Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ১৭

 

মিষ্টি অভ্রনীল নাকি তোমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে? কথাটা আবির হাসতে হাসতে বলল
- মিষ্টি চোখমুখ কুঁচকে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল আমি কোমরের ব্যাথায় মরে যাচ্ছি আর আপনি দাঁত কেলিয়ে হাসছেন?
- আবির হাসি থামিয়ে বললো ওহ সরি সরি খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছো?
- হুম ভীষণ ব্যথা পেয়েছি যখন পড়ে গিয়েছিলাম তখন তো আমি মনে করেছিলাম আমি হয়তো মরেই যাবো। আরএকটু হলেই আমার মাথা ফেটে যেত। আপনার ফ্রেন্ড এক নম্বরের শয়তান। তখন আমি উনাকে পাইলে কি যে করতাম।
- হ্যাঁ অভ্রনীল একটু ফাজিল আসলে ও যদি দুষ্টুমি না করে তাহলে ওকে মানায় না। আচ্ছা ব্যথা কি খুব বেশী করতাছে?
- হ্যাঁ অনেক ব্যথা আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
- আচ্ছা মিষ্টি আমি কি তোমাকে টাচ করতে পারি?
- কেন টাচ করে কি দেখবেন আমি মানুষ না ভূত ? আমি মানুষই দেখতে পাচ্ছেন না কোমরের ব্যথায় কেমন কাতরাচ্ছি
- না আমি আসলে...
- আচ্ছা আমি যদি আপনাকে টাচ করতে বারণ করি তাহলে আপনি আমাকে টাচ করবেন না?
- অবশ্যই না আমি তোমার মতের বিরুদ্ধে যেয়ে তো তোমাকে টাচ করতে পারি না তাই না? যদিও আমাদের বিয়ে হয়েছে আমার অধিকার আছে তোমাকে টাচ করার তবুও তোমার হয়তো ভালো নাও লাগতে পারে। আর আমাদের তো হুট করে বিয়ে হলো। হয়তো এসব মানিয়ে নিতে তোমার সময় প্রয়োজন তাই বল।
- মিষ্টি হাসার চেষ্টা করল বলল সমস্যা নেই আপনি আমাকে টাচ করতে পারেন
- ওকে তাহলে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়
- মিষ্টি চোখ বড় বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, মানে?
- আবির মুচকি হেসে বলল আরে ভয় নেই তুমি যেরকম ভাবছো ঐরকম কিছু করবোনা। জলদি উপুড় হয়ে শুয়ে পড় । মিষ্টি পেটের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তেই। আবির মিষ্টির কোমরের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরানোর নিলে।
মিষ্টি শাড়ির আচল শক্ত করে ধরে বলল প্লিজ আমায় একটু সময় লাগবে। টাচ করতে বলেছি বলে আপনি শাড়ীর আঁচল ধরে টানাটানি করবেন আমি কখনো এটা ভাবি নি।
- আবির শুধু মুচকি হেসে বলল তোমাদের মেয়েদের এই একটা সমস্যা , সবসময় বেশি বোঝো। এরপর শাড়ীর আঁচলটা সরিয়ে আবির মিষ্টির কোমরে বাম দিয়ে মালিশ করে দিতে লাগলো।
- মিষ্টি একটু আগে নিজের বলা কথার জন্য বেশী লজ্জা বোধ করছে। ইস উনি আমার কোমর মালিশ করে দেওয়ার জন্য কোমর থেকে শাড়ির সরা ছিলেন আর আমি কি নাকি ভেবে ফেলেছি ছিঃ ছিঃ।
- কি এখন কেমন লাগতেছে আরাম পাচ্ছ?
- মিষ্টি লজ্জায় বালিশে মুখ চাপল
- কি হল কথা বলছো না যে? একটু জোরে চাপ দিতে মিষ্টি কঁকিয়ে উঠলো। ইস্ আস্তে ব্যথা পাচ্ছি তো
- সরি ! শরীরের এ কি অবস্থা বানিয়েছ? খাওয়া দাওয়া করো না নাকি? এই শোনো এখন থেকে ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করবে। এখনকার ছেলেরা তোমার মত পাটকাঠি মেয়েদের পছন্দ করেনা এখনকার ছেলেরা বউ হিসেবে একটু হেলদি মেয়েদের লাইক করে বেশি।
- মিষ্টি বলল আর আপনি কেমন মেয়ে লাইক করেন?
- আমি এতক্ষণ আমার কথাই বলছিলাম।
- আচ্ছা আপনি বাম কোথায় পেলেন?
- ঝর্না যাওয়ার সময় দিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটা খুব ভালো অভ্রনীল খুব লাকি ওর মত একটা বউ পেয়েছে।
-মিষ্টি মুখ বাঁকিয়ে বললো ভালো না ছাই । থাক হয়েছে আপনাকে আর মালিশ করতে হবে না।
কিন্তু আবির থামল না
15 মিনিট মালিশ করার পর আবির বলল আজকের মত এখানেই সমাপ্তি এবার ঠিক হয়ে শুয়ে পড়। সকালে উঠে দেখবে একদম ব্যাথা সেরে গেছে।
আবির বেড থেকে উঠতে গেলেই টুং করে তার ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। আবির মোবাইল হাতে নিয়ে মোবাইল ওপেন করতেই দেখল অভ্রনীলের মেসেজ।
দোস্ত কতদূর কী হইলো? নাকি তুই ভদ্র ছেলেদের মত বলে দিয়েছিস তোমার যত সময় লাগে তুমি নাও আমার কোনো তাড়া নেই?
দেখ যা করার আজ রাতে করে ফেল পরে কিন্তু আর সুযোগ পাবি না। পরে অনেক সময় পাওয়া যাবে ভেবে আজকের রাতটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিসনা। কাল থেকে কিন্তু তোর মেয়ে মিষ্টির পিছু একটুর জন্য ছাড়বে না। দেখা গেল তুই মিষ্টি সঙ্গে রোমান্স করতেছিস রাতে হঠাৎ মুনতাহা জেগে উঠে বলল বাবা তুমি কি করছ মার সঙ্গে। তখন কি বাজে অবস্থা হবে একবার ভাব? তাই যা করার আজই করে নে।
আবির মেসেজ পড়ে মুচকি হেসে একবার মিষ্টি দিকে তাকালো। মিষ্টি তাকে হাসতে দেখে বলল কি হয়েছে?
আবির হাসতে হাসতে বলল না কিছু না এরপর অভ্রনীলের মেসেজের রিপ্লাই দিল।
শালা তুই আমার বউয়ের কোমর ভেঙে দিয়েছিস। বেচারী ব্যথায় নড়তে পারছে না তার উপর এখন যদি আমি কিছু করি তাহলে ওকে আর নেওয়া যাবে না। আর আজ রাতে আমার বিছানায় জায়গা হবে কি হবে না সেটারই ঠিক নাই আর তুই আসছিস ফাজলামি করতে?
- কেন মিষ্টি তোকে খাটের জায়গা দেয়নি?
- না টাচ করতেই তো দিচ্ছে না
- হা হা হা ভালো তাহলে একটা কাঁথা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়। আমার বউ ফোন দিচ্ছে বাই
- বউ যদি ঘরে জায়গা নাই তাই তো রুমে যাবো একটু থাকতে দিস ভাই। সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই এলো আমার রুমে বিবাহিত পুরুষদের রাতে ঘুমানো এলাও না। বলা তো যায় না কখন কি করে বসবি
- মেসেজটা পড়ে আবির হেসে উঠলো।
- মিষ্টি বললাম ফোনের দিকে তাকিয়ে এতো হাসার কি আছে? আচ্ছা কে মেসেজ দিচ্ছে আপনাকে? দেখি ফোনটা দেন তো
- বিয়ে হতে না হতেই আমার উপর খবরদারি করতে শুরু করে দিলে?
- হ্যাঁ আমাকেও তো দেখতে হবে কে আপনাকে মধ্যরাতে এমনকি মেসেজ পাঠাচ্ছে যে আপনি ৩২ টা দাঁত বের করে হি হি করে হাসছেন ‌।
-নীল একটু ফাজলামি করছিল তো তাই
- দেখি ফোন টা আমাকে দেন দেখি ওই ফাজিল লোকটা কি মেসেজ দিয়েছে আপনাকে ‌
- না না এটা আমাদের দুজনের পার্সোনাল বিষয় এসব তোমাকে দেখতে হবে না তুমি বরঞ্চ ঘুমিয়ে পড়ো। আচ্ছা আমি কি বেডে ঘুমাবো। না আজ আমাকে ফ্লোরে বিছানা করে থাকতে হবে?
- এত সুন্দর বেড থাকতে, ফ্লোরে কেন ঘুমাবেন? তবে আপনার ইচ্ছা হলে আপনি থাকতে পারেন আমার কোন সমস্যা নেই।
দুদিন পর ঝর্ণ মধ্যরাতে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেছে। আমি ওর কান্নাকাটি আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা ‌। আমি থামানোর চেষ্টা করছি কিন্তু আমার কথা কানে নিচ্ছে না ।সে সমানে শুধু কেঁদে যাচ্ছে।
- এই কি হয়েছে এখান থেকে যাওয়ার সময় তো ঠিক ছিলে। এখন হঠাৎ করে আবার কি হলো?
- আপনি এখনি আমার বাসার সামনে আসেন
- এত রাতে?
- হ্যাঁ আর আসার সময় সাবধানে আসবেন।
- তা না হয় গেলাম কিন্তু এত রাতে কি জন্য? কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?
- না আপনি এখানে আসুন এরপর বলবো।
- কি আর করব বাধ্য হয়ে আমাকে যেতে হলো। ঝর্নাদের বাসার সামনে গিয়ে দেখলাম বউ আমার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
- ঝর্না কে ফোন দিয়ে বললাম কি হইছে? সে বলল উপরে উঠে আসুন। আমি বললাম কিভাবে উঠবো দরজাতো লাগানো।
- ঝর্না ধমক দিয়ে বলল আপনি কি মুভি দেখেন না? নায়করা যেভাবে পাইপ বেয়ে উঠে আসে ওই ভাবে উঠে আসুন।
- তোমাকে কি আমাকে চোর মনে হয় ? আমি কিভাবে পাইপ বে উঠব? তুমি দরজা খুলে বেরিয়ে আসো না।
- আমার জন্য আপনি এটুকু করতে পারবেন না?
- আমি যদি পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলি তখন কি হবে? তারচে তুমি ফোনে বল আমি শুনে বাসায় চলে যাই
- না না প্লিজ ওপর আসেন । আপনি উপরে না এলে আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাব।
- আর উপরে উঠতে গিয়ে পড়ে গেলে যে আমি কষ্ট পাব ?
- আমি কতক্ষণ ধরে আপনার জন্য মশার কামড় খেয়ে বেলকুনিতে অপেক্ষা করছি। আর আপনি সামান্য পাইবেয়ে দোতলায় উঠতে পারবেন না?
- কি আর করার শেষ পর্যন্ত পাইপ বেয়ে উঠতে হলো। কিন্তু মুভিতে পাইপ বেয়ে ওঠা যত সহজ দেখায় আসলে অতটাও সহজ না। আমি এটুকু উঠতেই ঘেমে শেষ হয়ে গেছি।
- ঝর্না আমাকে তার রুমের মধ্যে নিয়ে এলো। এরপর বেডের উপর রাখা তিন-চারটা শাড়ি দেখিয়ে বলল শাড়িগুলো কেমন? খুব ভালো তোমার মতই সুন্দর। আমি একটু পান দিলাম আরকি।
- ঝর্না খুশি হয়ে এক এক করে শাড়ি দেখিয়ে বললো এটা আমার হলুদের শাড়ি এটা আমি বৌভাতে পড়বো এটা আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে পড়বো এটা আমি বাসর ঘরে পড়বো। শাড়িগুলো কত সুন্দর তাই না?
- আমি চোখ ছোট ছোট করে ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি কি মধ্যরাতে এই শাড়ি দেখানোর জন্য আমাকে এখানে ডেকেছো?
- হুম কেন আপনার পছন্দ হয় নাই?
- লাইক সিরিয়াসলি? তুমি মধ্যরাতে আমাকে শাড়ি দেখানোর জন্য এত কান্নাকাটি করছিল? হায় আল্লাহ এ আমি কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম? তুমি তো কাল সকালে এগুলো আমাকে দেখাতে পারতে।
- আসলে এই শাড়িগুলো কাউকে না দেখানো পর্যন্ত আমার ঘুম আসছিল না তাই আপনাকে আসতে বললাম।
- ভালো করেছো শাড়িতো দেখা হয়েছে এখন আমি যাই নাকি আরো কিছু দেখানো বাকি আছে।
- এই আপনি কি রাগ করেছেন?
- না রাগ করবো কেন তুমি মধ্যরাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে কান্নাকাটি করে আমাকে বাসায় নিয়ে এসে পাইবেয়ে দোতলায় উঠেয়ে শাড়ি দেখাবে আর আমি কি রাগ করতে পারি?
আমি একটা সিগারেট ধরাতে ঝর্ণা বলল এই রুমে সিগারেট খাবেন না। জান বেলকুনিতে গিয়ে সিগারেট টানেন অসভ্য লোক একটা। কতবার করে সিগারেট খেতে বারণ করেছি কিন্তু উনার আমার কথা কানে যায় না। আমি বেলকুনিতে চলে এলাম।
- একটু পর ঝরনা এসে বলল এই সিগারেট ফেলেন। আমার ঠোট থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলে দিয়ে আমাকে বলল এখন চোখ বন্ধ করেন।
- আমি ওর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম কেন এখন কি কোন কোন রঙের চুড়ি কিনেছো সেগুলো দেখাবে?
- বেশি কথা বলেন কেন যেটা বলেছি সেটা করেন। আমি চোখ বন্ধ করতেই সে আমার হাত ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে এলোল। আমি টিপটিপ করে চোখ খোলার চেষ্টা করতেই সে বলল এই খবরদার চোখ খুলবে না। আমি চোখ বন্ধ করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম ঝর্না আসলে কি করতে চাই।
বারুদের গন্ধ নাকে এলো তার মানে ঝর্না ম্যাছ জ্বালিয়েছে। এরপর সুইচ বন্ধ হওয়ার শব্দ পেলাম। কিছুক্ষণ পর ঝর্ণা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো এবার চোখ খুলুন।
চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম রুম জুড়ে জ্বলে উঠেছে রংবেরঙের বাতি। রুমটা খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। অথচ আমি যখন রুমে ঢুকেছিলাম এগুলোর দিকে খেয়ালই করিনি। আমি যখন রুমে চারপাশ দেখতে ব্যস্ত ঝর্না আলতো করে আমার গালে চুমু দিয়ে বলল শুভ জন্মদিন মিস্টার অভ্র লাল চৌধুরী। আমি অবাক চোখে ঝর্ণার দিকে চাইলাম। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আজ আমার জন্মদিন। তাহলে এসব চলছিল আমার পাগলিটার মাথায়।
ঝর্না মুচকি মুচকি হাসছে। আমি কান ধরে সরি বলে ওর কপালে একটা চুমু খেলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ বউ। আর আমি আমার ব্যবহারের জন্য সত্যিই অনেক দুঃখিত।
-হইছে হইছে এখন আমাকে ছেড়ে জলদি জলদি কেক টা কেটে ফেলুন। আমি আমার সামনে রাখা টেবিলের দিকে চাইলাম। আমার পছন্দের চকলেট কেক সামনে রাখা।
ঝর্না আমার কানে কানে বললো সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম?
- অনেক অনেক অনেক সুন্দর।আজ আমি তোমার কাছে একটা গিফট চাইবো দিবে?
- কি গিফট?
-আমি ঝর্না কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম ক্যান আই কিস ইউ
- ঝর্না আমার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বলল না সিগারেট না ছারলে কোনরকম চুম্মা চুম্মি হবে না।
- এটা কোন কথা বললা?
হ্যাঁ এটাই কথা আগে সিগারেট ছাড়বেন তাহলে সবকিছু পাবেন।
ঝর্নার বাসা থেকে আসার সময় সে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হালকা ভেজা কণ্ঠে বলল এ কদিন আপনি একটু সাবধানে থাকবেন কেমন?
-কেন কি হইছে?
- আমি খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি?
- কী স্বপ্ন দেখেছো?
- সেটা বলা যাবে না সপ্নার কথা বললে সেটা সত্যি হয়ে যায়।
- হা হা এগুলো কুসংস্কার। কি স্বপ্ন দেখেছো আমি মারা যাচ্ছি?
-ঝর্না আমার মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
- আরে পাগলি আমার এখনই কিছু হচ্ছে না এই ফাজিল ছেলে এত তাড়াতাড়ি মরছে না বুঝলে তুমি টেনশন করো না তো
দাও গায়ে হলুদ
পায়ে আলতা
হাতে মেন্দি
বিয়ের সাজে কণে রে সাজাওরে জলদি
যার রুপ দেখে যায় ভুলে শাশুড়ি ননদি
দাও গায়ে হলুদ পায়ে আলতা হাতে মেহেদি
গানটা খুব জোরে জোরে বাজছে। সবাই অনেক মজা করছে আজ অভ্রনীল আর ঝর্নার গায়ে হলুদ। ঝর্নাকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। সবাই তার হাতে গালে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে। এরপর কত কিছু খাইয়ে দিচ্ছে ঝর্না মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে এত মিষ্টি খেলে সে তো আরো মোটকি হয়ে যাবে। নীল হয়তো তাকে কোলে নিয়ে বলবে বউ তুমি দিনদিন চালের বস্তা হয়ে যাচ্ছ। খাওয়া দাওয়া একটু কন্ট্রোল করে বুঝলে। তা না হলে পরে দেখা যাবে তোমাকে কোলে নিতে গিয়ে আমার কোমরটা ভেঙে গেছে।
রাতে ঝর্না হাতে মেহেদি দিচ্ছে হঠাৎ নীল কল এলো
ঝর্নার ফোনে নীল নামটা দেখে রুমের সবাই মেয়েরা হাসাহাসি শুরু করে দিল এরপর কল রিসিভ করে আমার সঙ্গে ফাজলামি শুরু করে দিল আমিও কি ফাজিল কম। কিন্তু কেন জানি আজ ফাজলামি করতে ইচ্ছে করছে না। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওরা ঝর্নার কানে ফোন ধরল।
- ঝর্না প্রথমেই বলল এই লাউডস্পিকারে দেওয়া আছে কিন্তু সাবধানে কথা বলবেন সবাই কান পেতে আছে।
- কি করছিলে?
- হাতে মেহেদি দিচ্ছে আপনি কি করছেন?
- আমি ছাদে বসে আছি। একটু ভিডিও কলে আসো না তোমাকে হলুদ সাজে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
- আশেপাশের সবাই বলে উঠল ওমা গো ট্রু লাভ ....
- প্রথমে ঝর্নার মেহেদি পরা দুটি হাত দেখতে পেলাম এরপর আস্তে আস্তে ঝর্নাকে। হলুদ শাড়িতে অপূর্ব সুন্দরী লাগছে ওকে। মুখে সেই চিরচেনা হাসিটা লেগেই আছে।
- মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।
- একটা মেয়ে ক্যামেরা তার দিকে ঘুরিয়ে বলল দুলাভাই শুধু নিজের বৌকে দেখলে চলবে? আমাদের দিকেও তো একটু নজর দিতে হবে তাইনা? এতগুলো শালী সামনে আপনি শুধু আপনার বউয়ের প্রশংসা করে যাচ্ছেন আমাদেরও একটু প্রশংসা করুন। আমরাও কিন্তু কম সুন্দর না
- আমাকে কাশতে দেখে ঝর্ণা বললো এই আপনি এখনো সিগারেট খাচ্ছেন? আপনার কে না কতবার বারণ করেছি?
- আপনি কি অসুস্থ? আপনাকে কেমন জানি দেখাচ্ছে?
- না তেমন কিছু না সকাল থেকে পেট একটু ব্যাথা করছে। কাল ভাজাপোড়া খেয়েছিলাম তো এজন্য হয়তো গ্যাস হয়েছে।
- ঝর্না উত্তেজিত হয়ে বলল পেট ব্যথা করছে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলেন?
- আরে তেমন কিছু হয় নাই তো একটা গ্যাসের ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা এখন রাখছি পরে কথা বলবো নি।
- পেটের ব্যথা টা আজ প্রচন্ড বেড়েছে ‌। ঠিক ভাবে বসে থাকতে পারছি না। বেশ অনেকদিন ধরেই ব্যাথাটা করছে যদিও এর আগে মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যেত কিন্তু আজ কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। রুমে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির কাছে আসতেই এমন ব্যথা উঠলো যে আমি ওখানে বসে পড়লাম। বসতে গিয়ে পা স্লীপ করে পড়ে গেলাম এরপর আর কিছু মনে নেই। অতিরিক্ত ব্যর্থ অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম বোধহয়।
আমাকে ধরাধরি করে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হল। আমি অনেক চেষ্টা করছিলাম চোখ মেলে তাকানোর জন্য। কিন্তু কিছুতেই চোখ মেলতে পারছিলাম না। শেষবার যখন চোখ মেলে তাকালাম। আবছা আবছা দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে ঝরনা কাঁদছে।
ডক্টর মুহম্মদ আঙ্কেল বাবা সামনে এসে দাড়িয়ে বলল সরি আমি ওকে বাঁচাতে পারলাম না।
- বাবা ফ্যালফ্যাল করে ডক্টর আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললেন মানে কি?
- হি ইজ নো মোর আরেকটু আগে নিয়ে আসলে আমি হয়তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দেখতাম
কি বলছিস কি তুই তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নীলের তো সামান্য পেট ব্যথা ছিল?
ঝর্না হসপিটালের মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে বসে বিলাপ করছে আল্লাহ আমার সব স্বপ্নের মতো এই স্বপ্নটাও তুমি কেন কবুল করলে। আমার থেকে কেন তুমি উনাকে কেড়ে নিলে।
মা কাঁদতে কাঁদতে পাগল হয়ে গেছে। আল্লাহ তুমি আমাকে উঠিয়ে নিতে আমার ছেলেটাকে কেন নিলে..
ঝর্নার লাফিয়ে পড়ল হসপিটালের ছাঁদ থেকে....
অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে অভ্রনীলের নাড়ী ফুটো হয়ে গিয়েছিল।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
ধূমপান মৃত্যু ঘটায়.....
ঝর্না ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো
চলবে...





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code