Ad Code

Ticker

6/recent/ticker-posts

মিসকল (ভাবির বোন যখন বউ), লেখাঃ Shamil Yasar , পর্বঃ ১০

 

দুই বছর পর আজ দেশে ফিরছি। না দুই বছর বললে ভুল হবে ২ বছর ৩ মাস ২৭ দিন পর। দেশের মাটিতে পা রাখতেই বুকের মধ্যে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল।
কিভাবে মায়ের মুখোমুখি দাঁড়াবো এটা ভেবে ভীষণ ভয় করছে আমার । মা দুই বছর পর আমাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে? নিশ্চয়ই আমাকে দেখে কান্না করে দিবে। আবার ঝাড়ুপেটা করে বাসা থেকে বের করেও দিতে পারে মা'র কথা বলা যায়না।
হঠাৎ চোখ বন্ধ করতেই ঝর্নার মায়াভরা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ঝর্না আমাকে দেখতে পেলে নিশ্চিত উরাধুরা মার শুরু করে দিবে। ও যা পাগলি মেয়ে। আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবে এটাতো 100% সিওর। শেষ যখন ওকে দেখেছিলাম সেদিনের মতোই হয়তো হাউমাউ করে কাঁদবে।
আমার ভাই ভাবিরা আমাকে দেখে হয়তোবা আর সবার মতো খুশি নাও হতে পারে। সে রাতের পর থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি। অবশ্য ভাই আমাকে বেশ কয়েকবার কল করেছিল কিন্তু আমি তার সঙ্গে কথা বলিনি। তার কন্ঠ শুনলেই আমার সেই রাতের কথা গুলো মনে পড়ে যায়।
আমার বড় ভাই তো আমার মুখ দেখতে চায় না তাহলে কথা বলে শুধু শুধু আবেগ বাড়িয়ে লাভ কি? সত্যি বলতে আমি সেদিন ভাইয়ের ওসব কথা শুনে কষ্ট পেলেও একদিন হয়তো ঐ কথাগুলো ভুলে যেতাম।
কিন্তু আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছিলাম সেই মুহূর্তে ভাবির বলা কথাটা আমার আজও কানে বাজে।
ভাবি সেদিন ভাইয়া কে বলেছিল আমাকে জন্ম দেওয়ায় নাকি আমার বাবা মার সবচেয়ে বড় ভুল। আমাকে নাকি বাবা-মা আদরে আদরে বাঁদর বানিয়ে ফেলেছে। বাবা-মা আমাকে নাকি সঠিকভাবে লালন পালন করতে পারেনি। আমার মত কুলাঙ্গার ছেলেদের নাকি জন্ম দেওয়ায় চেয়ে নিঃসন্তান থাকা অনেক ভালো। আর আমার বড় ভাই চুপচাপ ভাবির কথা গুলো শুনছিল কোনো প্রতিবাদ করেনি সেদিন। কষ্টটা আমার এই জায়গায়। আমি এই কথাগুলো চাইলেও ভুলতে পারিনা।
ভাইয়া কি একটিবারও ভাবিকে থামিয়ে দিতে পারত না? ভাবি না হয় আমাকে চেনে না। তবে ভাইয়া তো আমাকে চিনতো আমি কেমন ছেলে ভাইয়া তো সে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতো। আমি যাই করি না কেন কখনো কারো ইমোশন নিয়ে খেলা করি নি।
আমি তো সেদিন ঝর্নার সাথে কোনরকম অন্যায় করিনি বা মিষ্টির ভাষায় উল্টাপাল্টা কাজ করেনি। না আমি কোন ছেসরামি করেছিলাম। তাহলে তারা না জেনেই কেন আমার উপর এতসব অপবাদ চাপিয়ে দিয়েছিল? ভাবি আমার মা-বাবার আমাকে মানুষ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অথচ আমার ভাই চুপচাপ ভাবির কথা শুনছিল। ভাইয়া তো জানতো আমার মা-বাবা কত সুন্দর করে আমাকে মানুষ করেছিল তাহলে সে কেন প্রতিবাদ করল না? কষ্টটা আমার এই জায়গায়। আমি সারাজীবন চেষ্টা করলেও এই কথাগুলো ভুলতে পারবো না।
- আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না দেশে ফেরার। কিন্তু মা-বাবার জন্য ফিরতে হলো। বাবার শরীরটা নাকি কিছুদিন হলো ভালো না যখনই ফোন দিতাম সবসময় চুপ করে থাকতো। আর মা তো সব সময় শুধু কান্নাকাটি করত। ভিডিও কল দিলে বলতো না খেয়ে না খেয়ে তুই কতটা রোগা হয়ে গেছিস বাবা। তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয়। আর মা ফোন রাখার আগে প্রতি বারই একটা কথা বলতো। বাবা ইংল্যান্ডের গাইতে যেন বিয়ে করে আনিস না। তাহলে কিন্তু তোকে বাসা তে ঢুকতে দিব না।
আমি যে ইংল্যান্ডে যাচ্ছি এই কথাটা শুধু বাবা জানতো। মাকে জানায়নি কারণ মা কান্নাকাটি করত। আর মাকে কাঁদতে দেখলে আমি কিছুতেই ইংল্যান্ড যেতে পারতাম না। আর তখন আমার পক্ষে এ দেশে থাকা খুব কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছিল।
মা-বাবাকে তো আর বলতে পারিনি আমি কেন দেশ ছেড়ে চলে এসেছিলাম। সেদিন ভাইয়া ভাবির বলা কথাগুলো শুনলে মা-বাবা হয়তো খুব কষ্ট পেত। হয়তো তাদের সাথে সম্পর্কটা খারাপ হয়ে যেত। আর আমি কখনোই চাইনা আমার জন্য অন্য কারো সম্পর্ক খারাপ হোক।
ইংল্যান্ড যাওয়ার এক মাস পর যখন মা'র সঙ্গে কথা হলো মা সে কি কান্না।
মা সেদিন বলেছিল তোর পড়াশোনা কে আমি গুলি মারি। তুই তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরে আয় বাবা। আমার কোল টা ভীষণ খালি খালি লাগছে। তুই তাড়াতাড়ি ফিরে আয় ওরে বাবা। আমি তোকে ছাড়া এতো দিন থাকবো কিভাবে বাবা?
- মার কথা শুনে আমি মনে মনে বলেছিলাম মা আমি আর কখনোই তোমাদের কাছে ফিরবো না। আমি কিভাবে তোমাদের ওখানে যাই বলো তোমার বড় ছেলে তো আমার মুখ দেখতে চায় না আর বাসায় গেলে তো আমার মুখটা তাকে দেখাতে হবে। তাই আমি আর কখনই দেশে ফিরব না মা। তখন কে জানতো পাগলি মেয়েটা তার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে পাগল করে ফেলবে। আমি ঠিক করেছি পাগলীটা কে বিয়ে করে ওকে নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যাব। ওখানে আমি আর আমার একটা ফ্রেন্ড মিলে ছোটখাটো একটা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। বেশ ভালো ইনকাম হয় আমাদের রেস্টুরেন্ট। ওখানেই শুরু করবো আমাদের ছোট্ট সংসার
- আপনারা হয়তো ভাবতেছেন সেই পাগলিটাকে? সেই পাগলী মেয়েটার নাম ঝর্ণা। হ্যাঁ আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি। আমি তাকে ভালোবাসি এটা বুঝতে আমার কিছুটা সময় লেগেছিল
- ইংল্যান্ড যাবার দুই মাস পর হঠাৎ একদিন পার্কে দেখলাম একটা বেঞ্চে যুবতী মেয়ের কোলে এক যুবক মাথা রেখে শুয়ে আছে। মেয়েটা ছেলেটার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ঠিক যেভাবে ঝর্না আমার চুলে বিলি কেটে দিয়েছিল। সেদিনের পর থেকেই শুরু হলো মহাবিপদ। চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠতো পিচ্চি মেয়েটার ছবি। কিছুদিনের মধ্যে আমার জীবনটা ঝর্না ময় হয়ে উঠলো। ঘুমাতে গেলে ঝর্না পড়তে বসলে ঝর্না যেটাই করি শুধু ঝর্নার কথা মনে পড়ে। সেদিনের পর থেকে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম ওকে নিয়ে। ওর চিন্তাটা আমি আমার মাথা থেকে কিছুতেই সরাতে পারছিলাম না। ফোনের গ্যালারি খুঁজে ওর ছবিটা ওয়ালপেপার বানিয়ে ফেললাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম কারণে-অকারণে ও ছবিটা দেখতে ভালো লাগে। রাতে ঘুমানোর আগে ওর ছবিটা বের করে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ঘুমাতে ভালো লাগে। দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। এক সময় মনে হল ওই পাগলীটাকে ছাড়া আমার চলছে না। যে করেই হোক ওকে আমার চাই।
বাবাকে ফোন দিয়ে সব বললাম। বাবা ওর ফোন নাম্বার আমাকে ম্যানেজ করে দিল। আমি ফোন দিলাম কিন্তু ফাজিল মেয়েটা ফোন ধরে না। আমি ভাবলাম বাবা হয়তো ভুল নাম্বার দিয়েছে লজ্জায় পরে আর বাবাকে সে কথা বলতেও পারলাম না।
ফেসবুকে ঝর্না লিখে সার্চ দিলাম। হাজার হাজার ঝরনার আইডি চলে এলো।আমি ঝর্ণার পুরো নাম টা জানতাম না। যার ফলে ঝরনা নামের প্রায় সবগুলো আইডির প্রোফাইল আমি চেক করেছি। কিন্তু ঝর্নাকে কোথাও খুঁজে পাইনি।
যখন আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি একদিন হঠাৎ করে ফেসবুক একটা আইডির নাম দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। অভ্র লাল চৌধুরী। ঝরনা আমাকে এই নাম দিয়েছিল। আমি প্রোফাইলটা চেক করতে দেখলাম কভার ফটোতে আমার একটা ছবি দাও। আমি তাকিয়ে নদীর জল দেখছিলাম সেই ফাঁকে ঝরনা এই ছবিটা তুলেছিলাম।
আমি সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ দিলাম। এই আপনি কে? আমার ছবি পেলেন কোথায় আর আমার ছবি কভার ফটোতে দিয়েছেন কেন?
আমি মেসেজের রিপ্লাই এর অপেক্ষায় বসে থাকতে-থাকতে খেন্ত হয়ে গেলাম। একদিন দুদিন পেরিয়ে গেল কিন্তু কোন রিপ্লাই এলো না তিন দিনের মাথায় রিপ্লাই এলো।
আপনার একটা ছবি দেন তো দেখি
আমি সঙ্গে সঙ্গে একটা ছবি পাঠিয়ে দিলাম।
একটু পর রিপ্লাই এলো আপনি একটা কুত্তা। আপনি লোকটা খুবই খারাপ। আপনি আমাকে না বলে কিভাবে ইংল্যান্ডে চলে গেলেন?
- আচ্ছা তুমি কি ঝর্ণা?
- রিপ্লাই এলো না আমি ঝর্ণার মা। বাজে লোক আপনি মেসেজ দিবেন না আমাকে।
- আমি আর দেরী করলাম না বলে ফেললাম ঝর্না আমি ভালোবাসি তোমাকে। এটা কোন ক্ষণিকের ভালো লাগা নয়। তুমি হয়তো জানো না তুমি আমাকে ঠিকমতো ঘুমাতে দাও না। বারবার আমার স্বপ্নের মধ্যে এসে জ্বালাতন করো। আমি চোখ বন্ধ করলে তোমাকে দেখতে পাই। তোমাকে ছাড়া থাকা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বলবো না তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না কিন্তু তুমি বিহীন আমার জীবনটা আসবার পত্র বিহীন ঘরের মতো। প্রাণ বিহীন দেহের মত।
- ঝরনা অনেকক্ষণ ধরে কি জানি টাইপ করল। কিন্তু যখন রিপ্লাই এলো দেখলাম ও লিখেছে তাই ? এটা দেখে একটু কষ্ট পেলাম।
একটু পর একটা অডিও ক্লিপ পাঠালো। আমি ওপেন করতেই শুনতে পেলাম ঝরনার মিষ্টি কন্ঠে গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত
ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে,
ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে..
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো তোমার চরণমঞ্জীরে,
ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে..
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি তোমার প্রাসাদপ্রাঙ্গণে,
মনে করে সখী বাঁধিয়া রাখিয়ো আমার হাতের রাখী তোমার কনককঙ্কণে..
ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে,
আমার লতার একটি মুকুল ভুলিয়া তুলিয়া রেখো তোমার অলক বন্ধনে..
আমার স্মরণ শুভ সিন্দুরে একটি বিন্দু এঁকো তোমার ললাটচন্দনে,
আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো তোমার অঙ্গসৌরভে..
আমার আকুল জীবনমরণ
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো তোমার অতুল গৌরবে,
ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে..
"ভালোবাসি"
- তোমার নামটা শুধু আমার মনের মন্দিরে নাই আমার সবখানেই তোমার নামটি লেখা আছে।
আমার সবটুকু জুড়ে শুধুই তুমি।
- ইস ওই শাকচুন্নি মিষ্টির উপর নজর না দিয়ে দিতে প্রথমে একটু আমার দিকে তাকাতেন তাহলে হয়তো আজ আপনি আমার পাশে থাকতে। না আপনাকে আপনার ভাই ভাবির কথা শুনতে হত। জানেন আমি আপনার জন্য কত কান্না করেছি। আপনি যখন আমার সামনে ওই শাকচুন্নি টার কথা বলতেন আমার যে কি যে কষ্ট লাগতো।
- আচ্ছা বাদ দাও না এখন ওসব কথা ।জানো কত কষ্ট করে তোমাকে খুঁজে পেলাম?
- ওই শোনেন এখন ওসব কথা বাদ জলদি আমার কাছে 1000 টাকা পাঠান।
- কেন 1000 টাকা দিয়ে কি করবা?
- আমি মানত করেছিলাম যদি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি তাহলে ফকিরকে 1000 টাকা দিব। যোগাযোগ যেহেতু হয়ে গেল সেহেতু এখন 1000 টাকা দিন। আমার জমানো টাকা থেকে খরচ করতে আমার ভীষণ কষ্ট হবে। আপনি দূরে গেছেন এখন টাকাটাও আপনি দিবেন।
- হা হা হা তুমি তো দেখি জম কিপটা? আচ্ছা টাকা নয় পাঠাচ্ছি তার আগে একবার ভিডিও কলে কথা বলতে পারি?
- না কোন প্রকার ভিডিও কলে কথা হবে এটা আপনার শাস্তি।
-কিন্তু আমার যে তোমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে ?
- এতই যদি দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে দেশে এসে দেখে যান।
সেদিন থেকে শুরু হলো আমাদের জীবনের ভালোবাসা নামের এক নতুন অধ্যায়।
- সবকিছু ভালই চলছিলো গত তিন মাস হল ঝর্না ফোন দিয়েই শুধু কান্নাকাটি করে। তার বাবা নাকি তার বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে। আমি বুঝি না এতো ছোট মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার কি আছে। ঝর্না কে ফোন দিলে ও শুধু কান্নাকাটি করত আর বলতো আপনি ওখানে বসে থাকেন আপনার আসতে হবে না। বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দিক আপনি ওখানে বসে বসে মুলার চিবুন।
পাগলিটা কিছুদিন হলো শুরু করেছে নতুন পাগলামি। আমার যদি অন্য কোন ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। আমি কিন্তু সেই রাতে আত্মহত্যা করব। আপনি যদি আমার ভালো চান তাহলে দেশে আসুন। আর আপনি যদি চান আমি আত্মহত্যা করে জাহান্নামে যায়। তাহলে ওখানে বসে বসে মুলার জুস খান। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবে আমি আল্লাহর কাছে আপনার নামে বিচার দিব। বলবো যে আমি আপনার জন্যই আত্মহত্যা করেছি আপনাকেও যেন আমার সঙ্গে জাহান্নামে দেয়। এইসব বলতো আর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদত
- আমি যখন রেগে বলি একদম বাজে কথা বলবানা। আমাকে ছাড়া থাকতে যদি তোমার এত কষ্ট হয় তাহলে চলে আসো না আমার এখানে।
- আমি কেন যাব আপনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান।
কি আর করার শেষমেষ বাধ্য হয়েই দেশে আসতে হল। কিন্তু আমি যে দেশে আসছি এ কথা কাউকে জানিয়ে আসি। সবাইকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে।।
এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার বাবার বাসার সামনে। দুই বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। অনেক নতুন নতুন বাড়ি হয়েছে রাস্তাঘাট আবার নতুন করে তৈরি হয়েছে।
আমি আস্তে করে কলিংবেলে চাপ দিলাম হাত আমার হাত ধরে কাঁপছিল। কলিং বেল দিতেই মা দরজা খুলে দিলো। মা যে দু বছর পর আমাকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে সেটা মার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
মা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল এ আমি কাকে দেখছি আমি কি সত্যি দেখছি নাকি স্বপ্ন দেখছি? মা চিৎকার করে বলল শুভ্রর বাবা দেখো কে এসেছে তোমার বাঁদর ছেলেটা বাড়ি ফিরেছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম মা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
- কি ইংল্যান্ডের গাইকে বিয়ে করে নিয়ে আসছিস...?
-না মা অস্ট্রেলিয়ান গরু ...
- হারামজাদা তুই এখনি বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে বলেই মা আমাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মা সমানে আমার কপাল মুখে চুমু খেতে লাগলো।
আমাদের থেকে দূরে থাকতে তোর একটুও কষ্ট হলো না? না খেয়ে না খেয়ে তো একদম রোগা হয়ে গেছিস। বাড়ি এসেছিস এখন আর কোন চিন্তা নেই আমি তোকে খাওয়ায় খাওয়ায় মোটা বানিয় ফেলবো।
বাবা আমাকে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। দেখলাম বাবার চোখের পানি। কিন্তু বাবাকে দেখে মনে হল না বাবা অসুস্থ বেশ সুস্থ সবল আছে নিশ্চয়ই আমাকে দেশে ফিরে নিয়ে আসার জন্য মিথ্যা কথা বলেছে।
মা ভাইয়া ভাবিকে দেখছিনা?
- আজ ঝর্নাদের বাসায় দাওয়াত ওখানে গেছে। আমরা বের হচ্ছিলাম এর মাঝে তুই এলি। তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে। চৌধুরী সাহেব আপনি ওদের বাসা থেকে ঘুরে আসুন আমি আমার ছেলেকে রেখে কোথাও যাচ্ছি না।
- ঝর্ণারা কি এখন বগুড়ায় থাকে মা?
- বাবা আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললো এমন ভাব করছিস যেন তুই কিছুই জানিস না।
- মা বাবার কথা কিছুই বুঝতে পারলেন না। অবাক চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল হ্যাঁ ওর বাবার পোস্টিং এখন বগুড়ায়।
- তাহলে চলো মা আমিও তোমাদের সঙ্গে যাবো।
- তুই যাবি? আচ্ছা চল অনেক দিন পর দেশে এলি সবার সঙ্গে দেখা হবে ভালো লাগবে তোর।
- ঝানাকে দেখার জন্য আমার মনটা ছটফট করছে। কতদিন হল মেয়েটাকে দেখি না এখন বেশ বড় হয়ে গেছে হয়তো?
- মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল কি এত ভাবছিস? যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আর শুন যদি খারাপ লাগে তাহলে রেস্ট কর।
- বাবা বলল বেস্ট করলে চলবে নাকি তোমার ছেলের মনে এখন শুধু ঝর্না ঝর্না করছে
- মা ভুরু কুঁচকে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো "মানে"!
- আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম মানে কিছু না মা, বাবা ফাজলামি করছি।
- তোদের বাবা ছেলের মধ্যে তো অবশ্যই কিছু একটা চলছে যেটা তোরা আমাকে বলতে চাচ্ছিস না।
- আমি ঝর্নাদের বাসার সামনে দাড়িয়ে ওকে ম্যাসেঞ্জারে কল দিলাম।
ঝরনা কল রিসিভ করে বলল আপনি দেশে কবে আসবেন?
- আমি একটা দীর্ঘসাস ছেরে বললো এখন অনেক কাজের চাপে আছি তুমি আমার কাছে চলে আসো না।
- থাক তোকে আর আসতে হবে না আমার বিয়ে হয়ে যাক তুই ওখানে বসে বসে মুলার জুস খা
- জান্নাতের বাসার দরজা খুলতেই মিষ্টির মুখোমুখি হলাম। মেয়েটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখে নিচ দিয়ে কালি পড়েছে..
চলবে..



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code