তাই না। মিথ্যা বলবে না, আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি তোমার গালে।"
--ডেইজির এমন কথায় হকচকিয়ে উঠে। শুকনো ঢোক গিলে বলে, আরে তেমন কিছু না। ছোট একটা।"
--জোয়ান হিহি করে হাসছে।" তাই বলে প্রমান রেখে দিবি। " প্রমাণ না রাখলে আমরা কি করে বুঝবো ভাইয়া বলো।"আগুন বলে চুপ করে থাক পাঁজি।
--আমি পাঁজি হয়ে গেলাম।"
--তা না তো কি। তোর চোখেই কেনো এসব পড়ে।"
--ডেইজি ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে, পড়লে আমি কি করবো। দোষটা তো তোমাদের।"
--হয়েছে।"
--রুমে এসে দেখে নীধি ঘুমিয়ে পড়েছে পরির পাশে। জোয়ান গিয়ে নীধিকে কোলে তুলে নেয়। ঘুমের ঘোরে নীধি জোয়ানকে আরো আঁশটে পিঁশটে জড়িয়ে ধরে।"
জোয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। "
--ডেইজি বলে, দেখলে ভাইয়া কি রোমান্টিক...
পরের কথাটা আর বলতে ওারে না। আগুন মুখটা চেপে ধরে রুমের বাইরে বের করে দেন। তোর মুখে এসব কথা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ঘুমা গিয়ে যা।"
--না থাকে না। হন হন করে চলে যায় ডেইজি।"
__________
সকাল সকাল উঠে যে যার কাজে লেগে পড়েছে। সবাই খাওয়া করে চলে যাচ্ছে। নীধি পরিকে খাইয়ে দিয়ে স্কুল নিয়ে যাবে। বাসায় থাকবে অনামিকা একাই।" রাস্তা দিয়ে রাশ আর ডেইজি হাঁটছে। হুট করেই রাশ ডেইজি কে একটা প্রশ্ন করে বসে, আপু তোমাকে আগে বাসা থেকে বের হতে দিতো না কেনো?
--ডেইজি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, আমি একদিন একটা লোককে খুন করতে দেখেছিলাম। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। খুব ভয়ে ছিলাম কয়েক দিন। তখন বাবা আর ভাইয়া বাসার বাইরে যেত দিতো না।" আবার শত্রু ছিলো, এই ভয়ে আরো যেতে দিতো না।"
--ওহ আচ্ছা।"
--হুম।
--রাশ তার বন্ধুদের দেখতে পেলে চলে ডেইজিকে বাই বলে চলে যায়।"
--ডেইজি গানে হেটফোন কানে গুঁজে দিয়ে গান ছেড়ে হাঁটতে থাকে। কলেজে এসেই ক্লাসে মনোযোগ দেয়। কলেজে তেমন একটা ফ্রেন্ড নেই তার। যেহেতু, কলেজে বেশি একটা আসে নি বাসাতেই সবসময়। হুট করে ক্লাসে ফাহিম কে দেখতে পায়।"
--ডেইজি প্রথমে দেখে বিশ্বাস করতে পারেনি। পরে চোখ কচলে আবার দেখলো, না সামনে তো ফাহিম।"
--আশে পাশে প্রত্যেকটা মেয়ের মুখে ফাহিমের নাম। এমন সুদর্শন স্যার এর আগে কখনো দেখি নি। তাও আবার এই কলেজে। নতুন স্যার নাকি কলেজের মেয়ের নজর কেড়ে নিয়েছে। স্যারকে দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।" এদিকে ডেইজি বিষ্ময়ের চরম পর্যায়ে। এটা কি হচ্ছে। এই লোক কবে জয়েন করলো, আমাকে বললো।"
--ডেইজির পাশে থাকা এক মেয়ে বলে, স্যারটা অনেক কিউট না। "
--কথাটা শুনেই রাগ টা যেনো ফুরফুর করে বেড়ে গেলো।" কেনো তোমার পছন্দ হয়েছে। "
--মেয়েটা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে, হ্যাঁ খুব।"
--তাহলে তোমার স্যারকে বলে দেওয়া উচিত।" আর হ্যাঁ আমাকে ডিসটার্ব করবে না।"
--যাক বাবা ভালো কথা তো বললাম।"
--কি করে ভালো কথা বললে, স্টুডেন্ট হয়ে স্যারকে নজর দিচ্ছো এটা কি ভালো কথা।"
--পছন্দের কথা বলেছি।"
--ওকে তোমার হয়ে আমি বলে দিচ্ছি। ডেইজি দাঁড়িয়ে বলে, স্যার একটা কথা বলার ছিলো।"
--ডেইজিকে এভাবে দাঁড়াতে দেখে, চশমাটা ঠিক করে নিলো। তারপর বললো, বলো।"
--মেয়েটাকে বলে, তেমার নাম কি?
--মেয়েটা ভোতা মুখ নিয়ে বলে, আফরিন।"
--আফরিন আপনাকে পছন্দ করে।"
--ডেইজির এমন কথা শুনে ভিসম খায় ফাহিম। এই মেয়ে যে এমন কথা বলবে বুঝতেই পারেনি।"
--ডেইজি আফরিনের হাতটা ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়।"
--পুরো ক্লাস আফরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।"
" ফাহিম একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়, তারপর বলে, আমি একজন শিক্ষক। আর এটা কলেজ, পড়াশোনা করতে এসেছো।"আর সবাইকে বলে রাখি, আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর আমার শিক্ষকতায় আসার ইচ্ছে ছিলো না। বাবার কারণে আসা। তাই নেক্সট টাইম এমন কিছু না শুনি।"
--বিয়ের কথা শুনে পুরো ক্লাস নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আফরিন চুপ করে বসে পরে। সবাই ভোতা মুখ করে জবাব দেয়, ঠিক আছে স্যার।"
--পিছন থেকে একটা মেয়ে বলে, বিয়ে ঠিক হয়েছে তো তাতে কি হয়েছে। আপনি তো আমার ক্রাশ থেকেই যাবেন।"আপনাকে দেখার জন্য প্রতি দিন কলেজ আসবো।"
--ডেইজি মেয়েটার কথা শুনে বলে, স্যার পিছনে কথা বলছে। এতো কথা ক্লাসে হবে কি জন্য।
--ফাহিম ভালো করে বুঝতে পাচ্ছে ডেইজি রেগে গেছে।" পুরো ক্লাসকে শান্ত করে কয়েকটা কথা বলে, চলে যায়।"
--ফাহিম চলে যাওয়ায় আফরিন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, ক্লাসে সবার সামনে মানসম্মান আর থাকলো না। এই যে মেয়ে, তুমি এমনটা করলে কেনো?
--এই যে মেয়ে না বলে নাম ধরে ডাকো। আর আমার নাম ডেইজি। আমি যা করেছি ভালো করেছি।"
" কি করে ভালো করেছো, সবার সামনে ছি কি একটা অবস্থা। তাও আবার নতুন স্যার।"
--এটা কিছুই ছিলো না।"
--সব দোষ তোমার।
--এই যে আফা, খবর দার আমাকে দোষ দিবি না।"
--এ আফা কাকে বলছো। আবার তুই করে বলছো।"
--হ্যাঁ তুই আফরিনের আফা। এতে বড় নাম উচ্চারণ করতে পারবো না। আর তোকে তুই বলেই ডাকবো।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code