Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ০৬

 

বারো তেরো বছরের একটা বাচ্চা ছেলে যখন তার বাবাকে বলছিল বাবা আমি বিয়ে করবো। ছেলেটার কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। আমার বাবা ঠিকই বলে আসলে এখনকার ছেলে মেয়েদের কোন লজ্জা শরম নেই। লজ্জা শরম থাকলে কি আর এতো ছোট একটা বাচ্চা ছেলে তার বাবাকে কখনো এসব কথা বলতে পারে ?
ছেলেটার কথা শুনে বাবা হাসতে হাসতে আমার পাশে এসে ফিসফিস করে বলল। কিরে দেখেছিস পিচ্চি ছেলেটা কি বলছে? তোরো কি বউ ছাড়া রাতে ঘুম হয় না? তাহলে বল একটা সুন্দর দেখে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে পরিয়ে দি বলে দাঁত কেলিয়ে হাসলো
- মেয়ে ভালো হলে আমি বিয়ে করতে রাজি আছি বলে আমি মুচকি হাসলাম।
- বাবা ভুরু কুঁচকে বললেন সত্যি বিয়ে করবি?
- বারে তোমরা দুজন বাবা ছেলে বউ নিয়ে রোমান্স করবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখব নাকি? তোমাদের রোমান্স করা দেখে আমার যদি রোমান্স করতে ইচ্ছে হয় তখন আমি কার সঙ্গে রোমান্স করব? আমারো তো বউ লাগবে তাই না?
- হারামজাদার সখ কত? এখনো তো বাবার হোটেলে খাস বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবি?
- রিজিকের মালিক আল্লাহ এসব নিয়ে টেনশন আমি করিনা।
- বাবা স্টেজে গিয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বল আসসালামু আলাইকুম আমি আপনাদের সবাইকে একটা কথা বলতে চাই। আমার ছোট ছেলে নীলকে তো আপনারা সবাই চেনেন?
আমি ভুরু কুঁচকে বাবার দিকে তাকালাম ।
বাবা হাসতে হাসতে বললেন আমার ছোট ছেলেটার বউ ছাড়া নাকি রাতে ঘুম হচ্ছে না। আপনাদের সন্ধানে কোনো ভালো মেয়ে থাকলে আমাকে জানাবেন। অতিদ্রুত ওর বিয়ে দিবো।
সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এখন আমার উপর। বাবা সবসময় কেন যে ফাজলামি করে। এতগুলো মানুষের সামনে আমার প্রেস্টিজ পাংচার করার কোন মানে হয়? সুন্দরী মেয়েগুলো অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুরব্বিরা এমন ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে যেন আমি চিড়িয়াখানার কোন আজব জন্তু। আমি লজ্জায় আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না দ্রুত আমার রুমে চলে এলাম।
একটুপর মিষ্টি শাড়ির আচল ঠিক করতে করতে আমার রুমে ঢুকলো।
আমি তখন কাপড় চেঞ্জ করছিলাম। মিষ্টি আমাকে দেখে চোখ বন্ধ করে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে বলল অসভ্য লোক কাপড় চেঞ্জ করার সময় দরজা লক করবেন না?
- কেন আমি কি মেয়ে নাকি যে দরজা লক করে জামা কাপড় চেঞ্জ করতে হবে? ছেলেরা যেখানে সেখানে জামাকাপর চেঞ্জ করতে পারে বুঝলে?
- মিষ্টি মুখ ভেংচি কেটে বলল সব ছেলেরা পারেনা আপনার মত লুচ্চা ছেলে যারা তারাই শুধু পারে।
আমি দ্রুত ওর কাছে এগিয়ে গেলাম।
মিষ্টি তখনও পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মিষ্টির দুই বাহু ধরে আমার দিকে ঘোরালাম।
মিষ্টি চোখ খুলে আমাকে ওর সামনে দেখে কিছু টা ভয় পেয়ে পিছনে সরে গেল কিন্তু দু'পা পিছাতে দরজার সঙ্গে পিঠ ঠেকে গেল।
আমি ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম কি যেন বলছিলে? আমি লুচ্চা? আচ্ছা মানলাম আমি লুচ্চা কিন্তু নিজে যে একশ একটা ছেলের সঙ্গে হাহা হিহি করছিলে সেটাই বেলায় কি?
- আআআআআআমি কখন ছেলেদের সঙ্গে হাহা হিহি করলাম?
আমি মিষ্টি কোমরটা বাম হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি কেঁপে উঠলো।
- এই এই ককককক করছেন টা কি?
তোতলাতে তোতলাতে বললো মিষ্টি
-আমি মুখটা ওর কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলল লুচ্চামি করছি।
কেন বুঝতে পারছ না? তুমি তো বলো সবসময় আমি নাকি লুচ্চামি করি তাই তোমাকে একটু লুচ্চামির ডেমো দেখাচ্ছি
- ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার লুচ্চামি ডেমো দেখতে চাই না
- আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম ও মা সে কি ?এখনো তো কিছু করিনি। আমি তো ডেমো না দেখিয়ে তোমাকে ছাড়বো না।
- ছাড়ুন বলছি,"আমি কিন্তু চিৎকার করব"?
- করণা চিৎকার, আমি কি বারণ করেছি? কাউকে ভয় পাইনা।
- আমি কিন্তু চিৎকার করে আঙ্কেল কে ডাকবো?
- ডাকো বাধা দিচ্ছে কে?
- মিষ্টি আংকেল বলে ডাক দিতে যাবে তার আগেই ওর মুখ বন্ধ করে দিলাম।
দুই মিনিট পর মিষ্টি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল আপনার মত অসভ্য লোক আমি আর একটাও দেখিনি। আমি অভিশাপ দিলাম আপনার চারটা বউ হবে আর সবগুলা ডাইনি হবে।
- নাউজুবিল্লাহ এতগুলা সতীন সহন করতে পারবে?
- অসভ্য লোক একটা বলে মিষ্টি আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি ব্যাগে কাপড় গুছিয়ে রাখছিলাম এরমধ্যে মা হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে ঢুকে বলল। নীল আমি এসব কি শুনছি তুই নাকি বিয়ে করতে চাস?
- ধুর কে বলল তোমাকে বাবা ঐসব মজা করে বলছে। আমি এখনি বিয়ে করছি না আমার বিয়ের দেরি আছে।
- তুই সব কাপড় চোপড় গোছগাছ করছিস কেন?
- ঢাকায় যাবো
- মা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ঢাকায় যাবি মানে?
- ভাইয়ার বিয়ে তো শেষ এখন আমি এখানে থেকে কী করব? তাছাড়া আমার ভিসা প্রসেসিং এর কিছু কাজ বাকি আছে সেগুলো শেষ করতে হবে।
- আমার কথা শুনে মা যেন আকাশ থেকে পড়ল ভিসা প্রসেসিং মানে?
- মা তোমাকে বলা হয়নি আমি MSc বাইরের দেশ থেকে কমপ্লিট করতে চাই।
- সঙ্গে সঙ্গে মার মুখটা মলিন হয়ে গেল। মা জড়ানো কণ্ঠে বলল কোন দেশে যেতে চাস?
- ইংল্যান্ড
- ওসব বিদেশ যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। আমি তোকে কোথাও যেতে দিচ্ছি না। এমনিতেই তোকে নিয়ে চিন্তা আমার শেষ নেই।
আমি মরে গেলেও তোকে বিদেশে যেতে দিচ্ছি না। আর ওখানকার মেয়েরা কি সব বাজে বাজে জামাকাপড় পড়ে।
- ওদের কালচার ঐ রকম মা ।
- মা রেগে মেগে বলল কালচার মাই ফুট। ছোট ছোট ড্রেস পড়ে ঘুরে বেড়ায় সেটা আবার কালচার?
মা ইংল্যান্ড তো শীতপ্রধান দেশ। ওরা সব সময় মোটা মোটা বড় বড় জামাকাপড়ের থাকে।
- তুই চুপ থাক তুই এমনিতেই আলাভোলা। মেয়ে মানুষ দেখলেই গলে যাস। ওখানে গিয়ে কোন মেয়ের খপ্পরে পরবি তা বলা যায় না।
দেখা যাবে শেষে একটা হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পরা ভিনদেশী মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে বলবি মা আমি বিয়ে করেছি। ওসব ভিনদেশী হাফপ্যান্ট পরা সাদা ধবধবে অস্ট্রেলিয়ান গাই কে আমি আমার ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিতে পারব না বাবা। তারচে তুই বরং বিদেশ যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে।
- সিরিয়াসলি মা অস্ট্রেলিয়ান গাই?
- ও সরি আমার মিসটেক হয়ে গেছে ওইটা ইংল্যান্ডি গাই হবে।
- মা দেখো আমার প্রায় সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমাকে তো আর ওখানে 5 -6 বছর থাকতে হচ্ছে না।২ বছর পর চলে আসব।
আমি এত কিছু বুঝিনা, আমি আমার কলিজা টা কে কোথাও যেতে দিবোনা বাস এটাই আমার শেষ কথা। এখন বেশি কথা না বলে দ্রুত তৈরি হয়েনে।
- কেন ?
- তোর ভাইয়ের সঙ্গে ওর শ্বশুর বাড়ি যে যেতে হবে সেটা কি ভুলে গেছিস?
- আমি ওখানে যেতে পারব না তুমি অন্য কাউকে পাঠাও আমার ঢাকায় যেতে হবে।
- বেশি কথা বলবি না যেটা বলেছি সেটা কর
- মা তুমি সব সময় জেদ করো এগুলা কিন্তু ভালো লাগেনা। তুমি তো নিজেই বললা ভাবির বোনদের থেকে দূরে দূরে থাকতে। ভাবীদের বাসায় তো ওরা থাকবে তাই না? ওখানে গিয়ে ওদের থেকে দূরে দূরে থাকব কিভাবে? তার চেয়ে আমি বরং ঢাকায় যায়।
- আমি বলেছিলাম ওদের থেকে দূরে দূরে থাকতে এখন আমি বলছি ওদের সাথে ঘেষাঘেষি ল্যাপ্টালেপ্টি যা ইচ্ছা তাই কর কিন্তু তোর বিদেশ যাওয়া ক্যানসেল।
- মা এটা কোন কথা হলো আমি তো ওখানে পড়াশোনা করার জন্য যাচ্ছি। ওখানকার মেয়েকে কি আমি বিয়ে করার জন্য যাচ্ছি?
- আমি জানি তুই কেমন ছেলে। সুন্দরী মেয়ে দেখে তোমার পড়াশোনা যে কোথায় উড়ে যাবে সেটা আমার খুব ভালো করে জানা আছে। মা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল আর আমি আমার কলিজা টা কে কোথাও যেতে দেব না। অনেক কষ্ট করে বড় করেছি তোকে আমার থেকে দূরে থাকবার জন্য নয়।
আমি দেখলাম মায়ের চোখ ছল ছল করছে। "মা কাঁদছে" আমি মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি।
মা দরজায় কাছে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল। বাবা ওদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করিস তবে ল্যাপ্টালেপ্টি করিস জেন। তাহলে কিন্তু এই মুখ আর কাউকে দেখাতে পারব না।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম যাও তো মা। বাবার মত তুমিও ফাজিল হয়ে গেছে।
মা হাসতে হাসতে আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
এইযে চৌধুরী সাহেব শুনছ? তোমার ছোট ছেলেটা ইংল্যান্ডের ধবধবে সাদা গাই কে বিয়ে করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাড়াতাড়ি ওর একটা বিয়ে দাও
বাবা অবাক চোখে মার দিকে তাকিয়ে বলল কি বলো এসব ইংল্যান্ডের গাই মানে?
আরে তোমার ছেলে ইংল্যান্ডে যেতে চাই। আর আমি শিওর ও যদি ওখানে যায় তাহলে ওখানকার একটা সাদা ধবধবে হাফ প্যান্ট পরা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে তোমার সামনে দাঁড় করিয়ে বলবে বাবা আমি বিয়ে করেছি। এই ইংল্যান্ডের গাই আমার বউ....
চলবে...
বিশেষ দ্রষ্টব্য ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। আপনাদের অনেক অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম এর জন্য দুঃখিত।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code