Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ১৫, লেখক বর্ষা রায়


 চারিদিকে কোলাহল পরিবেশে গমগম করছে। ডেইজিকে পার্লার থেকে সাজাতে এসেছে। নীধিকেও সাজতে বলেছে কিন্তু নীধির পার্লারের সাজ বেশি একটা পছন্দ না। সে নিজেই সাজবে বলে, নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

ছোট্ট পরি আগুনের সাথেই সব সময় আছে। তাকে ছাড়া সে কোথাও যাবে না।"
--আলমারি থেকে লাল রঙের একটা শাড়ি বের করে পড়ে নেয় নীধি। কানে স্বর্নের দুল, গলায় মালা, হাতে চুরি। লম্বা চুল গুলো কোমর অব্দি ছেড়ে দিয়েছে।"
ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিয়েছে, চোখে কাজল।
আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। জোয়ান রুমে ঢুকতেই চোখে পড়লো তার মায়বীকে। জোয়ানকে দেখেই নীধি এগিয়ে আসে।" কেমন লাগছে আমায় বলুন তো?
--হুম সুন্দর লাগছে। এক মিনিট ওয়েট।" জোয়ান ড্রয়ার থেকে একটা বেলি ফুলের মালা বের করে নীধির দিকে এগিয়ে আসে। তারপর নীধিকে আয়নার সামনে বসিয়ে দেয়।" তারপর সুন্দর করে মালাটা চুলে গুঁজে দেয়।"তারপর নিজের মুখটা নীধির কাঁধে রেখে বলে,এবার ঠিক আছে। আমার বউকে অনেক সুন্দর লাগছে।
--আমি আমার বউকে কারো সাথে তুলো না দিব না।" তুমি আমার কাছেই আমার মতোই সুন্দর।"
--এদিকে ডেইজির সাজা সবেমাত্র শেষ হলো। দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। পা টা ঝিমঝিম করছে তার। ফাহিম সাজার সময় বার বার ভিডিও কল দিচ্ছিলো। তাই ফোন অফ করে রেখে দিয়েছে।" ফোনটা হাতে নিয়ে ফাহিম কে কল করে।"
--রাগান্বিত কন্ঠে বলে, আপনি এতো ব্যাকুল হয়ে আছেন আমাকে দেখার জন্য মনে হয় এর আগে আমাকে দেখেন নাই।"
--আরে রাগ করছো কেনো অন্য দিন আর আজকের দিন অনেক তফাৎ বুঝলে। আমার বউকে আমি দেখবো এতে প্রবলেমের কি আছে।"
--কোনো প্রবলেম নেই, ব্যস্ত না থাকলে ফোনটা রিসিভ করতাম। আর তো কিছু টা সময় তাহলে তো নিজের করে পাবেন তখন না হয় এক বারে দেখে নিয়েন।"
--ডেইজি ফোনটা কেটে দেয়।" ফাহিম মুখটা ভোতা করে আছে।"
--রাশ বাইরে দাঁড়িয়ে পানি খাচ্ছিলো, এমন সময় সামনে চোখ যায়। তার সব বন্ধুরা চলে এসেছে। তাই এগিয়ে যায়, সবার সাথে কথা বলে, লাবলুকে রাশ বলে, কি রে নীলা আসে নি।" হ্যাঁ এসেছে, পিছনে দেখ।
--রাশ পিছনে তাকাতো চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। নীলা একটা লেহেঙ্গা পড়ে এসেছে। এই প্রথম নীলাকে এরকম ড্রেস পড়তে দেখলো।"নীলা লেহেঙ্গা ভাসিয়ে হেঁটে আসছে।"
--লাবলু পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে বলে, কিরে নীলাকে কি মনের কথা বলবি না।" তোরা দু'জনে কাউকেই কিছু বলছিস না। এভাবে কি আর মনের কথা বলা যায়। দেখ আজকেই সুযোগ।"
--নীলা রাশের সামনে এসে বলে,এখানে দাঁড়িয়ে কি করসিছ তোরা ভিতরে চল।
--লাবলু সবাই কে নিয়ে চলে যায়।"রাশ নীলার সাথে হাঁটছে। রাশ নীলাকে বলে, নীলা আমি একটা কথা বলতে চাই তোমায়।"
--হুম বলো।"
--না মানে আমি কিন্তু ঘুরিয়ে পেছিয়ে কথা বলিনা। তাই বলে ডিরেক্ট বলে দিচ্ছি।" নীলা আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
--নীলা নিজের কান কে যেনো বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না। রাশ সত্যি তাকে এই কথা বলেছে। নীলা বেশ আগ্রহ নিয়ে আরেক বার বলে, কি বললে?
--রাশ একটা শুঁকনো ঢোক গিলে বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
--নীলা আলতো হেসে বলে, আমিও তোমাকে ভালোবাসি।"
--পিছন থেকে পরি দৌড়ে এসে বলে, চাচু চলো আমরা সবাই মিষ্টি মাকে আনতে যাবো।" রাশ পরিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, হ্যাঁ মা যাবো তো।"
--নীলা পরির গাল টেনে বলে,কেমন আছো পরি।"
--আমি খুব ভালো আছি।" চাচু তুমি সেদিন যে মেয়েটার সাথে কথা বলেছিলে, নীলা নাম, এই আন্টিটা কি ওই মেয়ে টা।"
--হ্যাঁ মা।"
--তুমি অনেক কিউট দেখতে।"
--তুমিও তো কিউট।" চলো ভিতরে যাই।"
--চলো।"
--কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে অনুষ্ঠান ঠিক করা হয়েছে। সেখানে জোয়ান সব কিছু সামলে নিয়েছ। ডেইজি আর আগুন কে এক গাড়িতে করে কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর অন্য গাড়িতে বাকি সবাই।
--রাইসা আর ফাহিম এসে গেছে কমিউনিটি সেন্টারে।
এদিকে ডেইজি আর আগুন এসে গেছে।" স্টেজে ফাহিম আর আগুনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডেইজি আর রাইসাকে অন্য স্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।"
--কিছুক্ষণের মধ্যে বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে যায়। তারপর বর আর কনেকে একসাথে বসিয়ে দেওয়া হয়। সবাই মিলে বিয়েটা উপভোগ করে। কিছু সময়ের জন্য সবাই আনন্দে মেতে উঠে। সময় চলে গেছে আনন্দের মাঝেই , এখন বিদায়ের বেলা। অনামিকা নিজের মেয়েকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে। ছোট্ট মেয়েটাকে নিজের কাছে নিজের মতো করে কখনোই পায়নি। সেই ছোট্ট মেয়েটা এখন নিজের নতুন জীবনে পা দিতে যাচ্ছে। আজ যদি আফজাল বেঁচে থাকতো, নিজের মেয়ের বিয়ে, নিশ্চয়ই খুশি হতো। অনামিকা ডেইজিকে ছাড়তে মোটেও ইচ্ছে করছে না। তারপরেও যেতে দিতে হবে।"
--জোয়ান এসে ডেইজিকে বুকে জড়িয়ে ধরে। কেঁদে উঠে। এদিকে রাইসার বাবা মা কেঁদে একাকার। ফাহিম রাইসাকে জড়িয়ে ধরে।" সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়, যার যার গন্তব্যে।
--বাসায় ঢুকে সবাই ফ্রেশ হয়ে নেয়। রাইসাকে আগুনের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সাথেই পরি লাফালাফি করছে। তার মিষ্টি মা অবশেষে এসেই গেলো। "
--রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। পরির ছোট মাথায় বড় বড় চিন্তাভাবনা। মিষ্টি মা জানো, যখন নীধি আন্টির বিয়ে হয়েছিলো জোয়ান চাচুর সাথে। তখন জোয়ান চাচুর রুমটাও এমন করে ফুল দিয়ে সাজানো ছিলো৷এখন দেখি বাবার রুমটাও ফুল দিয়ে সাজানো। আমি আজকে তোমাদের সাথেই থাকবো।"
--আচ্ছা থাকিও।"নীধি এসে রাইসাকে বলে, তুমি কি ফ্রেশ হয়ে নিবে। কিছু তো খেতে হবে।"
--আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।" নীধি পরিকে বলে, পরি মা চলো আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো। এখন তো তোমার মিষ্টি মা চলে এসেছে।"
--হ্যাঁ আন্টি আমি এখন খাবো।"আমার বাবা কোথায়।
--আগুন রুমে ঢুকেই বলে, পরি মা তোমার নানু ভিডিও কল করেছে। এই নেও কথা বলো।"
--পরি ফোনটা নিয়ে জামাল কে বলে, নানু তুমি আসো নি কেনো বাবার বিয়েতে। আমি তোমার উপর খুব রেগে আছি।"
--জামাল হেসে বলে, পাগলি একটা। অফিসের কাজ ছিলো তাই যেতে পারিনি। তোর নানি কে বললাম যেতে সে নাকি আমাকে ছাড়া যাবেই না।"
--তোমরা তোমাদের কাজ নিয়ে থাকো। তোমাদের কে দেখতে যে খুব ইচ্ছে করছে সেটা।"
--তা তোর বাবা আর নতুন মা কে নিয়ে চলে আয় না। এদিকে ঘুরে যাও।"
--ঠিক আছে আমি বাবা কে বলবো।" নানু আমি এখন খাব। তোমার সাথে পরে কথা বলি।" নীধি ফোনটা নিয়ে কিছু কথা বলে কেটে দেয়।"
--নীধি পরিকে নিয়ে চলে যায়। রুমে আগুন আর রাইসা রয়ে যায়। রাইসা মাথার ঘোমটা খুলে বিছানায় রাখে। একা একা সব কিছু খোলা সম্ভব নয়। ধকল গেছে আজকে। তাই আগুন কে হেল্প করতে বলে। আগুন রাইসাকে বলে, একটা দিনের ব্যাপার। আর কত কিছু পড়েছে।"
--এই দিনটাতেই তো সাজবো। যদি হেল্প করতে না চান তো বলে দিন। খামোখা প্যাঁচাল না পেরে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।" কথাটা বলেই আগুনের কাছ থেকে সরে যায়।"
--রাগ করছো কেনো?"আর আমি কি বলেছি যে আমি হেল্প করবো না। আগুন রাইসার হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।"
--আমার বউকে আমি হেল্প করবো। আর রাগ করলে রাগ কিভাবে ভাঙতে হয় এটাও আমার জানা আছে। তাই চুপ চাপ বসো আমি হেল্প করছি।"
--রাইসা কিছুই বলছে না চুপ চাপ বসে আছে। আয়নায় আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা কি সাবধানে সব কিছু খুলছে। একটুও ব্যাথা পেতে দিচ্ছে না।"
--দেখো ভালো করে আছো কিছু বাকি আছে নাকি।"
--না আর নেই। বাকি টা আমি পারবো।"
--বাকিটাও না হয় আমি হেল্প করে দেই।"
--ইশ কি শখ না। রাইসা মুখ ভেঙছি কেটে ওয়াশ রুমে চলে যায়।" আগুন ক্ষীণ হেসে কাপর নিয়ে রাশের রুমে চলে যায়।"
--রাশ রুমে নীলার সাথে কথা বলছিলো, কোথায় আছো এখন?
--বাসার সামনে আছি।"
--আচ্ছা সাবধানে যেও।"
--আগুন রাশ রাশ বলে ডাকছে।" রাশ ফোন কেটে দিয়ে বলে,হ্যাঁ ভাইয়া বলো।
--আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই।"
--আচ্ছা।"
--জোয়ান বেডে শুয়ে আছে তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।
নীধি রুমে এসে জোয়ান কে বলে, কি হলো খাবেন না।"
--ঘুম পাচ্ছে একটু ঘুমাতে দাও।"
--এক বারে খেয়ে ঘুম যাবেন উঠুন বলছি।"
--তুমি তাহলে ঘুম ভাঙানোর ওষুধ দিয়ে দেও।"
--একটা করে বাহানা খোঁজেন তাই না। নীধি এগিয়ে গিয়ে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় জোয়ানের ললাটে।"
--জোয়ান নীধির মাথায় হাত দিয়ে ধরে রেখেছে। ঠোঁট উঠিয়ে নিয়ে বলে, হয়েছে ছেড়ে দিন।
" ছাড়বো না, আমার হয়নি এখনো।"
কেউ এসে যদি দেখে কি হবে বুঝতে পাচ্ছেন। দরজা বন্ধ করে দেই নাই।"
--আসুক, আমি তোমাকে ছাড়ছি না।"
--আপনি না দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।"
--বউ কাছে থাকলে ছেলেরা এমনিতেই অসভ্য হয়ে যায়।"
--থাকবোই না আপনার কাছে।"
--আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে ।"
--নীধি চুপ করে আছে।" এই নীধি বলোনা, থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া।"
--মাথা উপর নিচ করে বুঝিয়ে দেয়, থাকতে পারবে না।"
--আপনাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারিনা। আপনি আমার অভ্যাসে মিশে গেছেন।"
#চলবে
( ভুল হয়ে থাকলে আমি দুঃখিত । ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code