Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৭, লেখক বর্ষা রায়

 

চারিদিকে কোলাহল পরিপূর্ণ পরিবেশ, কত খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। বাঙলো সাজানো শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। এতো অল্প সময়ের মধ্যে সব আয়োজন শেষ করে ফেলেছে। তার জন্য জোয়ান সিয়াম কে অনেক ধন্যবাদ দিয়েছে। সিয়াম প্রত্যুত্তরে বলেছে, এটা আমার কর্তব্য স্যার। আপনার বিয়ে বলে কথা, জমজমাট না হলে চলে। স্যার আমি কিন্তু সবাইকে বলেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। আর আপনি চিন্তা করবেন না, আমি তো আছি সব কিছু সামলে নিবো।
--রাশ আর অনামিকা বাঙলোতে এসেছে। এসেই চারিদিকে লক্ষ্য করছে মনে হচ্ছে কারো বিয়ে। কিন্তু কার বিয়ে এই নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বিধা। ভিতরে এসে
জোয়ানের সাথে দেখা। জোয়ান হাসি মুখে অনামিকা কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, কেমন আছো আম্মু?"
--আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।"
--ভিতরে আসো আম্মু, ভিতরে আয় রাশ।"অনামিকা সন্দিহান চোখে তাকায় জোয়ানের দিকে। জিজ্ঞেস করে,
--জোয়ান আমাকে বলতো হঠাৎ করে ডেকে আনলি আবার বাঙলোটা সুন্দর করে সাজানো। মানে কারো বিয়ে নাকি? রাশ টুপ করে বলে, হ্যাঁ ভইয়া, কারো বিয়ে বুঝি?"
-- তোমরা আগে ভিতরে আসো তারপর বলছি সব কিছু।"
--অনামিকা আর রাশ তপ্ত শ্বাস ফেলে জোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জোয়ান দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে বুঝতে পারছে না দুজনে কি রিয়েক্ট করবে। বেচারার মুখ খানায় মলিনতা এসে ধরা দিলো।"
--তা দেখি আমার ছেলে কেমন মেয়েকে পছন্দ করেছে, আমাদেরও পছন্দ অপছন্দর একটা ব্যাপার আছে।"কথা গুলো বলে মুচকি হাসলো।
--মায়ের মুখের হাসি দেখে জোয়ান যেন স্বস্তি পেলো। নিজেকে হালকা করে নিয়ে অনামিকা কে বলে, অবশ্যই দেখবে মা। আমি জানি নীধিকে তোমার অপছন্দ হবে না।"
--তাহলে ফ্রেশ হয়ে মেয়েটাকে দেখে আসি।" অনামিকা নিজের রুমে চলে গেলো। রাশ এসে জোয়ানের পাশে বসে ঘারে হাত রেখে বলে, ব্রো কংগ্রাচুলেশনস।
--থ্যাঙ্কিউ।"
--তুমি যে এতো ফাস্ট ফাস্ট সব কিছু করে ফেলবে সত৬আমি কিন্তু মাথাতেও আনি নি। ব্রো আমি তাহলে ভাবিরে দেইখা আসি আমার তো ধৈর্য কম।
--যা গিয়ে দেখে আয়।"
--তবে তোমার বিয়ে নিয়ে কত কিছু প্লান ছিলো আর তুমি একাই একাই হুট করে ঠিক করলে।"
--পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়টা আঁকরে ধরেছিলো। তাই দেড়ি না করে একবারেই বিয়ে।"
--ঠিক আছে ভাইয়া আমি তাহলে যাই।"
-- যা।
--নীধিকে রুমে সাজানো হচ্ছে। পার্লার থেকে সাজাতে এসেছে। পাশে বসে পরি নীধিকে সাজানো দেখছে। নীধিকে বলছে, আন্টি তোমাকে না অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। চাচু তো তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না৷"
--ইশ, এই টুকু মেয়ের মুখে কি কথা বুড়ি একটা।"
--সত্যি বলছি আন্টি। আচ্ছা আন্টি তুমি চাচুর সাথে গেলে আমাকেও নিয়ে যাবে তোমাদের সাথে৷ আমি তোমাদের সাথো থাকতে চাই।"
--ঠিক আছে আমি তোমাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো।"
--রাশ ভিতরে এসে জামালকে সালাম দিলো। তারপর ভালোমন্দ কথা বলে নীধির ঘরটা দেখিয়ে নিলো। রাশ ভিতরে গিয়ে কনের সাজে বসে থাকা একটা মেয়ে, ছোট পিচ্চি ফুটফুটে মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, ভিতরে আসতে পারি। "
-- নীধি পিছন দিকে ঘুরে ঠোঁটের কোনে স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে উওর দেয়, আসো।"
--রাশ বিস্মিত হয়ে রুমের ভিতরে আসে। ভুরু কুঁচকে নীধিকে জিজ্ঞেস করে, আপনি আমায় চেনেন?
--চিনি না তবে তোমার ভাইয়া মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে, তার ছোট ভাই রাশ আসছে আমায় দেখতে আবার তোমার বিবরণ বলেছে। তাই বুঝতে বেশি বেগ পেতে হয়নি৷'
--বাহ! আমার ভাবি দেখি বুদ্ধিমতী।" তা আমার ভাবিকে যে এতো মিষ্টি দেখতে আমি তো কল্পনাতেও আনি নি। আপনার মুখ খানা তো মায়াবী। তাই তো ভাইয়া আপনার মায়ায় পড়ে পাগল হয়ে গেছে।"
--কি যে বলো। আচ্ছা তুমি খেয়েছো?
-- না ডিরেক্ট আপনাকে দেখতে আসলাম।"
-- আমি খাবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি তুমি এখানে বসো।"
--পরি রাশের দিকে তাকিয়ে বলে, আচ্ছা তোমাকে জোয়ান চাচুর মতো লাগে কেনো,?
--তোমার চাচু আমার ভাইয়া হয় তাই।"
--তাহলে তোমাকে আমি কি বলে ডাকবো?
--আমাকে ছোট চাচু বলে ডেকো কেমন?
--ঠিক আছে ছোট চাচু। চাচু তুমি আমার সাথে খেলবে। "
--হুম খেলবো না কেনো, অবশ্যই খেলবো? তোমার নাম টাই তো শোনা হলো না।
-- আমার নাম পরি।".
-- বাহ! পরির মতো দেখতেও তুমি। " পরি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে রাশের হাতে বেলুন ধরিয়ে দেয়। "
-- নীধি এসে বলে, এসো তোমার জন্য টেবিলে কাবার রাখা হয়েছে খেয়ে নেও।" রাশ পরি কে নিয়ে খেতে চলে যায়।
-- অনামিকা জামাল আর পরির নানির সাথে কথা বলছে বিয়ের ব্যাপারে। নীধিকে এখনো দেখেই নি।"
--পরির নানি নীধিকে নিয়ে অনামিকার কাছে এসেছে। নীধি গিয়ে অনামিকাকে সালাম দেয়।
--অনামিকা নীধিকে দেখে বলে, বাহ ভারি মিষ্টি মেয়ে। আমার ছেলের পছন্দ আছে দেখি।"
__________
ডেইজিকে জোয়ান ফোন করেছিলো সব কিছু বলেছে। এই নিয়ে ডেইজির প্রচন্ড মন খারাপ। তার ভাইয়ার বিয়ে অথচ সে বসে বসে আপসোস করবে। জোয়ানের উপর খুব রেগে আছে। আর সব চেয়ে বড় কথা আফজাল যেতে দিবে না। আগুন তো যাবেই না। কান্না করে চোখমুখ ফুলে ফেলেছে৷ তার কিছুই ভালো লাগছে না। কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। এর মাঝে আগুন ভিতরে ঢোকে।
--অসময়ে ডেইজি কে শুতে দেখে বলে, কি রে অসময়ে এভাবে শুয়ে আছিস কেনো?"
--কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, কি করবো আমি। ওরা সবাই মজা করছে আর আমি এখানে কাঁদছি। কেউ আমাকে ভালো বাসে না।"
--কারা মজা করছে আর কি বলছিস?আরে পাগলি কান্না থামিয়ে আমাকে বলবি তো। না হলে বুঝবো কি ভাবে।"
--ডেইজি নাক টেনে বলে, জোয়ান ভাইয়ার আজকে বিয়ে। আমার কত স্বপ্ন ছিলো জানো এই বিয়ে নিয়ে। আমি তোমাদের একমাত্র বোন তোমরা কেউ আমাকে ভালো বাসো না।" কথা গুলো বলে আবার কাঁদতে থাকে।"
--আগুন তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, এই জন্য কান্না করছিস।"
--করবো না তো কি, তোমরাও তো আমাকে যেতে দিবে না। "
--আচ্ছা হয়েছে এবার কান্না থামা। চল্ আমার সাথে।"
-- কোথায় যাব?
--গেলেই দেখতে পাবি। আর আমার বোন এখানে বসে কান্না করবে আমার সহ্য হবে না। মুখটা কেমন লাল হয়ে গেছে। আমি আছি না তোকে আর কষ্ট দিব না রে। আয় আমার সাথে। "
--ডেইজি বেড থেকে নেমে, আগুনের সাথে যায়। সোফায় বসে ছিলো আফজাল সাথে কয়েক জন লোক ছিলো।" লোক গুলো চলে যেতেই আগুন ডেইজি কে নিয়ে আসে।"
--ডেইজি আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে। " ভাইয়া তুমি এখানে কেনো নিয়ে এলে।"
--সব জানতে পাবি।"
--আফজাল ডেইজির দিকে দৃষ্টি রেখে বলে, শুক্রবার তোমার বিয়ে।"
--ডেইজি আগুনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। শুঁকনো ঢোক গিলে বলে, কি বলছে ভাইয়া কার সাথে বিয়ে?"
--কার সাথে আবার ফাহিমের সাথেই বিয়ে তোর।"
--ডেইজি যেনো বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না।" কি বলছো ভাইয়া সত্যি আমার ফাহিমের সাথে বিয়ে।"
--হ্যাঁ রে হ্যাঁ, সত্যি সত্যি সত্যি।"
--ডেইজি ফিক করে হেসে আগুন কে জড়িয়ে ধরে।" কি করছিস আব্বু সামনে।"
আগুনকে ছেড়ে দিয়ে আফজালের দিকে দৃষ্টি করে। কিন্তু আফজাল নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। "
--আগুন ডেইজির কানে কানে বলে, তের না মন খারাপ। "
--মন খারাপ তো কম্বলের নিচে। এখন ডেইজি খুব খুশি বুঝলে। জানো ভাইয়া আমার না নাচতে ইচ্ছে করছে।"
--ডেইজির পাগলামি দেখে হেসে দেয় জোয়ান।" চল তোকে বাইরে থেকে ঘুরে আনি। "
--সত্যি ভাইয়া, তাহলে আমি রেডি হয়ে আসি ওয়েট করো একটু। "
_______
জোয়ান আর নীধির বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। নীধিকে জোয়ানদের বাঙলোতে আনা হয়েছে।
সাথে পরি কেও আনেছে। সে নীধির সাথেই থাকবে তাকে কোথাও যেতে দিবে না। বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে এসেছে।"
--জোয়ানের রুমটা সাজানো হয়েছে অনেক সুন্দর করে। সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নীধিকে। " পরি নীধিকে বলছে, আচ্ছা আন্টি রুম টা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে কেনো। আর তুমি এখানে বসে আছো কেনো? "
-- পরির এমন কথায় বেশ লজ্জা পাচ্ছে নীধি। এটুকু মেয়েকে কিভাবে বোঝাবে। ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠছে।"
--এদিকে জোয়ান রাশ কে খুঁজছে, কিন্তু রাশ কোথাও নেই। সিয়ামকে বললো, সেও নাকি দেখেনি। তাই বৃদ্ধ চাচাকে বলে, চাচা রাশ কোথায়?"
--রাশ বাবা তো রুমে শুয়ে আছে।"
--রুমে শুয়ে আর আমি কোথায় কোথায় খুঁজলাম।" রাশের রুমে এসে দেখে লাইট অফ।" লাইট জ্বালিয়ে
রাশে কাছে এসে বলে, কি রে এবাবে শুয়ে আছিস কেনো?"
--ভাইয়া এই প্রথম আমি এতো বেশি খাবার খেয়েছি তোমাকে আমি কি বলবো। আমি নড়তে পাচ্ছি না। পেটের এক কোনাতেও আর খালি নেই।"
--তুই কি যে করিস না। "
এর মাঝেই জোয়ানের ফোনে কল আসে। ফোনটা বের করে হাতে নিয়ে দেখে ডেইজি ফুল নাম টা জ্বলজ্বল করছে। রিসিভ করে ফোনটা কানের কাছে নেয়।
--ভাইয়া আমাকে এখনে টাকা পাঠিয়ে দেও। তোমার বিয়েতে আমায় কিছুই দিলে না। আর হ্যাঁ তোমার জন্য একটা সুখবর আছে। "
--বাহ! তাই তা শুনি আমার বোন আমাকে কি সুখবর দেয়।"
--আগুন ভাইয়া আমার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করছে। আর আমাকে ঘুরতেও নিয়ে আসছে।"
--সুন্দর খবর। সাবধানে থাকিস। "
--হ্যাঁ ভাইয়া। আর একটা খবর আছে কিন্তু আমি তোমাকে এখন বলবো না তুমি ঢাকায় আসবে তারপর বলবো।"
--আচ্ছা পাগলি একটা।"
ফোন কেটে দিয়ে ডেইজির নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেয়।
তারপর রাশ কে টেনে তুলে বাইরে নিয়ে যায়।"
--ভাইয়া তুমি আমাকে বাইরে কেনো নিয়ে যাচ্ছো। আমি হাঁটতে পাচ্ছি না।"
--এবারে শুয়ে থাকলে খাবার হজম হবে না, তুই বরং পরির সাথে খেলা কর। আমি একটু তোর ভাবির সাথে ফুলসজ্জা করি। "
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code