Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ৪, লেখক বর্ষা রায়

কালো গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে আফজাল চৌধুরী। মুখে রাগান্বিত ভাব স্পষ্ট,চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
সাথে রেয়েছে আগুন সে গাড়ি থেকে নেমে ডেইজির সামনে এসে দাঁড়ায়। ডেইজি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। আগুন কর্কশ কন্ঠে বলে, তুই বাড়ির বাইরে বের হয়েছিস, তোর সাহস দিন দিন বাড়ছে। তাও রাশের সাথে বসে গল্প করছিস। তোকে এই সাহস কে দিয়েছে?" আফজাল বিরক্ত হয়ে বলে, আহ চুপ কর আগুন। ডেইজি বাসায় চল্।
--রাশ রক্তিম আঁখিযুগল দিয়ে ভস্ম করে দিবে আগুনকে। হাত দুটো মুঠো করে নিয়েছে। সব শক্তি যেনো দুটো হাতের মুঠোয় জমা হয়েছে। কিন্তু নিলা গিয়ে বাঁধা দেয়, রাশের হাত ধরে থাকে। " নিলা আমায় ছেড়ে দেও। এই আগুন কে তো আমি খুন করে ফেলবো।" ডেইজি শঙ্কিত কন্ঠে বলে, ভাই তুই বাড়ি যা আমি চলে যাচ্ছি মাথা গরম করিস না। আব্বু চলো।"
--আগুন শয়তানি হাসি দিয়ে বলে, আগুন কে খুন করবি তুই। এই আগুন কে খুন করতে আসলে তুই নিজেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবি।" কথাটা বলেই
গাড়িতে গিয়ে বসে।"
--রাশ গাছের মধ্যে স্বজোড়ে একটা লাত্থি মারে ৷এই আগুন কে তো আমি দেখে নিবো।" নিলা বলে,
--তোমাদের এই শত্রু শত্রু খেলাটা যে কবে বন্ধ হবে।"
--ডেইজিকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। আগুন বজ্রকন্ঠে বলে, সামনে নির্বাচন আর তুই বাইরে বের হয়েছিস। তোকে মানা করেছিলাম বাইরে যেতে কেনো গিয়েছিস। তোর গায়ে যে এখনো হাত তুলি নাই এটা তোর কপাল।"
--তোর মতো নরপশুদের কে আমি ঘ্রিনা করি বুঝলি। তুই যে একটা হিংস্র জানোয়ার সেটা আমার থেকে কে বা জানে। কত মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিস। কত মানুষকে খুন করেছিস। নিজের বাবাকেও আমি ঘ্রিনা করি। এই বন্দিজীবন আর আমাকে বেশি দিন কাটাতে হবে না। আমিও মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়বো।"
--ডেইজির কথা গুলো আগুনের সহ্যের বাইরে। রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলেছে৷ পেন্টের বেল খুলে ডাইজির গায়ে চার ঘা মারতেই আলেয়া এসে ধরে নেয়। ডেইজি আঘাত সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে। ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে, চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। " আলেয়া আগুন কে বলে, কি করছিস কি মেয়েটাকে মেরে ফেলবি নাকি।"
-- যাক মরে তাতে আমি শান্তি পাবো। ও আমাকে অপমান করার সাহস কোথা থেকে পায়। আমার মুখের উপর কথা বলছে।"
--ভাইয়াকে বলে দিলে তোকে পুতে রেখে দিবে।"
--আগুন ঠোঁট বাঁকা করে হাসতে হাসতে বলে, জোয়ান আমার কিচ্ছু টি করতে পারবে না৷ ওর দাঁড়ায় খুন খারাবি চলে না। বায় দ্যা ওয়ে, আমার সাথে কথা বলার আগে দশ বার ভাববি। পরের এমন হলে জানে মেরে দিব।"
--আগুন ডেইজির রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলেয়া বলে, তুই জানিস তারপরেও কেনো আগুনের সামনে গলাবাজি করিস। যেমন থাকতে বলছে তেমন থাক।"
--অনামিকা সোফায় বসে টিভি দেখছে। রাশ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে।"
--অনামিকা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। হঠাৎ বাইরে থেকে অনেক লোকের আওয়াজ আসছে। অনামিকা বলে, বাইরে কি হচ্ছে। " দাঁড়াও আমি গিয়ে দেখে আসছি। জানালার ধারে কাছে এসে রাস্তার দিকে তাকায়।"
--তারপর হাসতে হাসতে আবার চলে আসে। " কি আর হবে আফজাল চৌধুরী মিছিল নিয়ে বেড়িয়েছে।"
--অনামিকা মুখটা অন্ধকার করে বলে, ওহ।"
___________
চা বাগান থেকে ঘুরেফিরে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে সবাই। সেখানে খাওয়া করে আবার বেরিয়ে পড়েছে বাঙলোর দিকে। পরির জেদের কারণে অনেক জাগায় ঘুরতে হয়েছে৷ তারপর বাসায় এসে লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে জোয়ান। রাত ৮ টা বাজে এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি। নীধিকে পাঠিয়েছে জোয়ান আর সিয়াম কে ডাকতে। রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। নীধি ভিতরে এ আগে আসেনি কখনো। শুধু বাইর থেকেই দেখেছে।
বাঙলোটা একটা বৃদ্ধ চাচা দেখা শোনা করে। তাকেই জিজ্ঞেস করে জোয়ান রুমের দিকে যাচ্ছে। দরজায় হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। তাই জোরে একটা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়।"
--চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় ভিতরে কেউ নেই। তারপর সে আসতে আসতে ভিতরে আসে। দেয়ালে একটা ফটো ফ্রেম। তারপর বিছানার দিকে নজর যায়৷ ফোনটা ভু ভু করছে। এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনের স্ক্রিনে ডেইজি ফুল নামটা জ্বলজ্বল করছে।"
--নীধি মনে মনে ভাবে, কারো নাম আবার ডেইজি ফুল হয়। ডেইজি নাম শুনেছে। ধরবো কি, না থাক বাবা ধরার দরকার নেই। ফোনটা বিছানায় রেখে দেয়। ফোনটা বারংবার বেজেই চলেছে। এদিকে জোয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কলটা রিচিভ করে নেয়। ও পাশ থেকে ভেসে আসে অভিমানের ছোঁয়া।"
--অশ্রুসিক্ত নয়নে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, তুমি কি খুব বিজি,আমার ফোনটা রিচিভ করার সময় নেই। এতোটা পর করে দিয়েছো। কবে আমায় মুক্ত করবে এই জঙ্গল থেকে। আমি যে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো৷
নিয়ে যাও না তোমাদের কাছে। আমি আর পাচ্ছি না এই বন্ধ কুটিরে থাকতে। তুমি একটুও ভালোবাসো না। আমার কষ্ট গুলো দেখতে পাচ্ছো না।"
--নীধি শুধু পুতুলের ন্যায় কথা গুলো শুনে যাচ্ছে। ডেইজির কথা শুনে নীধির বুক কেঁপে উঠলো। কে এই মেয়ে, কি তার সম্পর্ক ওনার সাথে। ফোনের ও পাশ থেকে শব্দ ভেসে আসছে,
--কি হলো কথা বলছো না কেনো?"
--নীধি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, আসলে আপনি যাকে ভাবছেন তিনি ওয়াশরুমে আছে।"
--মেয়ের কন্ঠ শুনে ডেইজির কান্না থেমে গেলো। বিস্মিত কন্ঠে বললো, কে তুমি? আর এই ফোন তো কোনো মেয়ের ধরার কথা নয়।"
--ওনি ওয়াশরুমে তো, ফোনটা বেজেই যাচ্ছিলো তাই ধরেছি।
" ওয়াশরুম থেকে জোয়ান বেরিয়ে আসে।"
জোয়ানকে দেখা মাত্রই নীধি বলে,
--এই যে ওনি বের হয়েছে আপনি কথা বলে নিন।
নীধি ফোনটা গিয়ে জোয়ানের হাতে দেয়। জোয়ান এসময় নীধি কে দেখবে ভাবতেও পারি নি।
--বসো।" নীধি আলতো করে মাথা ঝুকিয়ে নেয়।
--ডেইজি।"
--মেয়েটা কে ভাইয়া?"
--তোকে পরে বলবো। আগে শুনে নেই আমার বোনটা কেমন আছে?"
--ভাইয়া আমায় তুমি এখান থেকে নিয়ে চলো ভাইয়া। থাকবো না আমি এখানে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমি আর নিতে পাচ্ছি না।" ডেইজির এমন কথা শুনে জোয়ানের কষ্ট হচ্ছে। সে বুঝতে পাচ্ছে তার বোন ভালো নেই। তার বোন যে আসতে আসতে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কি বলে সান্ত্বনা দিবে।"
--বোন তুই চিন্তা করিস না। আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধর। তোকে আমি ঠিক মুক্ত করে নিয়ে আসবো।"
--জানো ভাইয়া আমায় না আজকে আগুন ভাইয়া মেরেছে। কথাটা বলেই হুহু করে কেঁদে উঠে।" ডেইজির এমন কথা শুনে জোয়ান চোয়াল শক্ত করে ফেলে। জোয়ান বজ্রকন্ঠে বলে, আগুন তোর গায়ে হাত তুলেছে। আগুনের সাহস হয় কি করে, আমি ওকে খুন করে ফেলবো। যেই দেখেছে জোয়ান চৌধুরী শহরের বাইরে সেই সাপের পাঁচ পা দেখেছে। হতের কাছে গ্লাসটা একনিমিষেই ফেলে দেয় মেঝেতে। গ্লাসটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ফ্লোরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নীধি ভয়ে কেঁপে উঠে।"
--তুই চিন্তা করিস না আমি শীগ্রই আসছি।আর যে হাত দিয়ে তোকে ছুয়েছে সেই হাত আমি ভেঙ্গে দিব।
কলটা কেটে দিয়ে সিয়াম কে ফোন করে।" তারাতাড়ি আমার রুমে আসো।"
--নীধি কিছুই বলতে পাচ্ছে না। বুঝতে পাচ্ছে এই মুহুর্তে জোয়ানের মাথা ঠিক নেই। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।"
--জোয়ান রুমের মধ্যে পায়চারী করছে। রাগে তার মস্তিষ্ক রি রি করছে। আগুন কে পেলে কুঁচি কুঁচি করে কেটে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দিবে। এখনো ডেইজির কান্না জোয়ানের কানে ভাসছে।"
--সিয়াম ঘুমের মধ্যে ছিলো। জোয়ানের এমন ঝাঁজালো কন্ঠ শুনে দৌড়ে আসে রুমে। কিন্তু বেচারা ফ্লোরে পা পিছলে পড়ে যায়। জোয়ান পাইচারি করার ধান্দায় আর সিয়াম কে খেয়াল করে নি।"
--পড়ে গিয়ে সিয়াম চিল্লিয়ে উঠে, ও বাবা গো।"
--নীধি সিয়ামের এমন কান্ড থেকে খিলখিল করে হাসতে থাকে।"
--সিয়ামের এমন কাজে জোয়ান বিরক্ত। আবার নীধির মধুর হাসি জোয়ানের কানে বাজছে।" জোয়ান যেনো দোটানায় পড়ে আছে। "
--সিয়াম দ্রত উঠে পড়ে, আর শুকনো ঢোক গিলে বলে, স্যার কি জন্য ডেকেছেন। " আজি ঢাকায় ফিরে যাবো।"
--কি স্যার আজকেই! আজি কেনো স্যার না মানে কাল তো মিটিং আছে। তাহলে আজকে কেনো যাব।"
--তোমাকে যা বলেছি করো, ওই আগুনকে জানে মেরে ফেলতে না পারলে শান্তি নেই। ওর সাহস কি করে হয় জোয়ান চৌধুরীর বোনের গায়ে হাত তোলার।
--আগুন আপনার বোনের হায়ে হাত তুলেছে। স্যার আপনি শুধু অর্ডার করুন আমি ওকে মেরে দিবো।"
--না সিয়াম এতো টাও সহজ হবে না। আফজাল চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে এতো দিন চুপ করে ছিলাম। তার মানে এই না যে এখনো চুপ করে থাকবো।"
--স্যার আপনি মাথাটা ঠান্ডা করুন। সামনে নির্বাচন আমার মনে হয়কি আফজাল বা আগুন এখন কোনো ভেজাল করতে চাইবে না। আর আপনার বোনকে মেরেছে হয়তো মুখের উপর কথা বলেছে তাই। আমার মনে হয় কি স্যার নেক্সট টাইম আগুন ওকে আর মারবে না।"
--কি ভাববো আমি, ডেইজির কান্না আমার বুকে এসে আঘাত করেছে। আমার প্রিয় জনের দিকে যে হাত বাড়াবে তার হাত আমি কেটে দিবো। আমার বোনের চোখের অশ্রু ঝড়িয়েছে। আমার বোনের চোখের অশ্রু আমার কাছে হাজার গুন কষ্টের সমান।"
--স্যার আপনি একটু শান্ত হন ৷ আমি বুঝতে পাচ্ছি আপনার মনের অবস্থা। আপনি বরং একটু পানি খান।
" নীধি বলে, আমি পানি এনে দিচ্ছি।"
--জোয়ান বেডে বসে মুখে হাত দিয়ে আছে। তার যে ভালো লাগছে না। ডেইজির কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। যখন ডেইজির খুব খারাপ লাগতো তখন জোয়ানকে ডাকতো। দু ভাই-বোন মিলে কত যে গল্প করতো৷ ডেইজিকে ঘুম পারিয়ে দিতো। হঠাৎ করে কি যে হয়ে যায় আফজাল চৌধুরী আর ডেইজিকে বের হতে দেয় না। ডেইজির কথা ভাবতে ভাবতে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।"
--সিয়াম নীধির কাছে এসে বলে, স্যার কে একটু সান্ত্বনা দিতে পারবেন। আমি না কাউকে সান্ত্বনা দিতে পারি না। স্যারের কষ্ট টা বুঝতে পাচ্ছি। স্যার খুব বেশি কষ্ট না পেলে এভাবে কাঁদে না। প্রচন্ড ভালো বাসে বোন-ভাই, মাকে। নিজের প্রিয়জনের কষ্ট কখনোই সহ্য করতে পারেনা।
-- আমি দেখছি আপনি চিন্তা করবেন না। এই বলে পানির গ্লাসটা নিয়ে জোয়ানের সামনে আসে। এই নিন পানি খেয়ে নিন। জোয়ান একবার নীধির দিকে তাকিয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
#চলবে
(যারা গল্প পড়েন তারা পেজটাকে ফলো করে রাখুন। ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code