Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ১৬ অন্তিম পর্ব, লেখক বর্ষা রায়


 ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে ডেইজি। ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। টপ টপ করে পানি পড়ছে গায়ে। চুলের পানি মুছে নিয়ে বেডে বসে পরে। ফাহিম খাবার নিয়ে রুমে আসে। ডেইজি ফাহিমকে বলে,

" খাবার নিয়ে আসলেন যে।"
"আমি আমার বউকে খাইয়ে দিব।"
ডেইজি ভুরু কুঁচকে দেখে। ফাহিম ডেইজির পাশে বসে, হাতে খাবার নিয়ে মুখের দিকে এগিয়ে দেয়। ডেইজি খেয়ে নেয়। ডেইজি ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে।" ফাহিম লক্ষ্য করেছে, তাই ডেইজিকে বলে, এভাবে কি দেখছো আমায় লজ্জা লাগে।"
ফাহিমের এমন কথা শুনে ডেইজি খিলখিল করে হেসে উঠে। হাসতে গিয়ে ভিসম খায় ডেইজি। ফাহিম তারাতাড়ি পানি এগিয়ে দেয়। ডেইজি পানি খেয়ে আবার হাসতে থাকে।"
" ফাহিম বলে, এভাবে হাসো না গো বউ নিজেকে পাগল পাগল লাগে।"
" ডেইজি এবার হাসি বন্ধ করে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনি একজন ছেলে মানুষ। আর ছেলে মানুষ হয়ে বউয়ের কাছে লজ্জা।" তা হলে হাসবো না তো কি করবো।আর আপনি তো পাগল।"
--হ্যাঁ আমি তো তোমার জন্যই পাগল।"
--ইশ হয়েছে, আপনাকে পাবনায় রেখে আসবো।"
--পাবনায় কেনো? আমি তো সেই পাগল না। আমি তোমার জন্যই পাগল। তাহলে তোমার হৃদয় মাঝে আবদ্ধ করে রেখো।
--ইশ রে আমার প্রেমিক পুরুষ আইছে।"
--তা ঠিক। ভালোবাসার মানুষের জন্যই তো প্রেমিক পুরুষ। "
--তাহলে ভালোবাসার মানুষটাকে খুব করে আগলে রাখবেন।"
--তা আর বলতে। জানো ডেইজি, আমি একদিন ছাঁদে চলে গিয়েছিলাম। মনটা ভালো লাগছিলো না। তখন রাস্তায় এক মেয়েকে দেখি। মেয়েটি রাস্তা দিয়ে খিল খিল করে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। তার এই স্নিগ্ধ হাসি আমার সব মন খারাপ দূর করে দিয়েছিলো। তার হাসিতে যেনো আমার মস্তিষ্কে প্রশান্তি এনে ছিলো।"তার গোলাপি ঠোঁটে হাসি যেন বুকের ভিতর এক সমুদ্র অনুভুতি এনে দিয়েছিলো।
তাকে দেখার জন্যই আমি ছাঁদে চলে আসতাম।"
--ডেইজি নিশ্চুপ হয়ে ফাহিমের কথা শুনছে। কে বলতে পারবে,এই মানুষটাও আমাকে আড়ালে থেকে ভালোবেসেছে। আর আমি বুঝতেও পারি নি। শুধু ভেবে ছিলাম, আমি বুঝি তাকে ভালোবাসি।"
--বলেন নি কেনো আমায়?
--বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বলতে পারি নি। ভিতর থেকে সাহস টা হয়ে উঠে নি।"
--তাহলে আমি যদি সে দিন আপনাকে না বলতাম তাহলে বোধায় আমাদের মিলন টাও আর হতো না।"
--সত্যি বলতে, সেদিন আমি ভাবতেও পারি নি তোমার সাথে দেখা হবে আর তুমি আমাকে তোমার ভালো লাগার কথা বলবে। সব কিছুই যেনো অপ্রত্যাশিত ভাবে হয়ে গেলো।"সেদিন সারা রাত ঘুম হয়নি। শুধু তোমার কথাই ভেবেছি।"
--এর মাঝেই ফাহিমের মায়ের কন্ঠ স্বর ভেসে আসে।" বাবা বউমার খাওয়া হলো।"
--হ্যাঁ আম্মু।"ফাহিম প্লেট নিয়ে চলে যায়।"
--ডেইজি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আজকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভিষণ ইচ্ছে করছে।
চারিদিকে অন্ধকার, ঝি ঝি পোকা ডাকছে। চাঁদের আলো চারিদিক চকচক করছে। শীতল বাতাশে চুল করে উড়ছে।" পিছন থেকে কেউ একজন চাদর জড়িয়ে দেয় গায়ে।
" ঠান্ডা কি তোমায় লাগে না, গায়ে কিছু না পড়েই চলে এলে।"
--খেয়াল ছিলো না।"
--তাই, কি ভাবছো এমন করে?
--কিছু না।"
--কিছু না বললেই কি হলো। কিছু তো ভাবছিলে।"
--ডেইজি ফাহিমের হাতটা শক্ত করে ধরে কাঁধে মাথা রাখে।" আপনাকে ভিষণ রকম ভালোবাসি।"
"আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।"
"চলো ঘুমিয়ে পড়ি।"
--আর একটু থাকি।"
--আর একটুও না, বউ যেহেতু কাছে আছে তাহলে বেকার বাইরে কেনো থাকবো।"
--আপনি না লজ্জা করেন, তাহলে এগুলো কথা বলতে লজ্জা লাগছে না এখন।"
-- না, তুমি আমার বউ আর তোমার কাছে কিসের লজ্জা ও তো আমি এমনি বলেছিলাম।
--আপনি আমায়...
কথাটা বলার আগেই ফাহিম ডেইজির ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে, হুঁশ আর একটা কথাও না।" ডেইজিকে কোলে তুলে নেয় ফাহিম।
--বেডে শুইয়ে দেয়।" ডেইজির সর্বশরীর যেনো কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।"
" ফাহিম লাইট বন্ধ করে দেয়। তা দেখে ডেইজি উঠে বসে।" ফাহিম বলে, কি হলো বসলে যে।"
--ভয় করছে আমার।"
--কোনো ভয় নেই একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে। চলো
ঘুমাবো।"
--ঘুম আসছে না আমার।"
--তাহলে কি সারা রাত জাগবে নাকি।"
--ডেইজি শুঁকনো একটা ঢোক গিলে বলে, না।"
--আমার দিকে তাকাও।" ডেইজি আসতে আসতে মুখ তুলে ফাহিমের দিকে তাকায়।"
ফাহিম কোনো কথা না বলেই ডেইজির ললাটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।" ডেইজি ফাহিমের শার্ট খামচে ধরে।" ফাহিমের ছোঁয়ায় যেনো ডেইজিও সারা দিয়ে উঠলো। দুজনে ডুবে গেলো ভালোবাসার শহরে।"
__________
ছোট্ট পরি ঘুমিয়ে পরেছে রাত অনেক হয়েছে। পরির পাশেই শুয়ে আছে রাইসা।" আগুন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। রাইসার পাশে বসে পড়ে।
রাইসা চোখ খুলে তাকায় আগুনের দিকে।" ঘুমাবেন না।"
" হুম যাবো।"
" রাইসা উঠে বসে।" কিছু ভাবছেন?
" পরিকে নিয়ে ভাবছি।" রাইসা আমি তেমাকে ভালোবাসি আর বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বাস তুমি পরিকে আগলে রাখবে। আমাদের ছোট্ট পরিকে মায়ের স্নেহ দিয়ে বড় করে তুলবে।"
--রাইসা আগুনের হাতে হাত রেখে বলে, আমি আপনার বিশ্বাস কখনোই ভাঙবো না। ওকে আমি নিজের মেয়েই ভাবি।" ওর প্রতি কখনোই আমি অন্যেয় করবো না।" শুধু আপনার ভালোবাসায় আমাকে আগলে রাখবেন।"
-- আগুন রাইসার মুখে হাত দিয়ে বলে অবশ্যই রাখবো।"আমার ভালোবাসা জুড়ে শুধু তুমি থাকবে।"
--রাইসা আগুন কে জড়িয়ে ধরে।"
--কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, এই চলো ঘুমাবো।"
--রাইসা মাথাটা উপর নিচ করে বুঝিয়ে দেয়, হ্যাঁ।"
--ডেইজি শুয়ে পড়ে। আগুন রাইসার উপর ঝুঁকে গিয়ে আলতো করে রাইসার ঠোঁটে চুমু দেয়।"
--আগুন লাইট নিভিয়ে পরির পাশে শুয়ে পড়ে।"
কেটে গেছে একটা মাস। আজকে চৌধুরী বাড়িতে আনন্দের মেলা বসেছে। ডেইজি আর ফাহিম এসেছে।
ডাইনিং রুমে বসে সবাই গল্প করছে। জোয়ানের পাশে নীধি বসে আছে। তাকে কোনো কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তার সামনে অনেক খাবার রাখা হয়েছে। নীধি শুধু অনামিকার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো খাবার সে কি করে খাবে। এমনিতেও খাবার রুচি নেই।"
" গতকাল নীধি বিকালে বেডে শুয়ে আছে। শরীর এক দম ভালো না। মাথা কেমন ব্যাথা করছে। খিদে নেই। গা গোলাচ্ছে তার।" জোয়ান অফিস থেকে এসে দেখে নীধি ঘুমিয়েছে। অসময়ে নীধি কে শুতে দেখে বেশ অবাক হয় সে। তাই না ডেকে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়।" শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে নীধি বেডে নেই। তাই সে ডাইনিং রুমে আসে। টেবিলে খাবার বেরে বসে আছে সে। জোয়ানের নীধির চোখ মুখ যেনো কেমন লাগছে।
খাবার হাতে নিয়ে এক লোকমা ভাত নীধির দিকে এগিয়ে দেয়। নীধি মুখে খাবার নিয়ে চিবাতে তাকে। হঠাৎ করেই মুখে হাত দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। নীধিকে এমন দেখে জোয়ান হাত ধুয়ে নীধির পিছন যায়। বমি করছে সে। ভিষণ মাথা ঘুরছে। জোয়ান গিয়ে নীধিকে ধরে থাকে।" তারপর রুমে নিয়ে আসে। বেডে বসিয়ে দেয়। " আপনি খাওয়া করে নিন আমি ঠিক আছি।"
তোমার এই অবস্থা আর আমি খাবো।" এখানে বসো, আমি মা কে ডেকে আনছি।"নীধি বসা থেকে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায় বেডে।"
জোয়ান দরজার কাছেই ছিলো, পিছন ঘুরে দেখে নীধি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। দৌড়ে নীধির কাছে আসে। এই নীধি কি হলো তোমার? চোখ খোলো।"
" জোয়ান চিৎকার করে বলে, মা রাশ কোথায় তোমারা তারাতাড়ি আসো।"
--রাইসা পরি রাশ অনামিকা চলে আসে রুমে।"
--নীধির এমন অবস্থা দেখে সবাই খুব ভয় পেয়ে য়ায়। জোয়ান ডাক্তার কে ফোন করে।"
--অনামিকা আর রাইসা নীধির হাত পা ঘসাঘসি করছে।"
--কিছুক্ষণ পর ডাক্তার চলে আসে।" ডাইনিং রুমে বসে আছে সবাই। ডাক্তার বের হলে জোয়ান বলে, আঙ্কেল নীধির কি হয়েছে?
--ভয়ের কিছুই নেই। সে প্রেগন্যান্ট তাই এই সময়ে এমন হবে স্বাভাবিক।"
--জোয়ানের যেনে বিশ্বাস হচ্ছে না। ডাক্তার কে এগিয়ে দিতে যায়। "
--অনামিকা সেই রকম খুশি। তার সুখের সংসার যেনো আবার ফিরে আসছে। এখানে যদি আফজাল থাকতো। চোখের কুর্ণিস বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।"আগুন ভিতরে আসতেই রাইসা বলে দেয়। আগুনো খুব খুশি। সবাই গিয়ে নীধি কে অভিনন্দন জানিয়ে আসে।" রাশ ডেইজি কে কল করে বলে, ডেইজি মন চাচ্ছে এখনে ছুটে যেতে কিন্তু ফাহিম ব্যস্ত যেতে পারবে না। তাই সে আগামীকাল আসবে।"
--আগুন রুমে চলে যায়।" রাইসাও পিছন পিছন চলে যায়।" আগুনকে মনমরা দেখে বলে, কি হয়েছে আপনার?"জেল খানায় গেছিলাম, মা একটু অসুস্থ হয়েছে।" আজকে মা আমার হাত ধরে কথা বলেছে।" আর এটাও বলেছে, আমার মা নাকি মারা যাওয়ার আগে আমাকে তার হাতে তুলে দিয়েছে।" মা আমাকে বললো, তোর মায়ের দেওয়া কথাটা রাখতে পেরেছি। আর আমি যে পাপ করেছি এই জেল খানায় থেকে সেই সাজা পাবো। আগুনের চোখ ছলছল করে উঠলো।তার ভিতরে যে এখনো হাহাকার করে।"রাইসা জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয় আগুন কে।"
নীধি বেডে শুয়ে আছে। জোয়ান রুমে ঢুকে নীধি পাশে বসে। নীধি পিট পিট করে চোখ খোলে। নীধির ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে। জোয়ান নীধির গালে হাত রেখে বলে,বাবা হবো আমি।" খুশিতে যেনো জোয়ানের চোখে পানি চলে এসেছে।" বাবা হওয়ার কত যে আনন্দ বোলে বোঝানো যাবে না।"নীধি জোয়ানের চোখের পানি মুছে দেয়।"জোয়ান নীধির হাতে দুটো জড়ো করে চুমু দেয়।" জোয়ান নীধির পেটে চুমু দেয়।
এই মায়াবী মেয়ে তুমি আমাকে অনেক সুখ দিয়েছো।
জোয়ান নীধি কে জড়িয়ে ধরে বলে, তোকে আমি খুব ভালোবাসিরে পাগলি। জানি মা হওয়াতে অনেক কষ্ট পেতে হবে। তুই যত গুলো কষ্ট পাবি তার চেয়ে আমি বেশি কষ্ট পাবো।" নীধি প্রত্যুত্তরে বলে, আপনাকে বাবা ডাক শোনানোর জন্য আমি কষ্ট সহ্য করতে পারবো।" শুধু আপনি পাশে থাকবেন।" প্রত্যেক জন্মে আমি তোমার হতে চাই আর তোমার পাশেই থাকতে চাই।"
( আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। ভালোবাসি_ওগো_মায়াবী গল্পটার জন্য অপেক্ষা করেছেন। আমার পাশে ছিলেন। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন। অনেক জায়গায় হয়তো মিস্টেক হয়েছিলো, সে ক্ষেত্রে আমি দুঃখিত। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেছেন। গল্পটা নিয়ে আপনাদের কাছে অনেক ভালো বাসা পেয়েছি। আবার নতুন কোনো গল্প আপনাদের মাঝে আবার আসবো। আর হ্যাঁ গল্পটা কেমন লেগেছে কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনাদের অনুভুতি জানতে চাই আমি। আর নিচে ফেসবুক আইডির লিংক দিলাম কেউ যদি কথা বলতে চান ইনবক্স করবেন। আপনাদের সবার জন্য অনেক ভালোবাসা)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code