Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৬, লেখক বর্ষা রায়

 


পুরুষটির কন্ঠ অতিপরিচিত,এক পলক দেখার জন্য পিছন ফিরে তাকায় ডেইজি। লোকটির মুখশ্রী দেখে যেন বুকের ভিতর ধুক ধুক করতে শুরু করলো। অনুভূতি গুলো যেনো জেগে উঠলো। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এসে জমা হলো। এই মানুষটার জন্যই তো অপেক্ষা করছে এতো দিন থেকে। ডেইজি ভাবনার বাইরে আসে রাইসার কথা শুনে। রাইসা ছেলেটির কাছে গিয়ে বলে, হ্যাঁ ভাইয়া যাবো চলো।

--রাইসা তার ভাইয়াকে নিয়ে চলে যেতে ধরে তখন ডেইজি রাইসাকে থামতে বলে। আগুন বলে, ওকে কেনো থামতে বলছিস, চল আমরা বাসায় যাবো।"
--দাঁড়াও না একটু কথা বলতে দেও। ডেইজি রাইসার কাছে গিয়ে বলে, তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলবে একটু।"
--ফাহিম ভাইয়াকে তুমি চেনো?"
--হ্যাঁ চিনি।"
--ফাহিম ভুরু কুঁচকে ডেইজির দিকে তাকায়। তারপর বলে, তোমাকে আমি কোথায় যেনো দেখেছি ঠিক মনে করতে পাচ্ছি না।"
--আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমি নজরুল স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আপনার বাসা তো তাদের পাশের বাসাটাই। আপনি রোজ ছাদে দাঁড়িয়ে কফি খেতেন আর আমি ওই সময় টাই যেতাম প্রাইভেটে।"
--ওহ আচ্ছা মনে পড়েছে। তা কেমন আছো?"
--ভালো আছি। আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।"
--হ্যাঁ বলো।"
--কথাটা বলার আগেই ডেইজির গলা শুঁকিয়ে গেছে। নিজেকে শক্ত করে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলেই ফেলে,
--আপনাকে আমি পছন্দ করি।"
--ডেইজির কথা আগুনের কর্নপাত হতেই কাছে চলে আসে। তোর সাহস তো কম না, আমার সামনে দাঁড়িয়ে তুই অন্য ছেলেকে ভালেবাসার কথা বলছিস।"
--ওহ তুমি আমার পাশে আছো, আমি খেয়াল করি নাই জানো তো। কি বলোতো অনেক দিন থেকেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলা হয়নি। তাই আজকে বলে দিলাম, তুমি প্লিজ রাগ করো না। কিছুক্ষণ আগুনের দিকে তাকিয়ে ফাহিম কে বলে, আপনি কিছু বলছেন না যে।"
--তোমার পরিবার রাজি থাকলে, পাঠিয়ে দিও আমাদের বাসায়। " কথাটা বলে রাইসাকে নিয়ে চলে যায়।"
--ভাইয়া উনি কি বললো দেখলে, ডিরেক্ট বিয়ে। ভাইয়া প্লিজ তুমি আব্বুকে বোঝাবে। এদিকে আমি সামলে নিবো৷ প্লিজ ভাইয়া।"
--ডেইজির এমন কান্ড দেখে আগুন বিরক্ত। তোকে বাসায় নিয়ে গিয়ে কি যে করবো। চল্ তারাতাড়ি।
ডেইজি মুড অফ করে চলে যায়।"
_________
জামাল হোসেন সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন। দরজায় কলিং বেল বেজে উঠে। জামাল হোসেন উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। অপরিচিত লোক গুলোকে দেখে বলে, কারা আপনারা কি চাই?"
-- ভাই আপনি ভুলে গেলেন কাল বাজারে দেখা হয়েছিলো মনে নেই। আপনাকে বলছিলাম আপনার ভাতিজিকে বিয়ে দিবেন নাকি আমার হাতে পাত্র ভালো আছে। আপনি বলেছিলেন নিয়ে আসতে।"
--ওহ হ্যাঁ, কি আশ্চর্য ভুলে গেছিলাম আমি। আসুন আসুন ভিতরে আসুন।"
--লোক গুলো কে সোফায় বসতে বলে। তারপর পরির নানির কাছে গিয়ে বলে, আমাদের নীধিকে দেখতে এসেছে।
--কি বলো, মেয়েটা বাসায় আছে থাক এখুনি তোমাকে বিয়ে দিতে হবে।"
--আরে পাত্র ভালো হলে দিয়ে দিব। মেয়েটাকে একটা নতুন জীবন দিতে পারলেই ভালো। তুমি তারাতাড়ি খাবারের ব্যবস্থা কর।"
--জামাল গিয়ে সোফায় বসে গল্প করতে।" তা আপনার ছেলে কি করে?
--তো আপনারা সবাই ভালো আছেন?"
--আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনারা?"
--আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি৷"
--তো আপনাদের ছেলে কি করে?"
--ঘটক টুপ করে বলে, আরে জামাল হোসেন, ছেলে খুব ভালো। ছেলে একজন জার্নালিস্ট। বাবা - মা, বোন একটা আছে। আর ওদের পরিবারে কোনো জামেলা নেই। মেয়ে আপনার বেশ সুখে থাকবে।"
--আপনারা আমাদের মেয়েকে দেখুন পছন্দ হয় কি না তারপর না হয় বাকি আলাপ৷ আমাদেরও তো ছেলেকে দেখতে হবে।" ছেলের বাবা বলে, অবশ্যই দেখাবো। ও নিয়ে টেনশন করবেন না।"
--আপনারা একটু বসুন আমি আসছি।"
--পরি ঘুম থেকে উঠে নীধিকে খুঁজছে। নীধি বেলকনিতে বসে উপন্যাস পড়ছে। বেড থেকে গুটি গুটি পায়ে চোখ কচলে নীধির কাছে যায়।"
--নীধি আন্টি।"
--নীধি বইয়ে দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পরির মুখের দিকে তাকায়। ও মা আমাদের পরি যে ঘুম থেকে উঠেছে। আমার সোনা মা কি কিছু খাবে।"
--না আমি কিছু খাব না।"
--চলো তোমাকে আমি নুডলস বানিয়ে খাওয়াবো। পরি কে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়। জামাল হোসেন ভিতরে এসে বলে, নীধি মা তুই একটু রেডি হয়ে বাইরে আয়।"
--কেনো আঙ্কেল?"
--আসলে তোমাকে দেখতে এসেছে। তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়। জামাল সাহেব চলে যায়।"
--নীধির হাসি মুখটা যেনো নিমিষেই বিষন্নতায় ভরে গেলো। জামালকে কখনোই মনের কথা বলতে পারবে না। কারণ তাকে যে আশ্রয় দিয়েছে। নতুন একটা পরিবার দিয়েছে। সে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে রেডি হতে চলে যায়।"
--পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে নীধি। নীধি কে তাদের পছন্দ হয়েছে, ছেলেকে নিয়ে আসবে। এমন সময় জোয়ান হুরমুর করে ঢুকে পরে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে ছুটে চলে এসেছে।"
--আঙ্কেল।"
--হ্যাঁ বাবা।"
--নীধিকে আমার হাতে তুলে দিন। ছেলের বাবা মা ঘটক জোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জামাল কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না৷ নীধি জোয়ানের এমন কান্ডে পুতুলের ন্যায় বসে আছে। পরির নানি খুব খুশি, জোয়ানের কাছে এসে বলছে, এতো ভয় পেয়েও না। নীধিকে ভালোবাসো?"
--হ্যাঁ বাসিতো।"
-তাহলে তো কোনো কথাই নেই। ভয় পেয়েও না তোমার নীধি তোমার কাছেই থাকবে। আসো আমার সাথে ।"
--জামাল সাহেব ছেলের বাবা- মাকে বিদায় দেয়। নীধি নিজের রুমে পায়চারী করছে। তার খুব ভয় হচ্ছে।"
--ডাইনিং রুমে সবাই বসে আছে। সবাই চুপচাপ। জামাল সাহেব বলে, তুমি কি সত্যি নীধিকে বিয়ে করবে৷
--হ্যাঁ আঙ্কেল, আপনি বললে আজি বিয়ে করবো।
--জোয়ানের এমন কথায় জামাল লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয়। আচ্ছা ঠিক আছে যেহেতু তুমি চাইছো আর আমার বিশ্বাস তুমি আমার নীধিকে সুখে রাখবে। তাই তোমাকে দিয়ে দিব আমার নীধি মা রে।"
--কথাটা শুনেই জোয়ানের ঠোঁটে হাসি ফুঠে উঠে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার আনন্দ অদ্ভুত। সিয়াম বলে, আঙ্কেল তাহলে আমি বিয়ের ব্যবস্হা করি। কাজী সাহেবকেও ডেকে নিয়ে আসি।"
--কিন্তু জোয়ানের বাবা মা ভাই ওদেরকে তো বলতে হবে।"
--আপনি আমার পরিবার নিয়ে ভাববেন না। আমি ওদের কে আজি আসতে বলবো সিলেটে।"
--ঠিক আছে তোমার যেটা ভালো মনে হয় করো।"
--রাশকে জানিয়ে দিয়েছে আজকেই যেনো সিলেটে চলে আসে। জোয়ানের এমন কথায় মা ছেলে মিলে সোফায় বসে ভাবছে। অনামিকা বলে, এতো ভেবে লাভ নেই গিয়ে না হয় দেখবো কি জন্য ডেকেছে।"
__________
আগুন ফ্রেশ হয়ে বেডে শুয়েছে। ডেইজি দৌড়ে এসে বসে পড়ে। ডেইজিকে দেখে শোয়া থেকে উঠে পড়ে।
আমার রুমে তোর কি?"
কিছু না টাকা দিতে এলাম। এই নেও টাকা।
আগুন টাকা ড্রয়ারে রাখতে বললো। তারপর হেটফোন কানে গুঁজে দেয়।"
--ডেইজি টাকাটা রেখে আবার এসে পাশে বসে।তারপর আগুন কান থেকে হেটফোন খুলে দেয়। আগুন রক্তিম চোখে তাকায় ডেইজির দিকে।" সমস্যা কি তোর? এমনিতেও পা ভিষণ ব্যাথা করছে৷"
--তোমার পা ব্যাথা করছে আগে বলবে তো। আমি তোমার পা টিপে দিচ্ছি। এই বলে আগুনের পা টিপতে শুরু করলো।"
--দেখ আমি জানি তোর মতলবটা। তোকে বলে রাখছি আমি কিছু করতে পারবো না।"
--ডেইজি এবার ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে, আচ্ছা ভাইয়া তুমি আমায় তোমার বোন বলে মনে করো না।
তোমরা তো ওদের থেকে দূরে রেখছো। আমারও তো ইচ্ছে করে ওদের কাছে যেতে সেটাও দেও না। তাহলে তোমরা কেনো আমায় কাছে টেনে নেও না। আমরা তো একই বাবার সন্তান তাহলে আমার দোষটা কোথায়। আমার কি কষ্ট হয় না। আমিও তো তোমাদের কে খুব ভালোবাসি। ডেইজি আগুনের গালে হাত রেখে বলে, ভাইয়া তুমি আমায় ভালোবাসো না।"
--আগুন ডেইজির দিকে দৃষ্টি রেখে বলে, চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যা।"
--যাব না, আমিও এ বাড়ির সন্তান। তাই আমি তোমার সাথে থাকবো।"
--ডেইজি চলে যা আমি ঘুমাবো।"
--আগে বলো তুমি আমার কথা শুনবে।"
--আচ্ছা যা বলবো আমি।"
--ডেইজি লাফিয়ে উঠে আগুনের গালে চুমু খেয়ে চলে যায়। ডেইজির এমন পাগলামি দেখে হেসে দেয়।
বেডে গা এলিয়ে দিতেই ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসে। রিসিভ করে ফোনটা কানের কাছে ধরে।"
--ও পাশ থেকে কোনো শব্দ আসছে প্রায় ২ মিনিট থেকে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দেয়।"
--আবার কল আসলে রিসিভ করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসে।"
--আমি রাইসা।"
--কেনো ফোন করেছো শুনি?"
--আমি আপনাকে ভালোবাসি। অনেক দিন ধরেই কখনো সাহস পাইনি কথাটা বলার। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। সত্যি আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি।"
--কি করে বিশ্বাস করবো তুমি আমায় ভালোবাসো?"
--রাইসা কিছু একটা ভেবে বলে, আপনি আমার সাথে দেখা করেন আমি বুঝিয়ে দিব কতটা ভালোবাসি।"
--তাই নাকি। অনেক সাহস আছে তোমার।"
--সাহস থাকবে না। সব সাহস তো আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি। রাস্তায় যখন ছেলে গুলোকে মারেন আমার খুব ভালো লাগে৷ যখন সিগারেট খান তখন আমার নেশা লেগে যায়। আপনার ওই গোলাপি ঠোঁট প্রচন্ড কাছে টানে আমায় ৷ যখন আপনি আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে বাইকে করে রাস্তা দিয়ে যান তখন তো আপনাকে দেখে আমার হার্টবিট লাফাতে শুরু করে। আপনার হাঁটার স্টাইল টা ওয়াও। আমি জাস্ট ফিদা।
--রাইসার কথা শুনে এক চিলতে হাসি ঠোঁটে ফুটে উঠে আগুনের। এই মেয়েটা আসলেই পাগল।"
--আপনি আমায় পাগল বলতেই পারেন, তবে ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই পাগলামি করি।"
--তুমি আমার সম্পর্কে সব কিছু জানো।"
--হ্যাঁ জানি, আপনি আমার কাছে আমার ভালোবাসার মানুষ। আপনি কি করেছেন সেটা দেখবো না। আমি আপনাকে আমার মতো গড়ে নিবো৷"
--আচ্ছা পড়ে কথা বলবো, ঘুমাতে হবে আমায়।"
--বললেন না তো দেখা করবেন কি না।"
--ঠিক আছে, ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিও। কথাটা বলে আগুন ফোনটা কেটে দেয়। রাইসা লাফিয়ে উঠে বেডের উপর নাচতে শুরু করে৷"
#চলবে
গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৬, লেখক বর্ষা রায়
( ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code