Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ১০, লেখক বর্ষা রায়


 পাঁচ বছর আগের কথা। রাতের অন্ধকারে একা একটা মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নিরিবিলি রাস্তায় ভয়ে গলা শুঁকিয়ে আসছে মেয়েটার । দোকান পাট সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অচেনা এক জায়গায় হাত পা কাঁপা শুরু করছে। রাস্তায় কত আজেবাজে মানুষ থাকে। বাজারে গিয়ে দেখে ওষুধের দোকান খোলা। ডাক্তার কে বলে বাবার জন্য ওষুধ নিয়ে নেয়। আসার সময় একটা কালো গাড়ি মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে পরে।

--মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। একটা ছেলে বেরিয়ে এসে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। সেই রাতে মেয়েটা তার বাবাকে ওষুধ খাওয়াতে পারেনি। বরং তাকে সেই রাতে ধর্ষণের শিখার হতে হয়েছে। ছেলেটি মেয়ে টিকে বলে, বাসা কোথায় তোর বল রেখে আসি তোকে। আজকে তুই আমাকে অনেক শান্তি দিয়েছিস।
--মেয়েটার ঠোঁট দিয়ে রক্ত পরছে। সারা শরীর কামরের দাগ। ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠছে, চোখ দিতে অনারবত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। কোনো রকম ঠিকানা বলার জোড় ছিলো। মেয়েটাকে কাপড় পড়িয়ে বাসার দরজার কাছে রেখে ফেলে দেয়। তারপর ছেলেটি চলে যায়।
--সেই রাতের মেয়েটির আত্ম চিৎকার আগুনকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। সব থেকে বড় ভুল করেছিলো সেই রাতে। রাতটা তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটাকে অনেক জায়গায় খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। এতো দিন যে মেয়ে ধর্ষণ হয়েছে সব তার বন্ধুরা করেছে। আগুন পরিকে বলে, এই মেয়েটা তোমার কি হয়।"
--পরি ছবি টা হাতে নিয়ে বুকে জড়িয়ে বলে, এই মেয়েটাই আমার আম্মু।"
--আম্মু মানে? তোমার আম্মু কোথায়?"
--ওই যে আকাশে চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।"
--কিভাবে মারা গেছে তুমি জানো?"
--নানি বলেছে, আমার মা নাকি আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গিয়েছে।"
--রুমের ভিতরে পরির নানি, জোয়ান আর নীধি ঢুকে পরে। নীধি এসে পরিকে জড়িয়ে ধরে বলে,পরি মা তুই ঠিক আছিস তো। কিচ্ছু হয়নি তোর তাই না। দেখনা কি খারাপ আমি, তোর একদম খেয়াল রাখতে পারি না। আমাকে ক্ষনা করে দে পরি। আমি আর তোকে কোথাও ছাড়বো না।"
--আন্টি দেখো আমি ঠিক আছি। এই আঙ্কেল টা আমাকে বাঁচিয়েছে।"
--জোয়ান বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আগুনের দিকে। আগুনের চোখে অশ্রু টলটল করছে।"
--নীধি আগুনকে বলে, আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পাচ্ছি না। আপনার কাছে অনেক বড় ঋণী হয়ে গেলাম। আপনি কিন্তু না খেয়ে যাবেন না। আপনি যেতে চাইলেও দিবো না যেতে।"
-- নীধি জোয়ানকে বলে, আপনি কিছু বলুন ।"
--আগুন জোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।" জোয়ান বলে, তুই এখানে মানে কবে আসলি। "
--নীধি জোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনি ওনাকে চেনেন।"
--আগুন কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না। এরকম একটা ঘটনার সম্মুখীন আবার জোয়ান সামনে সব কিছুই কেমন যেনো লাগছে। দুই হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো টেনে ধরে। মুখ দিয়ে কিচ্ছু বলছে না। "
--পরির নানি বলে, কি ব্যাপার পরি তুই তোর মায়ের ছবিটা নিয়েছিস কেনো?
--আঙ্কেল আমাকে জিজ্ঞেস করলো যে, এই মেয়েটা কি হয়, কিভাবে মারা গেলো। তাই হাতে নিয়ে রেখেছি।"
--আগুন মুখ তুলে পরির নানিকে বলে, এই মেয়েটা আপনার মেয়ে। এর কি বিয়ে হয়েছিলো?"
--কেনো বাবা?"
--বলুন না আন্টি।"
--জোয়ান পরির নানিকে বলে, আপনি রুমে যান আন্টি আমি ওকে চিনি আমি বলে দিবো।"
--পরির নানি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সাথে পরিকেও নিয়ে যায় পরি খাবে। যাওয়ার সময় আগুনকে বলেছে, তুমি কিন্তু কোথাও যাবে না।"
--নীধি পরির সাথে যেতে পারলো না। তার মনেও কেমন সন্দেহ লেগেছে। আবার জোয়ানের এই ছেলেটাই বা কে হয়।"
--জোয়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, ঢাকায় গিয়েছিলো সেখানেই ধর্ষণের শিখার হয়। কোনো প্রমাণ না থাকার কারণে ছেলেটাকে খুজে পায়নি। তাই সিলেটে চলে আসে। কিছুদিন যেতেই মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়। আঙ্কেল আন্টি বাচ্চাটাকে মারতে চেয়েছিলো কিন্তু পরির মা পরি কে মারতে চায়নি। পরিকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা যায়। আর পরি ওই ছেলেটারি মেয়ে।"
--আগুন জোয়ানের কথা গুলো পুতুলের ন্যায় শুনে গেলো। চোখের অশ্রু গুলো আজ অঝোর ঝড়ে পড়ছে।" তার যে একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে। আল্লাহ তাকে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলবে ভাবি নি। আগুন অস্ফুটস্বরে বলে, পরি আমার মেয়ে।"
--আগুনের কথা কর্ণপাত হতেই জোয়ান চোখ বড় বড় করে তাকায়। কি বলছিস কি পরি তোর মেয়ে মানে। হ্যাঁ আমার মেয়ে পরি। সেই কুলাঙ্গার ছেলেটা আমি ছিলাম। "
--নীধি আগুন কথা শুনে থ মেরে গেছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। জোয়ানের হাত ধরে বলে, কি বলছে এসব ওনি?"
--জোয়ান নীধির দিকে তাকিয়ে শুঁকনো একটা ঢোক গিলে। আগুন কে বলে, কি বলছিস ভেবেই তো।"
--হ্যাঁ, আমি সত্যি বলছি৷ পরি আমার মেয়ে।"
--পরি দরজায় কাছে ছিলো। আগুনের এমন কথা পরি বলে, আঙ্কেল তুমি আমার বাবা হও।"
--সবাই পরির দিকে তাকায়। পরি হাসি মাখা মুখটা দেখে বোঝা যাচ্ছে সে কতটা খুশি হয়েছে।" দৌড়ে এসে আগুনকে জড়িয়ে ধরে। তুমি যদি আমার বাবা হও তাহলে কোথায় ছিলে এতো দিন। আসো নি কেনো? আমাকে তোমার মনে পরে নি।"
--পরির গালে হাত রেখে বলে, এই তো এসেছি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। পরিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয় আগুন।"
--আগুনের এমন কান্না দেখে জোয়ান সহ্য করতে পারলো না। নিজেও কেঁদে দেয়। এরকম একটা মানুষ যে এভাবে কাঁদতে পারে ভাবনার বাইরে। কঠিন মানুষটার যে নরম হৃদয় আছে।"
--নীধি জোয়ানকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হয়।"
--পরি আগুনকে বলে, তুমি কাঁদছো কেনো বাবা। পরি চোখের পানি মুছে দেয়। বাবা তো সুপারম্যান হয় তাহলে বাবা কাঁদবে কেনো। তুমি একদম কাঁদবে না।"
--কে বলেছে তোমায় বাবা সুপারম্যান হয়?"
--জোয়ান চাচু বলেছে।"
--নীধি জোয়ানকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়।" সব কিছুই শুনলো। নীধির অনেক খারাপ লাগছে তারপরেও দুজনে ভাই তো।" নীধি আগুনের জন্য খাবার নিয়ে যায়।"
--আগুন নীধিকে বলে, এগুলো নিয়ে যান খাব না আমি। একটু পর চলে যাবো।"
--এটা আবার কেমন কথা, ভাইয়া আপনি না খেলে যেতে দিবো না।"
--বাবা তুমি কোথায় যাবে।"
--আমি যেখানে থাকি সেখানে।"
--তুমি আমায় নিয়ে যাবে না।"
--নীধি পরিকে বলে,
আচ্চা পরি তুমি কি জানো, তোমার বাবা আর তোমার চাচু এরা দুজনে ভাই।"
--সত্যি বলছো আন্টি।"
--হুম। আর আমরা তো কয়দিন পর ঢাকা যাচ্ছি। সেখানে তো তোমার বাবাও থাকে।" আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকবো।"
--ঠিক আছে আন্টি। কিন্তু বাবা আমাকে প্রতিদিন ভিডিও কল করবে।"
--অবশ্যই করবো পরি।"
--বাবা আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।"
--পরি পরোটা হাতে নিয়ে আগুনের মুখে ধরে। আগুন তার পিচ্চি মেয়ের হাতে খাচ্ছে এটা ভেবেই বুকে প্রশান্তি হচ্ছে। তার মেয়েটা কত বড় হয়েছে।"
--আগুন পরিকেও খাইয়ে দেয়।"
--নীধি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। জোয়ানের কাছে গিয়ে বসে নলে, পরি আমার কাছে আর থাকবে না ও অনেক দূরে চলে যাবে। আমি থাকবো কি ভাবে।" কথা টা বলেই কেঁদে দেয়।"
-- ওর মেয়ে ওর কাছে থাকবে স্বাভাবিক। এটা ওর কর্তব্য। বাবা হিসাবে ও নিজের দায়িত্ব এরাবে না। পরি যে ওর বাবাকে খুঁজে পেয়েছে এটাই অনেক বর পাওয়া তার কাছে। আমি খুব খুশি হয়েছি নীধি। কথা গুলো বলেই নীধিকে জড়িয়ে ধরে। " কেঁদো না তুমি। তোমার যখন বাচ্চা হবে তখন তাকেই দেখে রেখো। আর পরি তো সেই দূরেও যাবে না। ওর মন কিন্তু আমাদের কাছেই পরে থাকবে।"
--আগুন হোটেলে চলে এসেছে। তার মনটা ভিষণ হালকা লাগছে। এতো দিন যে পাপের বোঝা নিয়ে বেরিয়েছে সেটা একটু হলেও কমানোর জন্য পরি তার কাছে চলে এসেছে। আগুনের বন্ধুরা আগুনকে দেখেই কাছে চলে এসেছে। " কি রে কোথায় ছিলিস বলতো।
--ছিলাম এক জায়গায়। তোরা কি ঘুরতে যাবি।"
--হুম যাবো, আগে তুই ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে তারপর।"
--ঠিক আছে।"
_______
কেটে গেলো একটা সপ্তাহ। জোয়ান আফজাল কে বুঝিয়েছে। আফজাল কোনো আপত্তি করে নি। এই কয়দিন আগুন এসে পরির সাথে সময় কেটে গেছে। জোয়ানের সাথেও আগের থেকে একটু হলেও ভালো সম্পর্ক হয়েছে। আগুন রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে । এই নিয়ে পরির মন খারাপ। কিন্তু তার বাবার কাছে যাওয়ার কথা শুনে খুশিতে নাচতে শুরু করেছে। নীধি কাপড় গোছানো শুরু করেছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সকাল সকাল তারাও বেরিয়ে পড়েছে।
--এদিকে ছেলের বউ আসবে বলে অনামিকা খাবারের আয়োজন করছে। বাসাটাও অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। অনেক আত্নীয় স্বজনকেও বলেছে। রাশ কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে। এখন সে অনামিকা কে বলে দিয়েছে আর কিছুই করতে পারবে না।"
--আগুন বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। বাইরে অনেক লোক আসতে আসতে ভিতরে ঢুকে যায়। আফজালের দেহ দাফনের কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে।" এটা দেখে আগুন দু'পা পিছিয়ে যায়। আলেয়া পাশে বসে কান্না করছে। আগুনকে দেখে আলেয়া কাছে চলে আসে।
--তোর বাবা আর বেঁচে নাই রে। "
--কি করে এসব হলো?
--আমি নিজেও জানি না। ওনার ঘরে গিয়েছিলাম দেখি ওনি শুয়ে আছে ডাকলাম কিন্তু সারা পেলাম না। চিন্টু মিন্টু কে বললাম ওরা এসে দেখলো তোর বাবা আর বেঁচে নেই। তুই ঢাকায় আসতেছিস তাই আর তোকে ফোন করি নি। তোকে আর একটা কথা বাবা ডেইজিকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাল রাতেই রুমে দেখেছিলাম। আজকে সকালে দেখি রুমে নেই।" চিন্টু মিন্ট খোঁজা খুঁজি করলো কিন্তু পাইনি।
#চলবে
( আর দুটো পর্ব দিয়ে শেষ করবো। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code