Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৫, লেখক বর্ষা রায়



 ফর্সা মুখটায় কেমন মলিনতা এসে ধরে দিলো। মুখটা লাল হয়ে গেছে। নীধি এই প্রথম বার কোনো পুরুষকে কাছ থেকে কাঁদতে দেখছে। নীধির বুকটা ভারি হয়ে আসছে। জোয়ানের কষ্ট নীধি সহ্য করতে পাচ্ছে না।

--পুরুষ মানুষকে কাঁদতে নেই, পুরুষের চোখে অশ্রু মানায় না। পুরুষদের বেশি আবেগ থাকতে নেই জানেন তো।"
--জোয়ান নীধির দিকে দৃষ্টি রেখে বলে, একটু জড়িয়ে ধরতে দিবে।"
--নীধি একটু সময় নিয়ে বলে, হুম। নীধি নিজে জোয়ানকে জড়িয়ে ধরে,যদি একটু কষ্ট কমে যায়।"
--নীধি জোয়ানের প্রতি আসতে আসতে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কেনো জানি না জোয়ানের প্রতি ভালো লাগা কাজ করছে। " সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। চলুন খেয়ে নিবেন, আমি আপনাকে খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছি।"
--আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না তুমি যাও। আমি একটু একা থাকতে চাই।"
-- আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না। তারাতাড়ি চলুন আঙ্কেল চিন্তা করছে হয়তো। প্লিজ চলুন আপনি না খেলে আমারও গলা দিয়ে খাবার নামবে না৷ জোয়ান নীধিকে ছেড়ে দিয়ে মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
--কেনো? আমি তো তোমার কেউ হইনা।"
--জানি না কিছু। আপনি এখন আমার সাথে যাবেন তো যাবেন। আপনার না কাল মিটিং আছে চলুন আপনি গেলে আপনাকে আমি কোলে করে নিয়ে যাব।
--নীধির কথা শুনে জোয়ান হেসে দেয়। "জোয়ানের হাসি মাখা মুখটা আজ প্রথম দেখলো। কত সুন্দর দেখায় হাসলে। এই হাসি মাখা মুখটা দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। মানুষটা এতো কিউট কেনো। মনটা চাইছে লুকিয়ে রাখি।"
--নীধির এমন নেশা ভরা চাহনি দেখে জোয়ান হাসি বন্ধ করে দেয়। নীদির সামনে তুরি বাজিয়ে বলে, কি হলো নীধি কি দেখছো।"
-- আপনার হাসি এতো সুন্দর কেনো?"
--কি! তুমি কি আমার হাসির প্রেমে পড়লে নাকি?"
--নীধি হকচকিয়ে উঠে। শুকনো একটা ঢোক গিলে মাথা নিচ করে মাথা চুলকাতে থাকে।
--কি হলো নীধি কিছু বলো।"
--কিছু না। আপনি চলেন তো আমার সাথে আমার খিদে লেগেছে,আমি গেলাম। কথা টা বলে এক দৌড়ে ছুটে চলে যায়।"
--সিয়াম আর জোয়ান খেতে বসেছে। সাথে জামাল খেতে বসেছে। সিয়াম আর নীধি বার বার জোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জোয়ান খাওয়া বাদ দিয়ে দুজনের উদ্দেশ্যে বলে, কি হলো তোমরা দু'জনে এভাবে তাকালে আমি খাব কি ভাবে।" নীধি আর সিয়াম চুপসে যায়।"
_______
চারিদিকে অন্ধকার, দূর থকে কেউ একজন আসছে। ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে। খিল খিল করে হাসছে, আর বলছে বাবা আমি তোমার কাছে আসছি বাবা কোথায় তুমি এ দেখ আমি এখানে।
--আগুন এমন স্বপ্ন দেখে লাফিয়ে উঠে। সর্ব শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। কে এই বাচ্চা, আমার স্বপ্নে হঠাৎ করে কি করে উদয় হলো। টেবিলে রাখা গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে নেয়। এই প্রথম বার আগুন এমন স্বপ্ন দেখলো।"
--বেড থেকে উঠে বাথরুমে চলে যায়। চোখ মুখে পানি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে বসে।
" আম্মু এক কাপ চা দেও তো।"
--ডেইজি টেবিলে বসে খাচ্ছে আর চোখে আগুনের দিকে দেখে আবার খাওয়া শুরু করে।"
--আফজাল চিন্টু আর মিন্টুকে কাজে পাঠিয়েছে যে করেই হোক নির্বাচনে জয়ী হতে হবে। কত টাকা যায় যাক। কাজ ঠিক ভাবে হলো কি না চিন্তা করছে।"
--ডেইজি হাত ধুয়ে এসে আফজালের সামনে দাঁড়ায়। একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, আব্বু আমাকে ৩ লক্ষ টাকা দেও।"
--ডেইজির এমন কথা শুনে চোখ বর বড় করে তাকায়। কারণ প্রথম বার ডেইজি আফজালের কাছে এতো গুলো টাকা চাইলো, আর প্রথম। আগুন ভুরু কুঁচকে তাকায় ডেইজির দিকে।"
--আলেয়া চা নিয়ে ডাইনিং রুমে আসতেই ডেইজির কথা কর্ণকুহরে পৌঁছায়। আলেয়া আগুন কে চা দিয়ে বলে, এই মেয়ে এতো গুলো টাকা কি করবি?"
--আমি কি তোমার কাছে চেয়েছি, আর আমি কি করবো সেটা কি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। আব্বু টাকা তুমি কি টাকা দিবে কি না। আশা করি তুমি আমাকে টাকা দিবে।"
--দেখলি আগুন এই মেয়ের সাহস কি, আমাকে অপমান করছে।"
--অপমানের কি দেখলে কিছুই দেখনি এবার শুরু করবো আমি। কথাটা বলেই ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে ভুরু দুটো নাচায়।"
--আফজাল তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, ঠিক আছে।"
--আগুন আফজালের হ্যাঁ মত দেখে চা খেতে গিয়ে জিহ্বা পুড়িয়ে ফেলে। দ্রুত চায়ের কাপ টা রেখে বলে, আব্বু তুমি ওকে ৩ লক্ষ টাকা সত্যি দিবে। একবারো জিগ্যেস করলে না কেনো টাকা চাচ্ছে।"
--ওর হয়তো দরকার তাই নিচ্ছে, তোর মতো তো আর টাকা নষ্ট করেনা।"
--আমি টাকা নষ্ট করি আর যাই করি, আমার প্রাপ্য তুমি আমায় দিবে না। আমাকেও ৩ লক্ষ টাকা দেও।"
--তোকে আমি একটা কানা কুড়িও দিব না। "ডেইজির হাতে টাকার চেক টা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।"
--আগুন আফজালের উপর ভিষণ রেগে আছে। রাগান্বিত কন্ঠে ডেইজিকে বলে, তুই এতো টাকা কি করবি?"
--হি হি হি কি করবো তুমি বাইরে গেলেই বুঝবে। বাই দ্যা রাস্তা, তুমি যদি আমার সাথে যাও তাহলে আমি তোমাকে কিছুটা অংশ হলেও দিব।"
--তোর সাথে আমার কোনো কানেকশন নেই, আর আমি কোথাও যেতে পারবো না।" কথাটা বলেই নিজের রুমে যায়।" ডেইজি আগুনের পিছন পিছন যায়। রুমে ঢুকতে চাইলে বলে,
--তুই আমার রুমে কেনো বের হয়ে যা। "
-- আমি কোথাও যাব না। আরে বাবা আমার সাথে তুমি না গেলে নিয়ে যাবে কে বলো। একাই তো আমাকে বাইরে যেতেও দেও না। কারো সাথে কথা বলতেও দেও না।"
--তোর বক বক আমার ভালো লাগছে না। যা তুই এখান থেকে।"
--ডেইজি গিয়ে আগুনের পাশে বসে। আরে ভাইয়া, দেখ ১ লক্ষ টাকা যদি তোমায় দেই কার লাভ তোমার তো।আব্বুর কাছে চাইলেও কিন্তু তুমি ১ লক্ষ টাকা পাবে না। ভেবে দেখ।"
--আগুন একটু ভেবে বলে, কোথায় যেতে হবে?
--ওই তো মার্কেট যাব।"
--ঠিক আছে যা রেডি হয়ে নে।"
_______
মিটিং শেষ করে বাঙলোতে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে বেডে বসে ডেইজি কে ফোন করে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর
ডেইজি কল রিসিভ করে নেয়।"
-- হ্যাঁ ভাইয়া বলো।"
-- কি খবর ওদিকের।"
--যেমনটা বলেছিলে তেমন ভাবেই করছি।"
--গুড।"
--ভাইয়া একটু বাইরে যাবো। তোমায় সাথে পরে কথা বলবো, বাই।"
--জোয়ান খাবার জন্য জামাল হোসেনের বাসায় যায়।
পরি ডাইনিং রুমে খেলছিলো। জোয়ানকে দেখে এগিয়ে আসে। চাচু চলোনা আমার সাথে খেলবে।
--হ্যাঁ খেলবো। "
--আমার কেলনা গুলো রুমে আছে তুমি একটু নিয়ে আসবে চাচু।"
--ঠিক আছে যাচ্ছি।" রুমে গিয়ে খেলনা গুলো হাতে নিয়ে পিছন দিক ঘুরতেই হাত থেকে সব খেলনা ফ্লোরে পড়ে যায়। কারণ সামনে নীধি মাত্রই ওয়াশরুম থেকে তোয়ালা পেছিয়ে বের হয়েছে। চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। জোয়ান পুতুলের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।"
--নীধি জোয়ানকে দেখে ওয়াশরুমে চলে যায়।"
--পরি খেলনা পড়ার শব্দ পেয়ে দৌড়ে আসে। একি চাচু তুমি সব গুলো খেলনা ফেলে দিলে।" পরির কথা কর্নপাত হতেই জোয়ান খেলনা গুলো তুলতে শুরু করে। জোয়ানের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না হাত-পা কাঁপছে।"
--খেলনা গুলো নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে আসে। পরির সাথে খেলায় কোনো মনোযোগ নেই, জোয়ানের মাথায় শুধু কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা ঘুরপাক করছে।"
--খাবার টেবিলে সাজিয়ে ডাকতে এসেছে পরির নানি।
সিয়াম আসে নি বাবা।" না আসলে কিছু কাছ ছিলো তো তাই ও আসে নি।"
--তাই তুমি আসো বাবা।" নীধি মা তুইও আয়।"
-- নীধি খেতে যেতে পাচ্ছে না ভষণ লজ্জা লাগছে তার। তাই বেডে চুপটি করে বসে আছে।" কিন্তু পরি এসে জোর করে নিয়ে যায়।"
--নীধি মাথা নিচু করে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। একবার জোয়ানের দিকে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করে।
--জোয়ানের নীধি কে দেখলেই কেমন বুক কাঁপছে। হঠাৎ করে হেঁচকি উঠে গেলো। জোয়ানের হেঁচকি দেখে পরি খিল খিল করে হাসছে। নীদি টুপ করে পানি এগিয়ে দেয়। পানি খেয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে।"
_______
--ডেইজি পুরো মার্কেট ঘুরিয়েছে আগুন কে। সব শপিং তার হাতে দিয়েছে। আগুন পুরো বিরক্তিকর আচরণ করেছে বার বার। কিন্তু ডেইজি কোনো কথা শুনছে না। আগুনের পায়ে ব্যাথা উঠে গেছে।"
--মার্কেট থেকে বেরিয়ে ফুসকার দোকানে ঠুকলো। ডেইজির ফুসকা খুব পছন্দ। আগুন একটা চেয়ারে বসে পড়ে। হাতে অনেক গুলো শপিং তাই হাত বন্ধ। এই সুযোগে ফুচকা এনে আগুনের মুখের সামনে ধরে।
--ডেইজি এসব আমি খাই সরা এগুলো খাব না আমি।"
--খেতে হবে নইলে কিন্তু টাকা দিব না। ডেইজি জোর করে মুখে ফুচকা ঢুকিয়ে দেয়।"
--আগুন ফুচকা খেতে গিয়ে ঝাল লেগে যায়।"
--ডেইজি পানির বোতল এসে আগুনের মুখে ধরিয়ে দেয়।"বেচারা ঝালে ঠোঁট লাল হয়ে গেছে।"
--পাশেই একটা মেয়ে আগুনের কান্ড দেখে খিল খিল করে হেসে দেয়। ডেইজি অনেক ক্ষন থেকে খেয়াল করছে মেয়েটা আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে।" ডেইজি মেয়েটার সামনে এসে বলে, আমার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? অনেকক্ষণ থেকে দেখছি কি ব্যাপার। "
--মেয়েটা হকচকিয়ে উঠে। কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না।
" এমনি তাকিয়ে ছিলাম।"
--তাই নাকি।" জানো আমার ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।"
--কি! সত্যি বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুমি মিথ্যা বলছো।
-- ও মা আমি মিথ্যা বলবো কেনো?
--কারণ ওনার তো প্রতিটা খবর রাখি। "
-- তাই নাকি। আমার ভাইয়াকে তাহলে আগে থেকেই চেনো।"
-- হ্যাঁ চিনি তো।" আগুন ডেইজির কাছে এসে বলে, তুই আসবি নাকি আমি একা যাবো।"
--তোমার জন্য বউ পাইছি।"
-- আগুন বিস্মিত কন্ঠে বলে, কিসের বউ।"
-- এই যে সামনে যে মেয়েটা বসে আসে ওই মেয়েটা। "
--আগুন সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকায়। দেখতে ফর্সা, চুল গুলো বেশি বড় না। তবে ঠোঁট গুলো কমলার মতো দেখতে।"এই মেয়েকে আগুন আগেও দেখেছে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো।"
--কে তুমি?
--আমি রাইসা।"
--আমাকে ফলো কেনো করো?
--আপনাকে আমি প..
কথাটা বলার আগে পিছন থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসে। রাইসা তারাতারি আয় বাসা যেতে হবে।"
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code