Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

গল্পঃ ভালোবাসি ওগো মায়াবী , পর্ব : ১২, লেখক বর্ষা রায়


 আগুন রুমের বাইরে বেরিয়ে অনামিকাকে সোফায় বসে থাকতে দেখে। এখনো অনামিকা নিস্তব্ধ হয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আগুন অনামিকার কাছে এসে ফ্লোরে হাঁটু গেরে বসে। অনামিকা সামনে কারো উপস্থিত টের পেয়ে তাকায়। আগুন কে দেখে চোখের অশ্রু গুলো মুছে নড়েচড়ে বসে। তারপর আগুনকে জিগ্যেস করে,

--এভাবে নিচে কেনো বসে আছো বাবা উপরে বসো না।"
--এখানেই ঠিক আছি আমি। আপনাদেরকে কত অপমান করেছি, ভুল বুঝেছি। আমি জীবনে অনেক পাপ করেছি। তাই আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিচ্ছে।মা আমাকে বললো আমি নাকি তার ছেলে না । কিন্তু আমি এখনো বিশ্বাস করতে পাচ্ছি না। মা তো মা হয় তাই না। আমি ছোট বেলা থেকে তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করতে দেখেছি। আমি কি করে মেনে নিবো তিনি আমার মা নয়। মায়ের স্নেহ পেয়েছি তার কাছে। আমাকে বুঝতেও দেয় নি তিনি আমার মা নয়। শুধু মাত্র সম্পত্তির লোভে মা আর বউ হওয়ার নাটক টা করলো। বাবার মৃত্যুটা আমি নিতে পাচ্ছি না। " অনামিকার পায়ে হাত দিয়ে কান্না করে দেয় আগুন।
--অনামিকা আগুনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দুই হাত দিয়ে তুলে সোফায় বসিয়ে দেয়। তারপর আগুন কে জড়িয়ে ধরে বলে, কেঁদো না বাবা। আমি আগেই জানতাম এই মহিলা খুব ধুরন্ধর। কিন্তু তুমি যে ওর ছেলে না কে জানতো। আর ওনাকে যে মেরে ফেলবে কে জানতো।" তবে ওনার অপরাধের শাস্তি জেল খানায় পেয়ে যাবেন।"
--মানুষ মুখোশের আড়ালে কত কিছু লুকিয়ে থাকে অথচ বোঝার কোনো উপায় নেই।
--তুমি আমাকে মা বলে কাছে টেনে নিতে পারবে না।"
--আগুন একটু চুপ থেকে বলতে শুরু করলো, কেনো পারবো না। আপনার মতো মা পেলে কেউ না করতে পারে। আপনি যে আমাকে কাছে টেনে নিলেন এর চেয়ে আর কি হতে পারে। আমাকে ক্ষমা করে দিন, অনেক অন্যেয় করেছি।"
--হুম ক্ষমা তো করবো, তবে একটা শর্তে।"
--কি শর্ত?
--আমাকে তুমি করে বলতে হবে।"
--আগুন চোখের অশ্রু মুছে বলে, ঠিক আছে আমি তুমি করেই বলবো।"
--জোয়ান আর রাশ দরজায় দাঁড়িয়ে আগুন আর অনামিকার কথা গুলো শুনলো। দুজনে হেসে উঠে এগিয়ে যায়। ডেইজিও ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে এসেছে।দৌড়ে গিয়ে আগুনকে জড়িয়ে ধরে। জোয়ান এসে বলে, আমাদের কেও তোমাদের সাথে নাও।"
--অনামিকা বসার জায়গা করে দিলো। জোয়ান আগুন কে বললো, তুই আমাদের সাথে থাকতে পারিস। তিন ভাই মিলে এক সাথে থাকবো।"
--এই বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবো। বাবার কত স্মৃতি পড়ে আছে। মায়ের সাথেও কত স্মৃতি... কথাটা বলতে গিয়েও যেনে আটকে গেলো। উচ্চারণ করতেও ইচ্ছে করছে না। তোমরা বরং এখানে চলে এসেছো। এতে বড় বাড়িতে একা থাকা সম্ভব নয়।"
--ডেইজি আগুনের কথায় সারা দিয়ে বলে, হ্যাঁ ভাইয়া চলে এসো না।"আমিও এ বাড়িতেই থাকবো। সবাই মিলে থাকবো, ও মা চলে এসো না। তুমি বললে ওরাও চলে আসবে।"
--অনামিকা জোয়ানকে বলে, আসবি।"
--তোমার ইচ্ছে, তুমি যদি এ বাড়িতে পুনরায় আসতে চাও তাহলে আমরাও আসবো।"
--ঠিক আছে।"
--নীধি কিচেন থেকে বেরিয়ে বলে, আগুন ভাইয়া খাবার রেডি হয়ে গেছে সবাই একটু হলেও তো মুখে দিবেন। আর পরি তো আপনাকে ছাড়া খাবে না।"
--রাইসা পরিকে নিয়ে আসে, পরি আগুনকে নিয়ে টেবিলে চলে যায়। "তোমরাও সবাই চলে এসো এক সাথে খাবো।"
--আসতে আসতে সবাই খেতে বসে যায়। খাওয়ার পর সবাই রুমে চলে যায়। পরি আগুনের সাথে থাকবে তে থাকবে। তাই আগুনের সাথেই ঘুমাতে চলে গেলো। "
__________
কয়েকদিনেই সবার মধ্যে পরিবর্তন চলে এসেছে আগের মতো আর বিষন্নতা নেই। সবাই সবার মতো করে সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে। নেই শুধু একটা মানুষের মনে শান্তি। আগুন কয়েক দিনে আলেয়ার কাছে গিয়েছিলো, নিজের মায়ের পরিচয় জানতে কিন্তু আলেয়া মুখ ফুটে কিচ্ছু বলেনি। বরং বার বার উদাসী হয়ে ফিরে এসেছে। আর যাবে না বলে ঠিক করেছে।
--আগুন জোয়ানের কোম্পানিতে জয়েন করেছে। সেও নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে চায়। তার একটা পরিবার তৈরি হয়েছে তাকেও তো ভাবতে হবে।"
--নীধি আর অনামিকা সব কিছু নিজের মতো করে সাজিয়েছে। পরিকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। পরিকে পড়াতে বসিয়েছে রাশ। জোয়ান বলেছে পড়াতে। কিন্তু পরি পড়া না পড়ে রাশের পিঠে চরে খেলছে আর হাসছে। নীধি এসে পরিকে বলে, পরি তুই পড়া না পড়লে কাল কে ম্যাডাম কে কি পড়া দিবে৷"
--ম্যাডাম আমায় খুব ভালোবাসে। আমাকে প্রতিদিন চকলেট দেয়। আমার খেয়াল রাখে। আমাকে কিছুই বলবে না।"
--হয়েছে আমি তোমার ম্যাডামের বর্ননা চাই নি। তোমাকে পড়তে বলেছি।"
--আন্টি রাশ চাচু আমাকে হাসের বর্ননা বলেছে। একটা মুরগীর নাকি দুটো পা থাকে। একটা মাথা । আর দুটো করে ডিম দেয়। একটা রাশ চাচু খায় আর একটা আমি খাই।"
--পরির কথা শুনের রাশ আর নীধি হেসে দেয়। হয়েছে, পাকা বুড়ীটা যে খুব পন্ডিত সেটা বুঝে গেছি।
--আমার তো খুব খিদে পেয়েছে, বাবা কেনো এখনো আসে না। সে কি জানে না তার মেয়ে তার জন্য ওয়েট করছে।"
--এসে যাবে এখনি। তুমি আমার সাথে এসো।" পিছন থেকে রাশ বলে, ভাবি আমিও খাব আমারও খুব খিদে পেয়েছে।"
--চলে আসো।"
--রাশ বেড থেকে নেমে নীধির পিছন পিছন চলে যায়। টেবিলে বসে আছে দুজনে। নিজ থেকে গাড়ির হর্ণের শব্দ ভেসে আসছে। পরি নীধি কে বলে, আন্টি বাবা এসেছে। রাশ চাচু আমাকে নিয়ে চলো। রাশ পরি কে নিয়ে নিচে চলে যায়। আগুন কে দেখে পরি বাবা বলে কোলে উঠে। জোয়ান পরির গাল টেনে দেয়। পরি মা দিয়ে দেও আমায় একটা।" পরি টুপ করে জোয়ানের গালে চুমু দেয়।"
--জোয়ান সোজা রুমে চলে যায়। অনামিকা জোয়ানকে দেখে কিচেনে চলে যায়। নীধিকে বলে, তুমি রুমে যাও মা জোয়ান এসেছো এদিকটা আমি সামলে নিবো।"
--নীধি লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে, ঠিক আছে মা।"
--নীধি রুমে এসে দেখে জোয়ান শার্ট খুলছে। নীধি এসে পিছন থেকে শার্ট খুলতে সাহায্য করে। জোয়ান পিছন ঘুরে একনজর নীধি কে দেখে বলে, আমার বউয়ের গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে কেনো?"
--নীধি জোয়ানের কথা শুনে আয়নায় মুখটা দেখে নেয়। ভালো করেই দেখলো, গাল দুটো ঠিকি আছে। তারপর জোয়ানের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, কোতায় লাল হয়েছে আমার গাল তো ঠিক আছে।" মিথ্যা বললেন কেনো?
--জোয়ান নীধির গালে দুটো হাত দিয়ে বলে, দেখি আমি একটু। না ঠিকি তো আছে। তাহলে আমার এমন কেনো মনে হলো।"
--নীধি জোয়ানের দু'হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, সব আপনার বাহানা।"
--বাহানা কেনো হবে। বউয়ের সাথে রোমান্স করবো। জোয়ান টুপ করো নিজের ওষ্ঠদ্বয় নীধির ওষ্ঠদ্বয়ে ছুঁইয়ে দেয়।"
--সেই মুহুর্তে ডেইজি দরজায় ধাক্কা দেয়। দু'জনে ছিটকে দু'পাশে চলে যায়। ডেইজি দরজা কুলে ভিতরে এসে দেখে দু'জনে তার দিকে তাকিয়ে।
--কি হলো এভাবে দু'জনে তাকিয়ে আছো কেনো?
--জোয়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, আমদের কি প্রাইভেসি নেই রে।"
--ডেইজি খিলখিল করে হেসে উঠে।" ওহ আচ্ছা তোমরা রোমান্স করছিলে। ছরি ছরি ডিসটার্ব করে ফেলেছি। ডেইজি আবার হাসতে হাসতে চলে যায়।"
--নীধি রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জোয়ানের দিকে।"
--বুঝলাম না নীধি তুমি সাপের মতো ফুলছো কেনো?
--ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, আপনার না হয় লজ্জা নেই। আমার তো আছে। যাবো কি করে আমি ওদের সামনে। সবার সামনে খিল খিল করে হাসছে এখনো।"
--তেমার ননদ হয় তোমার সাথে মজা নিবে স্বাভাবিক।"
--আপনার মজা আপনার কাছে রাখুন। নীধি বিছানায় বসে পা নাচিয়ে বলে, মা রান্না ঘরে একটু হলেও শব্দ যাবে। কাকে বলবে এই মেয়ে। সব দোষ আপনার।"
--জোয়ান নীধির কান্ড দেখে মিঠি মিঠি হাসছে। তুমি থাকো আমি ফ্রেশ করে আসি দুজনে মিলে আবার রোমান্স করবো।"
--নীধি আবার ফুস করে উঠে বলে, আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না।" কথাটা বলে ডাইনিং রুমে যায়। ডেইজি আবার নীধিকে দেখে হাসছে। রাশ নীধির দিকে তাকিয়ে বলে, ভাবি এটা কিন্তু সেই লেভেলের লজ্জা দিচ্ছে আপনাকে।"
--অনামিকা কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলে ডিইজিকে বলে, এভাবে পাগলি গুলোর মতো করে হাসছিস কেনো?
--এমনি মা।"
--অনামিকা চলে গেলে, আগুন এসে পিছন থেকে ডেইজিকে গাট্টা মেরে বলে, এতো হাসির শব্দ তোর।"
--ভাইয়া।"
--হাসার কারণ কি?
--কি আবার ভাবি..
কথাটা বলার আগে রাশ ডেইজির মুখটা চেপে ধরে বলে, কিছু না ভাইয়া।"
#চলবে
(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code